এ পি জে আব্দুল কালাম – সিনেমার মত যার জীবনী
পুরো নাম আবুল পাকির জয়নুল-আবেদীন আব্দুল কালাম ( A P J Abdul Kalam ) । তাঁর জীবন এর গল্প পৃথিবীর বুকে এমন একটি দৃষ্টান্ত হয়ে আছে যা যে কাউকেই অনুপ্রাণিত করবে। কিভাবে একজন সাধারণ মাঝির ছেলে ভারতের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী তারপর একজন সফল রাষ্ট্রপতি হলেন সে গল্প আশা জাগাবে সকলের মনে । আপনাকে মনে এ বিশ্বাস জন্মাতে সাহায্য করবে যে, সৎ মনে নিঃস্বার্থ ভাবে আপনি যদি কাজ করে যান তার ফল আপনি পাবেন। এ পি জে আব্দুল কালামের এই জীবনী টি অন্যদের মতো গতানুগতিক বায়োগ্রাফি এর মত না করে গল্প আকারেই লেখার চেষ্টা করলাম। সবাইকে স্বাগতম এ পি জে আবদুল কালামের জীবনীর এই সফরে।
APJ Abdul Kalam |
এ পি জে আব্দুল কালামের জীবনী ও অজানা কিছু তথ্য-
তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের সাধারণ এক পরিবারে ১৯৩১ সালের ১৫ই অক্টোবর জন্ম হয় এ পি জে আব্দুল কালামের। তখন রামেশ্বরম বৃটিশ ভারতের মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ছিল। তাঁর বাবার নাম জয়নুল আবেদীন এবং মায়ের নাম আশিয়াম্মা। তাঁর জীবনে তাঁর বড় বোন জোহরা এবং ভগ্নিপতি আহামাদ জালালুদ্দীনেরও অনেক প্রভাব ছিল। আব্দুল কালামের খুব ছোট বয়স থেকেই আকাশে উড়ার শখ ছিল । সাগর পাড়ে বড় হওয়া কিশোর কালাম যখন আকাশে পাখি দের ঊড়তে দেখতেন তাঁর মনে তাদের মতো খোলা আকাশে উড়ে বেড়ানোর ইচ্ছা জাগতো ( সোর্সঃ “wings of fire” by APJ Abdul Kalam) । এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে রামেশ্বরম থেকে আকাশে উড়তে পারা প্রথম মানুষটি হল যুবক বয়েসের সেই আব্দুল কালাম। তিনি তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু করেন রামনাথপুরামের সোয়ার্জ ম্যট্রিকুলেশন বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে সাধারন শিক্ষা সমাপ্ত করে মাদ্রাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিরুচিরাপল্লীর সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে পদার্থ বিদ্যায় ডিগ্রী অর্জন করেন।
তিনি তাঁর পদার্থ বিদ্যার স্নাতক শেষ করেই অনুধাবন করতে পারেন যে, আসলে পদার্থবিদ্যা তাঁর জন্য উপযুক্ত সাব্জেক্ট ছিলনা। তিনি ছোটবেলা থেকে আকাশে উড়ার যে স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠেছেন সে স্বপ্নের পথ এই সাবজেক্টের শেষপ্রান্তে পাওয়া যাবেনা। তাই তিনি ১৯৫৫ সালে মাদ্রাস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি ( MIT) তে ভর্তি হতে মনস্থির করেন। কিন্তু তখন এম আই টির ভর্তির ফি দেয়ার মতো যোগ্যতা তাঁর ছিলনা। তখন তাঁর বড় বোন জোহরা তাঁর সোনার গহনা বিক্রি করে আব্দুল কালামকে ভর্তির টাকা দেন।
এম আইটি তে পড়ার সময় আব্দুল কালাম প্রায়ই অবসর সময়ে সেখানে রাখা একটি পরিত্যাক্ত বিমানের পাশে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতেন এবং নিজের আকাশে ঊড়ার স্বপ্নকে আরো মজবুত করতেন। কালাম ছোটবেলা থেকেই খুব একটা মেধাবী ছিলেন না, কিন্তু কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন । MIT তে একবার তাঁর একটি প্রজেক্টে অখুশি ডীন তাকে প্রজেক্ট টি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে না পারলে স্কলারশিপ বন্ধের ভয় দেখালে তিনি সে প্রজেক্ট তিন দিনের মধ্যে শেষ করেন।
APJ Abdul Kalam |
এম আই টিতে শিক্ষাজীবন শেষ করার পর জীবন তাঁর সামনে দুইটি রাস্তা খুলে দেয়। এবং দুইটি রাস্তাই তাকে তাঁর স্বপ্ন পুরন করতে সক্ষম ছিল। একটি ভারতীয় বিমান বাহিনীর চাকুরী অন্যটি ছিল ভাতীয় মিনিষ্ট্রি অফ ডিফেন্সে ডাইরেক্টর অব টেকনিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এন্ড প্রোডাকশনের। এবং তিনি একই সাথে দুটিতে আবেদন করে বসলেন। এবং এমন সময় দুই জায়গা থেকেই তাকে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকা হলো। এবং ইন্টারভিউ এর স্থান দুটি ভারতের দুই প্রান্তে ছিল ২০০০ কি.মি দূরে। জীবনে প্রথমবার আব্দুল কালাম বিমানে সফর করলেন। এবং অবাক হয়ে আকাশ থেকে নিজের জন্মভূমি দেখলেন।
