healthtips

Hepatitis B হেপাটাইটিস -বি কী? যেভাবে ছড়ায়? লক্ষনসমুহ ও তাঁর প্রতিকার

 

বর্তমানে মানবদেহ মানেই যেন রোগ-বিরোগের বাসা। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার না খাওয়ায়, খাদ্যদ্রব্যে বিভিন্ন রকমের ভেজালের মিশ্রণ,দূষিত পরিবেশ সব বয়সী মানুষকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত করছে।

এমনকি কিছু রোগ মানুষের মারাত্মক ভাবে ক্ষতি করে এবং কিছু রোগের পরিনাম মৃত্যু।কিছু সংক্রামক, কিছু, সংক্রামক নয়। ঠিক তেমনি, বাংলাদেশে একটি সংক্রামক রোগ যেটি নীরব ঘাতক হিসেবে ব্যাপক ভাবে দেখা যাচ্ছে সেটি হচ্ছে ‘হেপাটাইটিস-বি’। হেপাটাইটিস রোগের ৫টি ভাইরাসের মধ্যে হেপাটাইটিস -বি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর এবং একটি মারাত্মক ব্যাধি।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বে দুইশ’ কোটির বেশি মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত এবং ৪০ কোটির বেশি মানুষ এই রোগ বহন করছে।হেপাটাইটিস-বি কী, কিভাবে ছড়ায়, লক্ষনসমূহ, প্রতিকার এবং প্রতিরোধসহ, বিভিন্ন তথ্য পাবেন এই লেখাটিতে।

হেপাটাইটিস-বি কী?

হেপাটাইটিস – বি একটি সংক্রামক রোগ। এই রোগটি লিভার বা যকৃত কে আক্রমণ করে। হেপাটাইটিস -বি ভাইরাস এর মানবদেহে সংক্রমণ ঘটায়। সাধারনত রক্তে অবস্থিত ভাইরাস পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। 

 

Hepatitis B হেপাটাইটিস -বি কী? যেভাবে ছড়ায়? লক্ষনসমুহ ও তাঁর প্রতিকার

 

হেপাটাইটিস -বি যেভাবে ছড়ায়।

প্রথমেই বলে নিচ্ছি হেপাটাইটিস – বি হাত ধরা, খাবারের তৈজসপত্র শেয়ার করা, চুম্বন, কোলাকুলি করা, হাঁচি-কাশি, কিংবা মাতৃদুগ্ধপানের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায় না। হেপাটাইটিস -বি রোগটি ভাইরাস জনিত রোগ যা রক্ত, বীর্য কিংবা দেহে নিঃসৃত তরলের মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত শিশুর জন্মের সময় এটি ছড়ায়। এছাড়াও শৈশবে আক্রান্ত ব্যাক্তির রক্তের মাধ্যমেও সংক্রমণ ঘটে। যেসব জায়গায় হেপাটাইটিস -বি রোগের প্রকোপ বেশি সেসকল স্থানে কোনো শিশু জন্ম নিলে সেই শিশুর আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক। কিন্তু যেসমস্ত জায়গায় ছড়ানোর প্রকোপ কম সে জায়গায় নিন্মে বর্নিত মাধ্যমে রোগটি ছড়ায়।  যেমনঃ

১. শিরায় মাদক গ্রহন করলে হেপাটাইটিস -বি  রোগটি ছড়ায়।

২. অরক্ষিত যৌন মিলনের ফলে এই রোগের সংক্রমন ঘটে।

৩. যেহেতু রক্তের মাধ্যমে ছড়ায় তাই রক্ত আদান-প্রদান করলেও রোগটি ছড়ায়।

৪. ডায়ালাইসিস এর কারনেও অনেক সময় ভাইরাসটি দেহে প্রবেশ করতে পারে।

৫. আক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে সহবাস করলেও রোগটি সংক্রমিত হয়।

৬.হেপাটাইটিস – বি রোগের প্রকোপ বেশি এবং এমন স্থানে ভ্রমণ করলেও অনেক ক্ষেত্রে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে।

৭. ১৯৮০ সালে ট্যাটুর মাধ্যমেও কিছু সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হলেও বর্তমানে এ ধরনের সংক্রমন হয় না।

 

হেপাটাইটিস – বি এর লক্ষনসমুহ।

হেপাটাইটিস -বি এমন একটি সংক্রমক রোগ যার লক্ষন সহজে প্রকাশ পায় না। তবে যতক্ষনে তা প্রকাশ পায় ততক্ষনে অত্যাধিক সংক্রমন ঘটে যায়। এটি মানুষের লিভার বা যকৃতকে আক্রমণ করে এবং আস্তে আস্তে এর কার্যকরিতা, ভাইরাসের প্রভাব খুব দ্রুত গতিতে বেড়ে যায়। যার প্রভাব পুরো দেহে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত রোগীর প্রথমে কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। এই রোগের সুপ্তবস্থা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রোগের লক্ষণ পর্যন্ত প্রায় ৪ সপ্তাহ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। হেপাটাইটিস বি এর বেশ কিছু লক্ষন রয়েছে। তার মধ্যে প্রাথমিক কিছু লক্ষন হলো,

        অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করাঃ

হেপাটাইটিস- বি আক্রান্ত রোগির বেশির ভাগ সময়ই অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করে। অল্পতেই হেপে যাওয়া, কোনো কাজ শুরু করার আগেই শরীর দুর্বল লাগা ইত্যাদি।

        শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি। আক্রান্ত রোগির দেহের ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি হেপাটাইটিস -বি এর অন্যতম লক্ষন।

        চোখ এবং প্রসাবের রং হলুদ হওয়া। হেপাটাইটিস – বি রোগে আক্রান্ত হলে তার চোখ এবং প্রসাবের রং হলুদ হয়ে যায়। লক্ষনটি আক্রান্ত হওয়ার ৪-৫ দিনের মধ্যে দেখা যায়।

        হাড়ের জয়েন্টে ব্যাথা।

আক্রান্ত রোগির হাড়ের জয়েন্ট অর্থাৎ অস্থিগুলোর মাঝখানে অসম্ভব ব্যাথা তৈরি হয়। এছাড়াও সমস্ত শরীরে ব্যাথা অনুভত হয়।

        জ্বর জ্বর লাগা।আক্রান্ত রোগির বেশির ভাগ সময়ই জ্বর জ্বর লাগে। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং ওঠানামা করে।

        অতিরিক্ত বমি এবং মাথা ব্যথা  হওয়া।

সারাক্ষণ বমি বমি ভাব হওয়া এবং মাথা ধরে থাকা এবং মাথা ব্যাথা হওয়া।

হেপাটাইটিস – বি রোগ থেকে প্রতিকার।

অনেকেরই  ধারনা যে হেপাটাইটিস – বি রোগে আক্রান্ত হলে কোনো আশা নেই বেঁচে থাকার,  লিভার বা যকৃত নষ্ট হয়ে যাবে। তবে এই ধারণা সম্পূর্ণ  ভুল। হেপাটাইটিস -বি ভাইরাস  পুরোপুরি নির্মুল করা না গেলেও, চিকিৎসার মাধ্যমে এটি অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। চিকিৎসার ক্ষেত্রে  তীব্র সংক্রামক এই রোগের কোনো কার্যকরি ঔষধ নেই। তবে কিছু নির্দিষ্ট রোগির ক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় ডাক্তাররা “ইন্টার ফেরন” নামক ঔষধটি ব্যবহার করেন। ঔষধটি সাফল্যের হার মাত্র ১০-১২ শতাংশ। সুতরাং প্রতিরোধই এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র মাধ্যম। হেপাটাইটিস -বি এর সংক্রমণ হতে রক্ষা পেতে একমাত্র হেপাটাইটিস- বি এর টিকা নেওয়াই যথেষ্ট। জন্মের পরপরই শিশুকে হেপাটাইটিস – বি এর টিকা দিয়ে দিতে হবে। যদি জন্মের সময় এই টিকা দেওয়া না হয়ে থাকে তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টিকা দিতে হবে। যেকোনো বয়সের মানুষ টিকা নিতে পারে, সেক্ষেত্রে কোনো বাধা-ধরা নিয়ম বা দিন- তারিখ নেই।

হেপাটাইটিস – বি টিকার সময়সূচি।

হেপাটাইটিস-বি এর টিকা যেকোনো সময় নেওয়া যায় তবে মাংসপেশিতে বিভিন্ন সময়ে তিনটি মাত্রায় এই টিকা দেওয়া হয়।

১ম মাত্রায় যেকোনো দিন।

২য়  মাত্রা প্রথম মাত্রার এক মাস পর।

৩য় মাত্রা প্রথম মাত্রার ছয় মাস পর।

টিকার কার্যকারিতা দীর্ঘয়িত করার জন্য প্রথম পাঁচ মাস আরেকটি মাত্রা দেওয়া হয়। এটিকে বুস্টার ডোজ বলা হয়।

হেপাটাইটিস – বি প্রতিরোধ।

হেপাটাইটিস – বি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বে দুইশ’ কোটির বেশি মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত এবং ৪০ কোটির বেশি মানুষ এই রোগ বহন করছে। এটি সংক্রামক এবং এটি নীরব ঘাতক। কিন্তু এর টিকা গ্রহনের মাধ্যমে এবং কিছু সচেতনতা অবলম্বন করলে এই বিরল রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেহেতু প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম তাই হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধ করতে,

১. সেল্ফ হাইজিন মেন্টেইন করা। সর্বদা পরিষ্কার পরিছন্ন থাকা।

২.অন্যের ব্যবহারকৃত জিনিস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা।

৩. মাদক সেবন বা এই সকল অস্বাভাবিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকা।

৪.নিজের ব্যাক্তিগত জিনিস শেয়ার না করা।

৫. হাসপাতালের সুই-সিরিঞ্জ ব্যবহারের পর নষ্ট করে দেওয়া।

৬.অবৈধ যৌন মিলন হতে বিরত থাকা।

৭. রক্ত দেয়া বা নেয়ার আগে পরীক্ষা করে নেয়া।

৮. গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মায়ের সাবধানে থাকা।

 

 

Back to top button