bangla moviemovies

বিউটি সার্কাস পাবলিক রিভিউ- Beauty Circus Public Review

বিউটি সার্কাস পাবলিক রিভিউ ০১  

 

বিউটি সার্কাস পাবলিক রিভিউ- Beauty Circus Public Review

বিউটি সার্কাস
-নো স্পয়লার
জয়া দ্যা আল্টিমেট বিউটি অব সিনেমা… ❤️❤️
সুমন ‘রঙলাল’ হয়ে মনে রঙ লাগিয়েছেন…. 🔥🔥
সিনেমার শুরুতেই জয়া আহসানের শ্রুতিমধুর কন্ঠের একটা ভয়েসওভার সিনেমার গল্প নিয়ে আমাদের এক রহস্যের দিকে ঠেলে দেয়। গল্পটা বানিয়াসান্তা নামক গ্রামে এক মাসের জন্য তাবু গেড়ে বিনোদনের পসরা সাজানো ‘বিউটি সার্কাস’ এর মালকিন অসাধারণ সুন্দরী বিউটিকে নিয়ে। একটি গ্রামে ধর্ম নিয়ে নানা কুসংস্কার, মেলা কমিটির নেতার ইনিয়েবিনিয়ে দেয়া নানা প্রস্তাব, এক বিবাহিত জমিদারের পরনারী আসক্তি আবার একই সাথে এক বখাটের নির্ভেজাল প্রেমের অনুভূতি সব মিলিয়ে বিউটির জীবনে ঘটতে শুরু করে নানা রকম ঘটনা। এরই সাথে বিউটির নিজস্ব এক গল্প যাতে মিশে আছে আপনজন হারানোর বেদনা। সবমিলিয়ে সার্কাসের এক নারীর জীবন সংগ্রামের গল্প নিয়েই মাহমুদ দিদারের এই অভিষেক সিনেমা।
দীর্ঘ কয়েক বছরের অপেক্ষার পর এই সিনেমার টিজার, ট্রেলার রিলিজের পর সাধারণ দর্শকদের মাঝে একটি আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। পরবর্তীতে গান এবং পোস্টার রিলিজের পর এই আগ্রহের মাত্রা আরো বাড়ে। ব্যক্তিগত ভাবে একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে এই সিনেমা নিয়ে আগ্রহের বেশ কয়টি কারন রয়েছে। যেমন প্রায় দেড়বছর পর দুই বাংলার জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত অভিনেত্রী জয়া আহসান সেলুলয়েডে হাজির হলেন ‘বিউটি সার্কাস’ এর বিউটি রূপে। জয়ার সাথেই ‘ঢাকা অ্যাটাক’ খ্যাত এবিএম সুমন ’রঙলাল’ ভূমিকার মধ্য দিয়ে ঢাকাই সিনেমায় ফিরলেন প্রায় পাঁচ বছর বিরতির পরে। সার্কাস এবং তার সাথে জড়িত মানুষের জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত এই সিনেমায় দেখা মিলেছে ফেরদৌস, গাজী রাকায়েত, শতাব্দী ওয়াদুদ, প্রয়াত হুমায়ূন সাধু এবং তৌকির আহমেদকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। টেলিভিশনের অন্যতম আলোচিত এবং দক্ষ নির্মাতা মাহমুদ দিদারের প্রথম সিনেমা হিসেবেও আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে প্রায় ছয় বছর ধরে নির্মানের নানা বাধাবিপত্তি পার করে আজ মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি নিয়ে।
তবে যে প্রত্যাশা এবং আগ্রহ নিয়ে এই সিনেমা দেখতে যাওয়া তার অনেকটাই পূরণ হয়েছে একথা বলতেই হচ্ছে। গল্প এক নারীর সংগ্রামের হলেও সার্কাসের মতো ক্যানভাসে সেটা চিত্রায়ণের প্রস্তুতি যে ছিলো বিশাল তা বোঝা গেছে এরেঞ্জমেন্ট দেখে। চেনা গল্পকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের পাশাপাশি চিত্রনাট্য এবং কিছু সংলাপ ভালো লেগেছে। কস্টিউম ডিপার্টমেন্ট ফুল মার্কস পাবেন। সাথে মেকআপ শিল্পীরাও প্রশংসার দাবিদার। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ছিলো মানানসই। চিরকুটের সুমীর গাওয়া গানটি মুহূর্তেই মন ভালো করে দেয়া অনুভূতি নিয়ে আসে। তবে ভিএফএক্স এবং কালার গ্রেডিংয়ে আরো ভালো করার সুযোগ ছিলো। হয়তো দীর্ঘ সময় ধরে সিনেমার কাজ চলার কারনে সিনেমায় এই সংমিশ্রণ এর ব্যাপারটা সেভাবে ভালো হয়নি যতোটা হওয়া উচিত ছিলো। সাউন্ডেও হালকা সমস্যা মনে হলো…