দুইটি ইন্টারভিউ দিয়ে তিনি ফিরে আসলেন। এয়ার ফোর্সে ২৫ জন ক্যান্ডিডেট এর মধ্যে হলেন নবম। চরম হতাশ হলেন তিনি । এয়ার ফোর্সে তাঁর যাওয়া হলোনা। কিন্তু কয়েকদিন পরেই ডিফেন্স মিনিষ্ট্রিতে তাঁর ডাক পরলো এবং সেখানে সিনিয়ার সাইন্টিস্ট এসিস্টেন্ট হিসিবে জয়েন করেন। এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর জীবনের উত্থানের গল্প । তাঁর মেধা এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠা দেখে তাকে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ প্রোগ্রামে পদায়ন করা হয়। সেখান থেকে রকেট সাইন্সের উপর প্রশিক্ষণ নিতে তাকে আমেরিকায় পাঠানো হয়।
তাঁর হাত ধরেই ভারতের রকেট টেকনোলোজির বিশাল উন্নতি সাধিত হয় এবং তিনি “মিসাইলম্যান” , “ইন্ডিয়ান মিসাইল ম্যান” উপাধি পান। ১৯৯৮ সালে ভারতের প্রথম সফল পারমাণবিক পরীক্ষা পোখরান-২ তাঁর হাত ধরেই সফলতা পায়। তিনি ১৯৮১ সালে পদ্মভূষণ , ১৯৯০তে পদ্মবিভূষণ এবং ১৯৯৭ সালে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ভারতরত্ন উপাধি সহ বিভিন্ন দেশি – বিদেশী পদক সম্মানে ভূষিত হন।
১৫ আক্টোবর ১৯৯১তে তিনি ৬০ বছরে পদার্পণ করেন এবং নিজের অবসরের অপেক্ষায় ছিলেন। ইচ্ছা ছিল গরীব বাচ্চাদের জন্য একটি স্কুল খুলবেন সেখানে তাদের শিক্ষা দান করবেন এবং নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা যা মানুষের কাজে লাগবে তা লিখিত আকারে সংরক্ষণ করে যাবেন। করছিলেনও তাই কিন্তু ২০০২ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি এবং কংগ্রেসের ভারতের সবচেয়ে বড় দুই দলের মতামতের ভিত্তিতে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি মানুষের মাঝে জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে পছন্দ করতেন। ভালবাসতেন নিজের জীবনের শিক্ষা তরুণ প্রজন্মের মাঝে পৌঁছে দিতে । তেমনই ২০১৫ সালে ২৭শে জুলাই মেঘালয়ের শিলং শহরে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট নামক প্রতিষ্ঠানে বসবাসযোগ্য পৃথিবী বিষয়ে বক্তব্য রাখছিলেন । ভারতীয় সময় ৬টা ৩০ মিনিটে বক্তব্য রাখা অবস্থায় তাঁর হার্ট এ্যটাক হয় এবং তাকে বেথানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ৭টা ৪৫ মিনিট নাগাদ তাঁর মৃত্যু ঘটে ।
৮৪ বছর বয়সে দেশের জন্য নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করে যাওয়া এ মহাপুরুষ পরলোক গমন করেন। ২৯শে জুলাই তাঁর জন্মস্থান রামেশ্বরমেই তাকে দাফন করা হয়। তিনি তাঁর কর্মজীবনে দেশের সেবায় পার করেন এ সময়ে তাঁর পরিবার পরিজন বলতে ছিল অসংখ্য বই এর একটি আলমারি এবং দেশের মানুষের ভালবাসা। দেশ এবং দেশের মানুষই ছিল তাঁর পরিবার ,এদের ছেড়ে বিয়ে এবং সংসার করা তাঁর হয়ে উঠেনি। তাঁর মৃত্যুতে ভারতে ৭ দিনের জাতীয় শোক পালন করা হয়।
আজকের মতো এই পর্যন্তই , তথ্যে যদি কোন ভুল থাকে অবশ্যই জানাবেন সংশোধন করে দেয়া হবে। লেখাটি কেমন লেগেছে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এছাড়া এমন আরো আর্টিকেল পড়তে ভিসিট করুন আমাদের সাইট এবং ফেসবুক লাইক দিন আমাদের priyojanala.com
লিখেছেন- রাইয়্যান আজমী
ক্রিকেট, ফুটবল, বাংলা সংবাদ, হেলথ টিপস, টেকনোলোজি টিপস, বাংলা ব্লগ, বিভিন্ন তথ্যমূলক প্রতিবেদন, পড়াশুনা সহ নতুন সিনেমা/নাটক/ওয়েব সিরিজ সংবাদ/ বাংলা রিভিউ/গল্প ব্যাখ্যা/বাংলা সাবটাইটেল পেতে আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে থাকুন-
প্রিয়জানালা ফেইবুক পেইজ – ক্লিক করে লাইক দিন!