উজ্জ্বল ত্বকের জন্য ৭ ঘরোয়া উপায় – ঘরোয়া বিউটি টিপস

উজ্জ্বল ত্বকের জন্য ঘরোয়া উপায়
বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখে হয়ত আমরা নানান ধরনের সৌন্দর্যের সামগ্রী কিনে ফেলি । কিন্তু কখনও ভেবে দেখিনা যে জিনিসটা আমাদের ত্বকের জন্য উপযুক্ত কিনা ! হয়ত ক্ষণিকের জন্য ত্বকে কিছুটা উপকার করলেও , এতে ব্যবহৃত ক্ষতিকারক পদার্থ কিছুদিন পর ত্বকের উপর খারাপ্র ভাব বিস্তার করে । যার ফলে ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায় । তাই এসব ক্যামিকেলযুক্ত জিনিস ব্যবহার না করে ঘরোয়া ভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়া যাক , এর ফলে ত্বক থাকবে সুন্দর এবং অতিরিক্ত খরচ করার প্রয়োজন পরবে না ।
১ হলুদ ( Turmeric )
প্রাচীনকাল থেকে নানান কাজে হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে এবং হলুদের মধ্যে অনেক মহা ঔষধির গুন রয়েছে । বিশুদ্ধ হলুদ তার অ্যান্টিসেপটিক , বিরোধী প্রদাহজনক এবং জীবাণুমুক্ত বৈশিষ্ট্যর জন্য সুপরিচিত । আসুন জেনে নেওয়া যাক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে হলুদ কিভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে ।
অনিয়মিত জীবন যাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করার ফলে ব্রণ আজকাল অতি সাধারণ একটি সমস্যা । সাধারণত কম বয়সী ছেলে মেয়েদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায় । এছাড়া কিছু হরমোনাল কারণ অথবা বাইরের ধূলোবালি ও তৈলাক্ত ত্বক ব্রণ হওয়ার জন্য দায়ী । হলুদের মধ্যে থাকা কিছু বিশিষ্ট উপকরণ এই সমস্যার প্রতিরোধে খুব ভালো কাজ করে । যেমন :-
হলুদ গুঁড়োর সাথে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে তা শুধুমাত্র ব্রণের ওপর লাগান । শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন । হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টিসেপটিক গুণগুলি ব্রণ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং লেবুর মধ্যে থাকা ব্লীচিং গুণাগুণ ব্রণের দাগ দূর করে ।
মুখে অতিরিক্ত লোম সবাই অপছন্দ করে । অনেকেই থ্রেডিং বা ওয়্যাক্সিং এর পন্থা অবলম্বন করে , যার ফলে ত্বকের ক্ষতি হয় । এক্ষেত্রে হলুদের নিয়মিত ব্যবহার লাভদায়ক ।
হলুদের সাথে সামান্য জল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে অবাঞ্ছিত লোমের ওপর লাগান । শুকিয়ে গেলে লোমের উল্টো দিকে মাসাজ করুন , দেখবেন অবাঞ্ছিত লোমের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে ।
২ বেসন ( Gram flour )
আমাদের সবার ঘরেই বেসন আছে । সাধারণ খাবার কে অসাধারণ বানাতে এর তুলনা হয় না । খাবারের এর সাথে সাথে এই বেশন রূপচর্চাতে বহুল পরিমাণে ব্যবহার করা হয় । বেসন ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে ।
বেসনের সাথে হলুদ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন । ১০/20 মিনিট পর মুখ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । এটি ত্বকে লাগালে ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল হয় ।
সানস্ক্রিন ব্যবহার না করার ফলে সূর্যের তাপে চামড়া পুড়ে যায় । এই পোড়া ভাব দূর করতে বেসন এর সাথে লেবুর রস এবং এক-চামচ দুধ ও সামান্য হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে তা পোড়া দাগের উপর লাগালে অল্প দিনের মধ্যেই কালো ভাব দূর হয়ে যাবে । কিছুদিনের মধ্যে ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও সুন্দর ।
