একাকীত্বে সুখের শান্তি খুঁজে পাওয়ার উপায়
সুখ মানুষের উপর নির্ভর করে । কেউ কেউ একা থাকার মধ্যে এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করে আর কেউ কেউ মানুষের সাথে মেলামেশার মাধ্যমে নিজের আনন্দ খুঁজে পায়। যাদের একাকীত্বে ভাল লাগে তাদেরকে যদি এক দল মানুষের মাঝে রাখা হয় , তাহলে নিশ্চিত তার দম বন্ধ হয়ে আসার কথা । যাদের মানুষের সঙ্গ ভালো লাগে তাদেরকে একা থাকতে দিলে তারও দম বন্ধ হয়ে আসার কথা । আর এক দল মানুষ আছে যাদের একা থাকতেও ভাল লাগে আবার মানুষের সাথে মিশতেও ভালো লাগে। তাই মানুষটার ব্যক্তিত্ব কি রকম তার উপর সুখের হাওয়া নির্ভর করে। আবার কোনো কোনো খারাপ অভিজ্ঞতা থেকেও মানুষ নিঃসঙ্গতার জীবন বেছে নেয়।
যাই হোক, একাকীত্বের মধ্যে দিয়ে আমাদের কোন না কোন সময় যাওয়া লাগে জীবনের কোন এক পর্যায়ে। এই একাকীত্বে নিজের পরিচর্যার মাধ্যমে জীবনের ভিন্ন এক ধরনের স্বাদ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে যা মনে অনন্য অনুভুতি দিতে পারে । আর তার জন্য কিছু কাজ করতে হবে নিজের মনকে ভাল রাখার জন্য এই একাকীত্বের সময়ে।
১. প্রকৃতির রস নেওয়া : ভাবুন তো , আপনার মন মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে কোন কিছুর জন্য। খারাপ মেজাজ শীতল করতে আপনি ছাদে গেলেন আর তখনি এক দমকা হাওয়া আপনার শরীরের আত্নাকে ছুঁয়ে দিয়ে আপনাকে চনমনে করে দিল। আর প্রকৃতির দোলা জাগানো গাছগুলো আপনার মাঝে স্বর্গীয় সুখের অনুভূতি দিচ্ছে।
প্রকৃতি বরাবরই উদ্ধার করে আমাদের সতেজ করে তোলার জন্য। আর যদি আপনি প্রকৃতিপ্রেমী হোন তাহলে তো কোন কথাই নেই। প্রকৃতির মাঝে থাকলে আপনি নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারবেন আর তার স্বর্গীয় স্বাদ নিতে পারবেন। একাকীত্বে আমাদের হাতে অনেক সময় থাকে। আর সেই সময়ের কিছুক্ষণ প্রকৃতির মাঝে কাটিয়ে দিয়ে নিজেকে সতেজ করুন। ভাল লাগবে ।
২. সৃজনশীল হওয়া : মাঝে মাঝে এক ধরনের ভাল না লাগার অনুভূতি গ্ৰাস করে একাকীত্বে । এই ভাল না লাগার অনুভূতিটা এত তীব্র যে, মানসিকভাবে আপনাকে বিপর্যস্ত করতে পারে । ভাল্লাগে না রোগটাকে একপাশে সরিয়ে কোন এক সৃজনশীল কাজে লেগে পড়ুন যার জন্য আপনার মাথাটাকে খাটাতে হবে। যেমন , আপনি যদি লিখতে ভালবাসেন কোন একটা গল্প বা কবিতা লিখে ফেলুন।বা আর্টের প্রতি আগ্ৰহ থাকলে কিছু একটা এঁকে ফেলুন । অথবা কিছু একটা জিনিস তৈরি করতে পারেন যেটা দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। মোটকথা , মাথা খাটাতে হবে এমন কাজ করুন । সৃজনশীল কাজে আপনার ব্রেন এক্টিভ থাকে যা অন্য সব ঝামেলাপূর্ণ চিন্তা থেকে আপনার মনকে দূরে রাখে এবং কাজটা শেষ করার পর আপনি এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করবেন।
৩. দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো: দৃষ্টিভঙ্গির উপরেও মনের প্রশান্তি জিনিসটা নির্ভর করে। কারণ, দৃষ্টিভঙ্গি বড় রকমের প্রভাব ফেলে মনে চিন্তাভাবনা তৈরি করার জন্য সেটা ইতিবাচক হোক অথবা নেতিবাচক । এই চিন্তাভাবনা গুলো মনকে অনেক প্রভাবিত করতে পারে যা আপনার ভালো থাকা বা খারাপ থাকার জন্য দায়ী হতে পারে । তাই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সবকিছু দেখার চেষ্টা করুন যা আপনার একাকীত্বে ভাল থাকার জন্য বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে।
৪. বই পড়া: “একজন পাঠক মৃত্যুর আগে হাজারটা জীবন যাপন করেন”- মার্টিন ( আমেরিকান লেখক) । বই পড়ার উপকারিতা নিয়ে লিখলে তা
