স্বার্থপর হও, স্বার্থান্বেষী নয় – বাংলা ব্লগ
ছোটবেলায় বুঝতামইনা স্বার্থপরতা কি। কিন্তু বড় হওয়ার পর স্বার্থপর এর সংঙ্গা থেকে এর মানে বুঝা গেল। এখন আসি আসল কথায়, স্বার্থপর কথাটাই নেগেটিভ। যারা স্বার্থপর তারা আসলেই নিজের জিনিস ছাড়া কিছু বুঝে না। তারা অন্যের ব্যাপারে কিছুই ভাবেনা। কিন্তু আসলেই কি তাই?
স্বার্থপর শব্দটার সাথে একটা শব্দ স্বার্থান্বেষী যখন খুঁজে পেলাম তখন ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না আসলে এদের মধ্যে পার্থক্য কি? আসলে কি এরা এক নাকি ভিন্ন? হয়তো কেউ কেউ একই অর্থে ব্যবহার করলেও আমি তার ভিন্নতাই খুঁজে পেয়েছি। জীবনে চলার পথে সফলতা পাওয়া, প্রতিকূলতা খন্ডন করা, নিজের জায়গা তৈরি করা ইত্যাদি কিছু কাজের সুষ্ঠতার জন্য স্বার্থপরতার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনের আগে এই দুটো শব্দের মধ্যে পার্থক্য জানা একান্ত জরুরি। স্বার্থপরতা কি আমরা সকলেই বুঝি। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মানে যারা শুধুই নিজের স্বার্থ অন্বেষন করে। অন্যের ভাল মন্দ খুজেনা।
বাইদা ওয়ে, যদিও আমি স্বার্থপরতাকে পজিটিভলি দেখাচ্ছি, কিম্তু স্বার্থান্বেষীরা স্বার্থপরতা থেকেই সৃষ্টি। অতিরিক্ত স্বার্থপর মানুষই স্বার্থান্বেষী নামে পরিচিত। সুতরাং জীবনের কিছু ক্ষেত্রে কিছু জিনিস অর্জনের জন্য স্বার্থপর হওয়ার দরকার রয়েছে। নয়তো অনেক কিছু স্বপ্নাতীতে থেকে যাবে। প্রশ্ন হলো কি অর্জনের জন্য স্বার্থপর হতে হবে? কি এমন দরকার?
সময়ের সঠিক ব্যবহারের জন্য স্বার্থপরতাই আজকের আলোচনার মূল বিষয়। সময়ের সঠিক ব্যবহারই আপনার জীবনের সফলতা এনে দিতে পারবে। আমরা একটা প্রবাদ বাক্য জানি –“Time and Tide Wait For None”
আমরা যতই সময় নষ্ট করি না কেন, যতই এদিক সেদিক হারায় না কেন, সঠিক কাজের জন্য যে সময়টা দরকার তা আামদের অপেক্ষায় বসে থাকবেনা। এখন প্রশ্ন হলো সময়ের সাথে স্বার্থপরতার সম্পর্ক কি? হ্যাঁ, আমি বলব অবশ্যই একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। নিশ্চয়ই আপনি “একের ভিতর সব” হতে পারবেন না,আপনি সব জায়গায় বিরাজমান হতে পারবেন না।
উদাহরণস্বরূপ, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন,আপনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা পড়াশোনা করার আছে কিন্তু আপনি আড্ডা পরিত্যাগ করতে পারছেন না এই ভেবে যে তারা আপনাকে স্বার্থপর ভাববে। কিন্তু একবার কি ভেবেছেন? বন্ধুদের জন্য যে সময়টা আপনি ত্যাগ করছেন এতে কি আপনার ভাল হচ্ছে বা হবে? নাকি সময় খুব ভাল যে আপনার জন্য বসে থাকবে? সেই সময়টা তো আপনার জন্য একদমই বসে থাকছে না সে সময়টা কতটা স্বার্থপর যে আপনাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তাহলে সেই সময়কে সঠিক ব্যবহার করতে হলে, কিছু পেতে হলে, নিজের ভাল চাইলে, আপনাকে আামাকে স্বার্থপরতো কিছুটা হতে হবেই। আজকের স্বার্থপরতা আগামীকালের সফলতা বয়ে আনতে পারে।