[ বি . দ্র . – বেসন ত্বককে শুষ্ক করে দেয় , তাই ব্যবহারের পর যদি শুষ্কতা অনুভূতি হয় তাহলে ব্যবহার করার সময় বেসনের সাথে অলিভ ওয়েল বা নারকোল তেল ব্যবহার করুন । তেল ব্যবহার করার ফলে যেমন শুষ্কতা দূর হবে তেমনি ত্বকের ময়লা ভেতর থেকে পরিষ্কার হবে করবে ]
৩ মধু ( Honey )
প্রাচীনকাল থেকেই মধু নানান কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে । প্রাচীন পুঁথিগুলিতে মধুর ব্যবহার বিশেষ ভাবে উল্লেখিত । শুষ্ক ত্বকের জন্য মধু অত্যন্ত কার্যকরী । মধুর মধ্যে থাকা মশ্চারাইজার ত্বকের শুষ্কতা কমিয়ে আনে । আজ আমরা জানব ত্বকের যত্নে মধুর গুনাগুন কতটুকু ।
মধুর সাথে এক চামচ চিনি মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে তা মুখের ওপর লাগান । শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন । এতে থাকা অ্যান্টিসেপটিকের গুণগুলি ব্রণ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে । এছাড়া এই পেস্টটি ঠোঁটের মধ্যে লাগিয়ে ৫ মিনিট মাসাজ করুন এর ফলে কিছুদিন পর ঠোঁটের কালচে ভাব দূর হয়ে যাবে ।
মধুর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বার্ধক্যের চিন্হ হ্রাস করে এবং ত্বক করে তোলে লাবণ্যময়ী । এছাড়া ঠোঁট ফাটা ও গোড়ালিতে মধু মাখলে সুফল পাওয়া যায় ।
৪ লেবু ( Lemon )
লেবু আমাদের রান্নাঘরে সবসময়ই থাকে । শুধু খাদ্যে নয় , রপচর্চায় লেবুর অবদান অনেক । আগেই বলা হয়েছে লেবুর মধ্যে থাকা ব্লিচিং গুণাগুনের জন্য এটি ত্বকের কালচে ভাব সহজেই দূর করে ।
লেবুর রসের সাথে বেকিং পাউডার মিশিয়ে ব্রণের দাগ , ত্বকের কালচে ভাব , কনুই ও হাঁটুর কালচে ভাবের উপর লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে । সপ্তাহে অন্তত দুবার এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে ত্বকের কালচে ভাব থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যাবে ।
অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির ফলে বা গর্ভবতী মহিলাদের স্ট্রেচ মার্ক একটি খুব সাধারন সমস্যা । এই সমস্যা দূর করার জন্য লেবুর রস নিয়মিত মার্কের উপর প্রয়োগ করলে স্ট্রেচ মার্ক এর দাগ হালকা হতে শুরু করে ।
৫ দুধ ( Milk )
চীনকাল থেকেই রূপচর্চায় যে জিনিসটির ব্যবহার করা হয়ে আসছে সেটি হলো দুধ । দুধের মধ্যে থাকা ল্যাকটিক আসিড ত্বক কে পরিষ্কার করতে , দাগ-ছোপ দূর করতে , উজ্বল ত্বক পেতে ব্যবহৃত হয় । জেনে নেয়া যাক সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য দুধ কিভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে :-
CTM এই পদ্ধতি অবলম্বন করে খুব সহজেই আকাঙ্ক্ষিত ত্বক পাওয়া যায় । C এর অর্থ ক্লিন্সিং অর্থাৎ ত্বককে পরিস্কার করা । T এর অর্থ টোনিং , এবং M এর অর্থ ময়শ্চারাইজিং । আমরা যদি আমাদের ত্বকের যত্নে প্রতিদিন এই রুটিন মেনে চলতে পারি তাহলে বয়স বাড়লেও ত্বকের বয়স বাড়বে না । এবং ত্বকে উপস্থিত সমস্যারও সমাধান হবে ।
টোনার হিসেবে ঠান্ডা দুধ খুব ভালো কাজ করে । সামান্য দুধের মধ্যে তুলো ভিজিয়ে মুখের ওপর লাগান এতে মুখের কালো ভাব , নোংরা – ময়লা ইত্যাদি এর মাধ্যমে উঠে আসছে । অবশ্যই ব্যবহার করার আগে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন ।
সামান্য দুধের সাথে ১চামচ কাজু বাদাম , ১চামচ কমলা লেবুর খোসা গুরা এবং কয়েক ফোঁটা অলিভ ওয়েল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরী করুন । উজ্বল ও মোলায়েম ত্বক পেতে এই পেস্টটি সপ্তাহে 3/4 দিন ব্যবহার করতে পারেন ।
