বাথসল্ট কি? রূপচর্চায় Bath Salts এর উপকারিতা জেনে নিন
Bath Salts কি? Bath Salts এর উপকারিতা জেনে নিন!
বাথসল্ট আমাদের অনেকের কাছেই পরিচিত একটি শব্দ হলেও অনেকেই জানেন না এটা ঠিক কি কাজে ব্যবহৃত হয়। বাথসল্ট হচ্ছে বডি স্ক্রাবার বা এক্সফোলিয়েটর। স্নানের সময় সাবান ব্যবহারে আমাদের শরীরের ত্বক খসখসে এবং শুষ্ক হয়ে যায়। আমাদের শরীরে নিয়মিত যে মৃতকোষ জমে এবং র্যাশ হয় সেগুলো সাবান দূর করতে পারেনা। ফলে শরীরের ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং মসৃণতা দিন দিন নষ্ট হয়ে যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে বাথসল্ট। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এবং ফ্লেভারের বাথসল্ট পাওয়া যায়। এগুলো দেখতে অনেকটা ফেস স্ক্রাবারের মত। কিন্তু ফেস স্ক্রাবারের মত বাথসল্ট এতটা নমনীয় নয়। বাথসল্টের অনন্য সুঘ্রাণ স্নানের সময় আপনাকে আরও সতেজ অনুভূতি এনে দেবে। নিয়মিত ব্যবহারে শরীরের ত্বক হয়ে উঠবে নরম, কোমল এবং মখমলের মত আকর্ষণীয়। ত্বকের দাগ, রঙের অসামঞ্জস্য, অতিরিক্ত লোমের সমস্যা দূর করতে বাথসল্ট খুবই কার্যকরী। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের, ফ্লেভারের এবং দামের বাথসল্ট পাওয়া যায়। ত্বকের ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা ফ্লেভারের বাথসল্ট রয়েছে৷ নিজের ত্বকের ধরন বুঝে বাথসল্ট কিনতে পারেন। সাবান ব্যবহারে ত্বক আদ্রতা হারিয়ে শুষ্ক ও বিবর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু বাথসল্ট ব্যবহারে এ ধরনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু সপ্তাহে তিনদিন ব্যবহার করা উচিত। এবং বাথসল্ট ব্যবহারের পর অবশ্যই লোশন, বডি অয়েল বা ভাল মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। গোসলের পর ত্বকে ভেজা ভাব থাকতেই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে দীর্ঘসময় পর্যন্ত ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে। সুপ্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে বাথসল্টের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
বাথসল্টের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
১. ত্বকের ময়লা ও ট্যান দূর করে
প্রতিদিনের জীবন-যাপনে শরীরে নানা রকম ধুলাবালি জমে যায়। যা শুধু জল বা সাবান ব্যবহারে দূর হয়না। বেশীক্ষণ সাবান আর কাপড় ব্যবহার করে ত্বকে রাব করলে ত্বকের আদ্রতা নষ্ট হয় এবং ত্বক খসখসে এবং শুষ্ক হয়ে যায়। এই সমস্যা দূর করলে সাবানের পরিবর্তে স্নানের সময় বাথসল্ট ব্যবহার করতে পারেন। স্নানের সময় শরীর জল দিয়ে ভিজিয়ে নিন, এরপর শরীরের সবস্থানে বাথসল্ট ব্যবহার করুন। তবে মনে রাখবেন বাথসল্ট শুধুমাত্র বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য। কোন স্পর্শকাতর স্থানে বা চোখ, কানের ভিতর যেন বাথসল্ট প্রবেশ না করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন। এরপর পরিষ্কার নরম কাপড় দিয়ে অথবা হাতের সাহায্যে সারা শরীর ম্যাসাজ করুন ৫ মিনিট। এরপর ভালভাবে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তবে স্নানের পর শরীর হালকা ভেজা থাকা অবস্থায় লোশন বা বডি অয়েল ব্যবহার করুন। তাহলে ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকবে।
২. ত্বকে আনে মখমলের মত মসৃণতা
যারা স্লিভলেস পোশাক পরেন তারা প্রায়শই নিজেদের ত্বকের খসখসে বিবর্ণতা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। এছাড়া আমরা সবাই চাই আমাদের শরীরের ত্বক মখমলের মত কোমল, মসৃণ হোক। কিন্তু ত্বকে মৃতকোষ জমে এবং ছোট ছোট র্যাশ হয় বিধায় গায়ের ত্বক মসৃণ এবং কোমল দেখায় না সহসাই। এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে বাথসল্ট। নিয়মিত বাথসল্ট ব্যবহার করলে ত্বকে জমে থাকা মৃতকোষ এবং র্যাশ উঠে যাবে। ফলে ত্বক মখমলের মতই নরম ও কোমল হয়ে উঠবে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে র্যাশ হওয়ার প্রবণতাও অনেক কমে যাবে।
৩. ট্যান উঠাতে সাহায্য করে
