
মানুষের জীবনের ক্লান্তি দূর করতে মাঝে মাঝে উৎসবের প্রয়োজন হয় । সামাজিক ও আত্মীয়তার শীতল হয়ে যাওয়া সম্পর্কগুলো সজীব ও প্রাণবন্ত করতে প্রয়োজন হয় কোনও সম্মিলন বা মিলন মেলার । যেন মানুষ তার প্রতিদিনের একঘেয়ে জীবনের সংকীর্ণ গণ্ডি থেকে বের হয়ে আত্মীয়তা, বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারেন । আজকে আমরা কথা বলবো সবচেয়ে বড় উৎযাপন নিয়ে ।

পৃথিবী জুড়ে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদ । ঈদ অর্থ হলো যা বার বার ফিরে আসে । প্রতি বছর ইয়াওমুল ফিতর ও ইয়াওমুল আযহা ফিরে আসে এজন্য ইসলামী শরীয়াতে প্রতি বছর দুটি করে ঈদ পালন করা হয়, এর একটি ঈদ-উল ফিতর, আর অন্যটি ঈদ-উল আযহা, যাকে কোরবানীর ঈদও বলা হয় । এই সময়টিতে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে, অর্থাৎ সারা বছরে যত পণ্য আর সেবা কেনাবেচা হয়, তার বড় অংশটি হচ্ছে এই সময়ে । ঈদুল ফিতর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দুটো সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি, দ্বিতীয়টি হলো ঈদুল আযহা । দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখা বা সিয়াম সাধনার পর মুসলমানেরা এই দিনটি ধর্মীয় কর্তব্যপালনসহ খুব আনন্দের সাথে পালন করে থাকে । এই দিনে সবাই সবাইকে “ঈদ মোবারক” বলে শুভেচ্ছা জানায় ।
ঈদ ইসলামের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলেও এই ধর্মের আবির্ভাবের সাথে সাথেই কিন্তু ঈদের প্রচলন শুরু হয়নি । ঈদ কখন আর কোন প্রেক্ষাপটে চালু হয়েছিল তা ইতিহাস থেকে জানা যায় ।
ইসলামের ইতিহাস বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে ৬২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ঈদ উদযাপন করা হয়েছিল । আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত : নবী মুহাম্মদ যখন মক্কা থেকে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে হিজরত করে মদিনায় যান, তখনকার সময়কে ভিত্তি ধরে হিজরী সাল গণনা করা হয় । মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর ঈদের প্রবর্তন হয় । রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় পৌঁছে দেখতে পান যে মদিনায় বসবাসকারী ইহুদিরা শরতের পূর্ণিমায় নওরোজ উৎসব এবং বসন্তের পূর্ণিমায় মেহেরজান উৎসব উদ্যাপন করছে । তারা এ উৎসবে নানা আয়োজন, আচার-অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন আনন্দ উৎসব করে থাকে । মহানবী (সা.) মুসলমানদের এ দুটি উৎসব পালন করতে নিষেধ করেন । তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তোমাদের ওই উৎসবের বিনিময়ে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো পবিত্র দুটি দিন দান করেছেন । এতে তোমরা পবিত্রতার সঙ্গে উৎসব পালন করো । হিজরী দ্বিতীয় সালে এসে বিধান দেয়া হয় যে রমজান মাস – চাঁদের হিসাবে যা ২৯ দিনেও শেষ হতে পারে অথবা কখনো ৩০ দিনেও শেষ হতে পারে, তারপর শেষে শাওয়াল মাসের প্রথম দিন ঈদ উদযাপন করা হবে । এভাবেই দুটি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা ।