শুষ্ক ত্বকের জন্য দুধ বরদান স্বরূপ । একটি চটকানো কলার সাথে ১চামচ মধু ও সামান্য দুধ মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরী করুন এবং মুখের ওপর প্রয়োগ করে ১৫ মিনিট রেখে দিন । এরপর সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে নিন ।
৬ আদা ( Ginger )
নিত্যদিনের রান্নায় বহুল ব্যবহৃত উপাদান হলো আদা । ত্বকের ক্ষেত্রেও তার অবদান অপরিসীম । চলুন জেনে নেওয়া যাক আদা আমাদের ত্বকের ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা পালন করতে সক্ষম ।
হাইপেরপিগমেন্টেশন এর জন্য শ্রেষ্ঠ প্রতিষেধক হলো আদার রস । টাটকা আদার রস নিয়মিত দশ দিন ব্যবহারের ফলে আপনার হাইপেরপিগমেন্টেশন এর সমস্যা দূর হতে বাধ্য ।
আদার রস প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে অত্যন্ত কার্যকরী । যার ফলে ব্রণ রোধে আদার পাউডার এবং সাথে দুধ দিয়ে একটি পেস্ট তৈরী করে মুখে লাগান । এতে ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও সুন্দর ।
৭ তিলের তেল ( Sesame Oil )
তিলের তেল একটি অতি পরিচিত নাম । তিলের বীজ থেকে সাধারণত এই তেল পাওয়া যায় । অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি , অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ তিলের তেল আমাদের ত্বকের পক্ষে অনেক উপকারী । আসুন জেনে নেওয়া যাক তিলের তেল কিভাবে আমাদের ত্বকে কাজে লাগাতে পারি ।
তিলের তেলে প্রচুর মাত্রায় পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকার জন্য শীতকালে ত্বককে ছত্রাকজনিত সংক্র্মন থেকে রক্ষা করে । এই তেলের নিয়মিত মাসাজে ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায় । দীপ্তিশীল ও দূষণমুক্ত ত্বক পেতে এর সাথে সামান্য জল এবং অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে রাতে ভালোভাবে আপনার ত্বকের উপর মাসাজ করুন এবং পরের দিন সকালে ভালো ক্লিনজার দিয়ে আপনার ত্বক পরিষ্কার করে নিন ।
ত্বককে মশ্চারাইজার প্রদানে তিলের তেলে ভুমিকা অপরিহার্য । কাটা-ছেঁড়া বা ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে তিলের তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে , যা কিনা ত্বককে ভেতর থেকে মশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে ।
ত্বকের বলিরেখা দূর করতে এই তেলের নিয়মিত মাসাজে ত্বকে বার্ধক্যের প্রভাব হ্রাস পেয়ে ত্বকের বয়স কম দেখায় ফলে আপনাকে দেখতে অনেক প্রাণবন্ত লাগে ।
পা ফাটা সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা হয়ে থাকে । যাদের পা ফাটার সমস্যা আছে , রাতের বেলা নিয়মিত এই তেলের ব্যবহারে পায়ের ফাটা ভাব দূর হয় এবং তা হয়ে ওঠে আরো মোলায়েম ।
আশা করা যায় এই পরামর্শের মাধ্যমে আমনাদের কিছুটা হলেও উপকার হবে । ঘরোয়া জিনিস ব্যবহারে সুন্দর ত্বক পাওয়া সম্ভব তা আজ আপনারা জানতে পারলেন । প্রাকৃতিক উপাদানের উপকার চিরকালই অপরিসীম । আমাদের উচিত এইসব উপাদানের ভরপুর লাভ ওঠানো । যেহেতু কোনরকম কেমিকেল ছাড়াই শুধুমাত্র প্রাকৃতিক জিনিসের ব্যবহারে সুন্দর ত্বক পাওয়া যায় , তাই এর প্রভাব ধীরে ধীরে সামনে আসে । এক্ষেত্রে অধৈর্য হলে চলবে না । আজকের আমাদের প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে লাইক ও শেয়ার করুন এবং অন্যদের জানার সুযোগ করে দিন । এছারাও কমেন্টের মাধ্যমে আপনার সুযোগ্য মতামত জানতে ভুলবেন না ।
লেখিকাঃ – সায়মা আক্তার (প্রিয়জানালা)