যারা ঘরের বাইরে বিভিন্ন কাজে বের হন তারা ত্বকে যতই সানব্লক ব্যবহার করেন না কেন ত্বকের উপর সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি পড়ে ত্বক ট্যান অর্থ্যাৎ কালচে হয়ে পুড়ে যায়। এই পোড়া দাগ সহসাই ওঠেনা। একবার পুড়ে গেলে সেই ট্যান উঠতে বেশ অনেকদিন সময় লাগে। কিন্তু এক্ষেত্রে বাথসল্ট দ্রুত সমাধান দিতে পারে। ট্যান হয়ে যাওয়া স্থানে বাথসল্ট ৫-৭ মিনিট ম্যাসাজ করুন। হাত ও পায়ের ক্ষেত্রে ম্যাসাজের পর উষ্ণ গরম জলে লবণ ও শ্যাম্পু মিশিয়ে তাতে কিছুক্ষণ হাত-পা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর স্বাভাবিক জল দিয়ে হাত-পা ধুয়ে নিন। এতে করে ট্যান প্রায় অনেকটাই উঠে যাবে। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে কালচে, ট্যানড হয়ে যাওয়া ত্বকেও খুব দ্রুত স্বাভাবিক উজ্জলতা ফিরে আসবে।
৪. ত্বক ফর্সা ও দাগমুক্ত হয়
আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানের ত্বকেই রঙের অসামঞ্জস্য দেখা যায়। আমরা মুখের ত্বকের যতটা যত্ন নেই, গায়ের ত্বকের যত্নে ততটাই উদাসীন। এজন্য বিভিন্ন স্থানে যেমন ঘাড়, গলা, কবজি, পা এসব স্থানে কালচে দাগ থাকে যা আমাদের সৌন্দর্য নষ্ট করে। এই দাগগুলো এমনিতে কোন প্যাক ব্যবহার করে দূর করা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অনেকেই ঝামেলা ভেবে তা করেন না। কিন্তু নিয়মিত বাথসল্ট ব্যবহার করে স্নান করলে ত্বকের বিভিন্ন স্থানের এই অবাঞ্চিত দাগগুলো সহজেই দূর হয়ে যাবে। ফলে ত্বক হয়ে উঠবে দাগমুক্ত ও ঝলমলে ফর্সা। বিশেষ করে হাত-পা ও গলার ত্বকের জন্য প্রতিদিন বাথসল্ট ব্যবহারের পর ভালমানের লোশন বা বডি ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। তাতে সর্বোত্তম ফল পাবেন।
৫. ত্বকের ভাজপড়া এবং অতিরিক্ত লোম কমায়
পরিবেশ দূষণ, ব্যক্তিগত অনিয়ম এবং খাদ্যাভাসের জন্য এখন বয়সের আগেই ত্বকে ভাজ পড়ে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। ত্বকের ভাজপড়া অবস্থা খুবই বিব্রতকর একটি সমস্যা। যা কিভাবে ঠিক হবে এ নিয়ে অনেকেই খুবই চিন্তিত থাকেন। অনেকেই পার্লার বা লেজার ট্রিটমেন্টের সাহায্য নিয়ে থাকেন। যা কিনা খুবই ব্যয়বহুল এবং এর বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু ত্বকের নিয়মিত যত্ন এবং ম্যাসাজেই এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। এজন্য ব্যয়বহুল চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। যেসব স্থানে ভাজ পড়ে যাচ্ছে সেখানে একটি বেশী সময় নিয়ে বাথসল্ট দিয়ে ম্যাসাজ করুন। মাঝে মাঝে হাতে সামান্য জল নিয়ে ত্বক ভিজিয়ে নিয়ে ম্যাসাজ করতে থাকুন। এরপর উষ্ণ গরম জলে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। তারপর ভাল মানের বডি অয়েল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন। ত্বকের ভাজপড়া দূর করতে লোশনের চেয়ে বডি অয়েল অনেক বেশী কার্যকর। এছাড়া প্রতিদিন বাথসল্ট ব্যবহার করে স্নান করলে হাত-পায়ের অবাঞ্চিত লোমগুলোও অনেক কমে যাবে। এতে ত্বক আরও পরিষ্কার ও মসৃণ দেখাবে।
প্রিয়জানালায় আরো বিউটি টিপস সম্পর্কে জানুন
👉মধুর জাদুকরী গুনাগুণ! মধুর উপকারিতা
👉 বাথসল্ট কি? রূপচর্চায় Bath Salts এর উপকারিতা জেনে নিন
👉বেসনের ফেস প্যাক – বেসনের উপকারিতা- বেসনের ব্যবহার
👉গরমে ত্বকের যত্নের জাদুকরী ৫ টি প্যাক
👉খুশকির কারন- খুশকির প্রতিকার ও ঔষধ
শেষ কথা
ত্বকের যত্নে আমরা অনেকরকম রূপচর্চা করে থাকি। কিন্তু ব্যস্ততার জন্য পুরো শরীরের সব অংশকে গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব হয়না। ফলে দেখা যায়, শুধু মুখের ত্বকই প্রাধান্য পায়৷ আর অন্যান্য স্থানের ত্বক কালচে অনুজ্জ্বল হয়ে থাকে। এছাড়া নিয়মিত সাবান ব্যবহারে আমাদের ত্বক শুষ্ক ও বিবর্ণ হয়ে যায়, ফলে ত্বকের স্বাভাবিক কোন উজ্জ্বলতা থাকেনা। কিন্তু নিয়মিত বাথসল্ট ব্যবহার করলে আপনাকে আলাদা করে কোন যত্ন না নিলেও হবে। একই প্রোডাক্ট ব্যবহারে আপনি একসাথে অনেকগুলো উপকার পাবেন। বাজারে অনেক ফ্লেভারের বাথসল্ট পাওয়া যায়। ত্বকের ধরন এবং পছন্দের ফ্লেভার অনুযায়ী বাথসল্ট বেছে নিন এবং ঘরে বসেই পার্লারের মত মখমলী স্কিন পেয়ে যান। বাথসল্টের দাম সাশ্রয়ী হওয়ায় সহজেই তা আপনার ত্বকের পরিচর্যার জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
সুপ্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না। এরপর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।
আমাদের প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে লাইক ও শেয়ার করুন এবং অন্যদের জানার সুযোগ করে দিন ।
✍ সাবিহা সাইদ খান (প্রিয়জানালা)
আমাদের ফেইসবুক পেইজ- প্রিয়জানালা