রমজানের পর ঈদ উল-ফিতর, এবং জিলহজ্জ মাসে হজের সময় হয় ঈদ উল-আজহা অথবা ‘কুরবানীর ঈদ’ । আরবি ‘কুরবান’ শব্দটি ফারসি বা উর্দুতে ‘কুরবানি’ রূপে পরিচিত হয়েছে, যার অর্থ ‘নৈকট্য’ । মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানি দেয় । নবী আদম ও বিবি হাওয়ার সময় থেকেই কুরবানির প্রচলন । পবিত্র কোরানে আছে, নবি ইব্রাহিম আল্লাহ-কে কতটা ভালবাসেন তার একটা পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আল্লাহতালা । আল্লাহ স্বপ্নে ইব্রাহিমকে বললেন, তোমার সব চাইতে প্রিয় জিনিসটি আমাকে উৎসর্গ করো । পর পর তিন রাত ইব্রাহিম একই স্বপ্ন দেখলেন । এমন স্বপ্নসমূহ দেখবার পর তিনি চিন্তা করতে লাগলেন তাঁর সব চাইতে প্রিয় জিনিস কী হতে পারে !! তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস তাঁরই পুত্র ইসমাইল । কারন তাঁকে তিনি তাঁর বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহর অনুগ্রহে পেয়েছিলেন । ফলে ইব্রাহিম তাঁর সন্তান ইসমাইলকে আল্লাহর নামে কুরবানি দিতে উদ্যত হলেন । কোরবানি দেওয়ার পর দেখা গেল ইসমাইলের জায়গায় একটা দুম্বা (মতান্তরে ছাগল) কুরবানি হয়ে পড়ে আছে । এর পর থেকে ইব্রাহিমের অনুসারীরা এই ঘটনার স্মরণে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য চান্দ্র মাসের উক্ত দিনে পশু কুরবানি দেওয়া চালু করেন । কোরআনে কুরবানি সম্পর্কে আছে – মাংস বা রক্ত কোনটাই আল্লাহর কাছে পৌছায় না, পৌছায় তোমার মনের পবিত্র ইচ্ছা ।
ঈদ একটি ইবাদত । আনন্দ ও ফুর্তি করার মাধ্যমেও যে ইবাদাত পালন করা যায়, ঈদ তার অন্যতম উদাহরণ । ঈদের দিনে সকালে প্রথম আনুষ্ঠানিকতা হলো নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া । ঈদের নামাজ সবার জন্য । নামাজের পর সবাই একসাথে হওয়া, দেখা করা । ঈদের দিনে গুরুজন কাছে থেকে সালামি গ্রহণ করা তবে এর ধর্মীয় কোন রীতি নেই । ঈদের দিনে সেমাই সবচেয়ে প্রচলিত খাবার এবং বিশেষ আরো অনেক ধরনের খাবার ধনী-গরিব সকলের ঘরে তৈরি করা হয় । এ উৎসবের আরো একটি রীতি হলো আশেপাশের সব বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া, এবং প্রত্যেক বাড়িতেই হালকা কিছু খাওয়া । এ রীতি বাংলাদেশে প্রায় সবাই মেনে থাকে । বাংলাদেশসহ অন্যান্য মুসলিম-প্রধান দেশে ঈদুল ফিতরই হলো বৃহত্তম বাৎসরিক উৎসব । বাংলাদেশে ঈদ উপলক্ষে সারা রমজান মাস ধরে সন্ধ্যাবেলা থেকে মধ্যরাত অবধি কেনাকাটা চলে । অধিকাংশ পরিবারে ঈদের সময়েই নতুন পোশাক কেনা হয় । ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো ঈদের দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েকদিন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করে । ঈদের দিন ঘরে ঘরে সাধ্যমতো বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয় । বাংলাদেশের শহরগুলো থেকে ঈদের ছুটিতে প্রচুর লোক নিজেদের গ্রামে বেড়াতে যায় । এ কারণে ঈদের সময়ে রেল, সড়ক, ও নৌপথে প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায় । মুসলিমরা ঈদুল ফিতরের দিন বেশ কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করে থাকে । ঈদের দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ ।
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি । প্রত্যেক মুসলিমের পরিবারে ঈদ অত্যন্ত আনন্দ এবং খুশির বার্তা নিয়ে আসে । ঈদের দিন সবাই একে অন্যের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে । তাই আমরা ঈদ সম্পর্কে কিছু উক্তি আপনাদের কাছে তুলে ধরবো, যা দিয়ে আপনারা আপনাদের পছন্দের মানুষ বা আত্মীয়-স্বজনদের শুভেচ্ছা জানাতে পারবেন । চলুন দেখে নেই –

|| ঈদ আনন্দের দিন, পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে আনন্দ করার দিন
শুভ ঈদ মোবারক সবাইকে ||
|| আল্লাহ আপনার সমস্ত ইচ্ছা পূরণ করুক, এই ঈদে আপনার উৎসব সবার থেকে সেরা হোক, ঈদ মোবারক ||
|| ঈদের এই পবিত্র দিনে, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদের ঘরে উষ্ণতা ও শান্তির সাথে রহমত করেন, ঈদের শুভেচ্ছা ||
|| এই ঈদ আপনার হৃদয়ে এবং আপনার পরিবারের জন্য সুখ বয়ে আনুক
ঈদ মোবারক ||
|| এই বিশেষ দিনটি সবার জন্য শান্তি, সুখ এবং সমৃদ্ধি বয়ে আনুক
এই উপলক্ষে আল্লাহ আপনার জীবন সুখ ও মানসিক শান্তিতে প্লাবিত করুন
ঈদ মোবারক ||
|| আল্লাহ আপনার ভালো কাজগুলো কবুল করুক এবং আপনার ভুলগুলো ক্ষমা করুক, আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে ঈদ মোবারক ||
|| পবিত্র এই ঈদের দিনে আপনার ও আপনার পরিবারের শান্তি, সম্প্রীতি, সুখ, সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধি কামনা করছি । ঈদ মোবারক ||
|| এই ঈদ আপনার এবং আপনার পরিবারের মঙ্গলের জন্য সীমাহীন আনন্দ এবং সুযোগের দ্বার উন্মুক্ত করুক । ঈদ মোবারক ||
|| আজকে খুশির বাঁধ ভেঙেছে, ঈদ এসেছে ভাই ঈদ এসেছে
শাওআলের চাঁদ ওই উকি দিয়েছে, সবার ঘরে আজ ঈদ এসেছে
ঈদের রঙ লেগেছে মনে, তোমায় আমি রাঙ্গিয়ে দিবো ঈদের এই দিনে
সবাইকে ঈদ মোবারাক ||
|| খুশির হাওয়া লাগলো মনে, নাচবে খুকি ক্ষণে ক্ষণে
সাজবে সবায় নতুন পোশাক, ঈদমানে হাসি, ঈদ মানে আশা
ঈদ মানে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা । ঈদ মোবারক ||
|| সারা দেশে চলছে ঈদের উৎসব । ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি
ঈদ মানে হাজার কষ্টের মাঝেও একটুখানি হাসি, ঈদ মোবারক ||
|| কষ্টের আড়ালে সুখের রাশি, প্রতিটা জীবনকেই আমি ভালোবাসি
তাই প্রতিটা জীবনের প্রতিটা সময় শুভ হোক । সবাইকে জানাই ঈদ মোবারক ||
|| যেদিন দেখব ঈদের চাঁদ, খুশি মনে কাটবে রাত
নতুন সাজে সাজব আজ, আনন্দে কাটবে সারাদিন
ঈদ মোবারাক ||