আর শেষ হওয়ার কথা নয় । একাকীত্বে বই প্রকৃত বন্ধু হতে পারে যে আপনার মন,ব্রেন, চিন্তাভাবনা ইত্যাদি পরিচর্যা করবে। কোথাও কোন নির্জনে বসে বইয়ের সাগরে ডুব দিলে যে স্বাদের অনুভূতি পাবেন তা অসম্ভব রকম সুন্দর । একমাত্র বইপ্রেমীরাই সেটা অনুভব করতে পারেন। তাই একাকীত্বের সময়ে বসে না থেকে বইয়ের রাজ্য থেকে ঘুরে আসুন । দেখবেন আপনার একাকীত্বের রাজ্য কোন এক আনন্দের পরিতৃপ্তির জগতে হারিয়ে গেছে ।
৫. আনন্দের কাজ করা: সবারই কিছু না কিছু ভালো লাগার কাজ থাকে যা আনন্দের সঞ্চার করে থাকে মনে । সেটা হতে পারে পছন্দের গান শোনা, প্রিয় সিরিজ, মুভি দেখা, গান/নাচ করা , বাগান করা, রান্না করা ইত্যাদি। মানুষদের সাহায্য করার মাঝেও আনন্দ লুকিয়ে থাকে । অনেক কিছুই তো খরচ হয় নিজের জন্য। কোন কোন সময় পথশিশুদের জন্য অথবা কেউ সাহায্য চাইতে আসলে তাদের সাহায্য করুন। তাদের মাঝে হাঁসি ফুটলে নিজেরও অনেক ভালো লাগবে। আনন্দের কাজগুলো করার ফলে যদি আপনার নিজেকে প্রাণবন্ত মনে হয় তাহলে সেগুলো করতে সমস্যা কি । শখের কাজগুলো আপনার একাকীত্ব জীবনটাকে আরও রাঙিয়ে দিবে ।
৬. ঘুরা: কোন স্থানে ঘুরতে যাওয়া ওষুধের মতো কাজ করে মনকে প্রাণময় করার জন্য। তাই একা একা কোথাও থেকে ঘুরে আসুন । এতে নিজেকে জানার পাশাপাশি নিজের প্রতি আস্থা চলে আসবে । একা একা কোথাও ঘুরার বা খাওয়ার মজাই আলাদা যা সবাই উপভোগ করতে পারে না। আপনার কাছে যদি সেই একা একা মজা নেওয়ার গুণ থাকে তাহলে কারও উপস্থিতি ছাড়াই আপনি আপনার একাকীত্ব জীবন উপভোগ করতে পারবেন যা এক কথায় বলতে গেলে অসাধারণ।
৭. মাঝে মাঝে কারও সাথে কথা বলা: একাকীত্বে আছেন বলে সবার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিবেন না । মাঝে মাঝে কারও সাথে কথা বলুন । নিজের অনুভূতিগুলোকে শেয়ার করুন আপনার বিশ্বস্ত মানুষদের কাছে। মানুষ সামাজিক জীব বলেই অন্য মানুষের সংস্পর্শে আসা লাগে মনকে ভাল রাখার জন্য।
৮. ক্যারিয়ারের প্রতি মনোযোগী হওয়া: ক্যারিয়ারের প্রতি সচেতনতা ও ভালোবাসা এবং তার জন্য কাজ করে যাওয়া আপনার একাকীত্ব জীবনকে আরও বেশি অর্থপূর্ণ করে তুলবে । ভাল লাগার কাজ করার পাশাপাশি ক্যারিয়ারের প্রতি মনোযোগী হলে নেগেটিভ চিন্তাভাবনা আপনাকে ছুঁতে পারবে না এবং আপনি আস্তে আস্তে সফলতার দিকে এগিয়ে যাবেন।
৯. কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা: আপনার জীবনে যা কিছু আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন এবং আপনি যা কিছু নিয়ে কৃতজ্ঞ তার দুই তিন লাইন প্রতিদিন কোন ডায়েরির পাতায় লিখে রাখুন। প্রতিদিন এইভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ফলে আপনার মনে পজিটিভ চিন্তাভাবনা গুলো জায়গা করে নিতে থাকবে যা জীবনে চলার পথে শক্তি জোগাবে।
১০. নিজেকে ভালোবাসুন: সর্বোপরি, নিজের দোষ-গুণ সব গ্ৰহণ করে নিজেকে জানার চেষ্টা করুন। আপনার কাছে যা কমতি লাগে সেটা নিয়ে মন খারাপ না করে যে গুণগুলো আছে সেগুলো নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন এবং নিজেকে নিজের কাছে উজাড় করে দিয়ে প্রাণখুলে ভালোবাসুন নিজেকে। অন্যের গুণগুলো দিয়ে নিজেকে তুলনা করবেন না কখনও। এতে হীনমন্যতা চলে আসবে যা জীবনে এগিয়ে চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। মনে রাখবেন, সবাই ভিন্ন ভিন্ন গুণের অধিকারী । তাই আপনিও সবার থেকে ভিন্ন। আপনি আপনিই ।
লেখক- রিচা চাকমা
প্রিয়জানালা কনটেন্ট রাইটার