আপনি অনেক ভাল,দয়ালু, মানুষকে সাহায্য করতে অনেক ভালবাসেন। কিন্তু আপনিতো গড না, যে একসাথে সব কাজ করে সবাইকে সাহায্য করতে পারবেন। সবার মন রক্ষা করে চলা সম্ভব না আপনার পক্ষে। আমি আাসলে কেমন সাহা্য্যের কথা বলছি বিষয়টা পরিষ্কার করতেছি। ধরুন, আপনি আপনার পরিবারকে অনেকভাবে সাহায্য করতে চান। সব কাজে বাবা, মা, ভাই –বোন কে সাহায্য করেন। বলতে গেলে আপনি সবার মন রক্ষা করতে পারতে সব কাজই করে দেন। সো সেড! এখানেইতো ঝামেলা। আপনাকে একটু স্বার্থপর হওয়া লাগবে। আমি বলছিনা যে আপনি বাবা মা পরিবারকে সাহায্য করবেন না, অবশ্যই করবেন। কিন্তু সফলতার সিঁড়ি তে বেয়ে চলছেন আপনি, তখন একটু লিমিটেশন এ আপনাকে থাকতে হবে। ধরুন,” সবার জন্য আমি” হয়ে এই আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, আমি সবার জন্য খেটে কাজ করলাম। অবশেষে কি হল? যখন আপনার বাবা মা বৃদ্ধ হবেন, একান্তই আপনার উপর নির্ভরশীল হবেন, আপনার সাহা্য্যের দরকার আর তখন আপনি বেকার। আপনার কোনো সামর্থ্য নেই সাহায্য করার। তাই সময় থাকতে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে, পরে সময় আসলে সবাইকে সাহায্য করা পাশাপাশি নিজেও ভাল থাকা যাবে। ভাল কিছু পাওয়ার জন্য একটুকু স্বার্থপর হওয়ায় যায়। যাইহোক, এগুলো ছাড়াও আপনি কি নিজেকে জিজ্ঞেস করেছেন কখনো? সবার মন রক্ষা করেতো চলছেন ঠিকই আপনার মনটা রক্ষা হয়েছে কি?
“পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি”। কেউ বলে নাই আজকে আনন্দ করে বেড়াও আগামীকাল সৌভাগ্য এসে যাবে। যদি কারো এসে থাকে তাহলে সেতো বাংলা সিনেমার লটারির মত হওয়া লাগবে। সারাদিন আনন্দ করলাম,ঘুরলাম,সময় নষ্ট করলাম আর দিন শেষে সফলতা চাই। দিস ইস নট ফেয়ার। আবার এটাও বলছিনা যে একদম বোরিং, একগুঁয়ে জীবন পরিচালনা করুন। আনন্দ, হাসি, খেলা থাকাটাও আবশ্যক। কিন্ত আমার কথা ঐ একটাই নিজেকে আনন্দের জন্য উৎসর্গ করা যাবেনা। কিছুটা স্বার্থপর হওয়া লাগবে। জীবনের গড়ে উঠার সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে।
সফলতার গল্পগুলো এভাবেই অনেকটা স্বার্থপরতার সাথে জড়িত। কিন্তু কে কতটা স্বার্থপর হবে, নাকি হওয়ার প্রয়োজন নেই সেটা আবার ব্যক্তি নির্ভর।
একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, স্বার্থপরতা আর স্বার্থান্বেষী একসাথে গুলিয়ে ফেলা যাবেনা। যারা স্বার্থ অন্বেষণ করে, তারা মানুষের কোনো উপকারে আসেনা বরং ক্ষতিই করে থাকে। যেমন , কেউ আপনার সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করতে পারে শুধু নিজের কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য। এমন লোক থেকে সাবধানে থাকতে হবে।
অবশেষে বলা যায়, জীবনের সফলতার গল্প লিখতে হলে প্রয়োজনে স্বার্থপর হওয়াটা মন্দ নয়। না হয়, হয়তবা, যেদিন স্বার্থপর আর স্বার্থন্বেষী কথাটার মানে বুঝব, সেদিন আমি বা আপনি হয়তো শুধুই একজন ব্যর্থ মানুষ।
লেখকঃ মাহমুদা তাবাসসুম
প্রিয়জানালা কনটেন্ট রাইটার