|| আর মাত্র কয়েক দিন, আসছে সবার খুশির দিন
নতুন জামা কিনে নিন, সময় নেই বেশি দিন, দাওয়াত রইল অগ্রিম
আসবেন কিন্তু ঈদের দিন, অপেক্ষায় থাকবো সারাদিন ||
|| দূরের মানুষ আসুক কাছে, কাছের জন থাকুক পাশে
মন ছুটে যাক তোমার টানে, নয়া চাদের আগমনে, কাটুক খুশি সবার মনে
ঈদ বোবারক ||
|| ঈদ মানে হাসি, ঈদ মানে আশা
ঈদ মানে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা
ঈদ মানে দুর আকাশে মিষ্টি চাঁদের হাসি
ঈদ মানে সুখ সাগরে সবাই মিলে ভাসি
ঈদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা ||
|| আকাশের নীল দিয়ে, হৃদয়ের ছোঁয়া দিয়ে, সবুজের অরণ্য দিয়ে, সাগরের গভীরতা দিয়ে তোমাকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা ||
|| কোন দূরেতে আছিস বন্ধু আয়না আমার কাছে, আজকের দিনে তোকে আমার পরছে খুব মনে । ঈদ মোবারক ||
|| তোর ইচ্ছাগুলো উড়ে বেড়াক পাখনা দুটি মেলে
দিনগুলি তোর যাকনা কেটে এমনি হেসে খেলে
অপূর্ণ না থাকে যেন তোর কোন সুখ, এই কামনায় ঈদ মোবারক ||
|| ঈদের দাওয়াত তোমার তরে, আসবে তুমি আমার ঘরে
কবুল করো আমার দাওয়াত, না করলে পাবো আঘাত
ঈদ মোবারক ||
|| পড়েছে আজ চাঁদের নজর, তাইতো পেলাম ঈদের খবর
হাসছে চাঁদ আজ জুড়ে আকাশ,সবাই পেলো ঈদের বাতাস
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা ||
|| কিছু কথা অব্যাক্ত রয়ে যায়, কিছু অনুভূতি মনের মাঝে থেকে যায়
কিছু স্মৃতি নিরবে কেদে যায়, শুধু এই একটি দিন সব ভুলিয়ে দেয়
ঈদ মোবারক ||
|| আনন্দের এই সময় গুলো, কাটুক থেমে থেমে
বছর জুড়ে তোমার তরে, ঈদ আসুক নেমে ||
|| নতুন পোশাক পরে নিও, বেশি করে ঈদের সেলামী নিও
সেমাই খেও পেট ভরে, ঘুরাফেরা করো মন ভরে
ঈদ মোবারাক বলো প্রাণ খুলে ||
|| সোনালি সকাল, রোদেলা দুপুর, পরন্ত বিকেল, গুধোলী সন্ধা, চাদণি রাত
সব রঙ্গে রাঙ্গিয়ে থাক আপনার সারাটি বছর, সারাটি জীবন
এই কামনায় ঈদ মোবারাক ||
|| আজ দুঃখ ভুলার দিন, আজ মন হবে যে রঙ্গিন
আজ প্রান খুলে শুধু গান হবে, আজ সুখ হবে সিমাহীন
তার একটাই কারন, আজ যে ঈদের দিন । ঈদ মোবারাক ||
||কোন ফুল দিয়ে নয়, কোন মালা দিয়ে নয়
চোখের পানি দিয়ে নয়, কোন গানের সুর দিয়ে নয়
শুধু হৃদয়ের গভীর অনুভূতি দিয়ে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা ||
|| রঙ লেগেছে মনে মধুর এই খনে
তোমায় আমি রাঙ্গিয়ে দিবো ঈদের এই দিনে ||
|| বাঁকা চাঁদের হাসিতে, দাওয়াত দিলাম আসিতে
আসতে যদি না পারো, ঈদ মোবারক গ্রহন করো ||
|| ঈদ শুভেচ্ছা রাশি রাশি, মন রেখো হাসি-খুশি
গোস্ত খেও বেশি বেশি, Miss করোনা মুরগি-খাসি
দাওয়াত রইল আমার বাড়ি, চলে এসো তাড়াতাড়ি ||
|| প্রার্থনা, যত্ন, ভালবাসা, হাসি এবং একে অপরের সাথে উদযাপন করার জন্য এই দুর্দান্ত দিনটির জন্য আল্লাহর শুকরিয়া জানাতে সকলে আমাদের হাত মেলান । ঈদ মোবারক ||
|| আমি আপনার সুখ এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি
ঈদ মোবারক