অভিনয়ে জয়া আহসান অবশ্যই নিজের স্ট্যান্ডার্ড মান বজায় রেখেছেন বরাবরের মতো। তার চরিত্রের মাঝে মিশে থাকা সংগ্রাম, দুঃখ, আশংকা, রাগ, ক্ষোভ সবকিছুই তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের দক্ষ এবং শক্তিশালী অভিনয়ের মাধ্যমে। অভিনেত্রী হিসেবে জয়া আহসান যে অনবদ্য এক নাম তা আবারো প্রমাণ হলো এই সিনেমার মাধ্যমে। তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে মনে হয়েছে এই সিনেমার সারপ্রাইজ প্যাকেজ হচ্ছেন এবিএম সুমন। এর আগের সিনেমায় পুলিশ অফিসার হিসেবে অ্যাকশন ভারিক্কি একটা ক্যারেক্টারের পরে এবার পুরোপুরি বিপরীত একটি ক্যারেক্টার ‘রঙলাল’ হিসেবে নিজের অভিনয় দক্ষতা বেশ ভালভাবেই প্রদর্শন করলেন এই মেধাবী তরুন। এই প্রথমবার জয়া আহসানের সাথে বাংলাদেশী কোনো বানিজ্যিক সিনেমার অভিনেতাকে বেশ ভালোই মানিয়ে গেছে বলে মনে হলো। এবিএম সুমনের লুক, বডি ল্যাংগুয়েজ, ডায়লগ ডেলিভারিতে সাবলীলতা সব মিলিয়ে বানিজ্যিক সিনেমার যথাযথ চিত্রনায়ক হিসেবে সামনে তাকে আরো কাজে লাগানো হবে বলেই কামনা। তৌকির আহমেদ, ফেরদৌস, গাজী রাকায়েত এবং শতাব্দী ওয়াদুদ তাদের নিজ নিজ জায়গায় ঠিকঠাক। প্রয়াত হুমায়ূন সাধু দর্শকদের মাঝে আলাদা ছাপ রেখেছেন। তবে সার্কাসের সাথে জড়িত প্রতিটা মেয়ে এবং ছেলে ছিলেন সাবলীল এবং বিশ্বাসযোগ্য। এটা তাদের মেকাপ, লুক এবং কিছু কিছু জায়গায় সংলাপ ডেলিভারির সময় সিনেমাটি বিশ্বাসযোগ্য ভাবে উপস্থাপন করেছে।
নির্মাতা মাহমুদ দিদার প্রথম সিনেমাতেই পুরোপুরি বাউন্ডারি না হাঁকালেও আউট হননি। বিলুপ্ত প্রায় আমাদের একটি ঐতিহ্যর উপর ভিত্তি করে এমন একটি কনটেন্ট উপহার দেবার জন্য এই মানুষটি প্রশংসা পাবেন নিঃসন্দেহে। সিনেমার মূল গল্পের সাথে জড়িয়ে আছে একটি গৌরবময় ঘটনা। সেটা নিয়ে কিছু না লেখাই শ্রেয়। দর্শক হলে যেয়েই সেটা প্রত্যক্ষ করলে আনন্দ পাবেন বলে মনে করি। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় এই সিনেমাটি শহরের দর্শকদের তুলনায় গ্রাম বা জেলা পর্যায়ের মানুষদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। কারন গ্রামের মানুষ এই সাব্জেক্টের সাথে রিলেট করতে পারবে বেশি। সুস্থধারার এই ব্যতিক্রমী গল্পের সিনেমা দেখে নিতে পারেন জয়া আহসান এবং এবিএম সুমনের অনবদ্য অভিনয়ের জোরে হলেও। পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার মতোই একটি সিনেমা ‘বিউটি সার্কাস’।
রিভিউ লিখেছেন- Afzalur Ferdous Rumon 

বিউটি সার্কাস পাবলিক রিভিউ ০২ 

মাস্টওয়াচ ‘বিউটি সার্কাস’
***********************
আমার আশ্চর্য ফুল, যেন চকোলেট, নিমিষেই
গলাধঃকরণ তাকে না ক’রে ক্রমশ রস নিয়ে
তৃপ্ত হই।
– বিনয় মজুমদার
সিনেমা হলো চকলেটের মতো একবারে গিলে ফেলা যায় না অল্প অল্প করে স্বাদ নিতে হয়। কোনো সংলাপ বাদ গেল না কিনা, কোনো জরুরি দৃশ্য বাদ পড়ল কিনা দৃষ্টি থেকে, আবহ সঙ্গীত কোথায় কতটুকু কীভাবে দেখা গেল সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হয়। ‘বিউটি সার্কাস’ শিল্পসম্মত সিনেমা যার স্বাদ পরতে পরতে নিতে হয়েছে। পরিচালনায় মাহমুদ দিদার।
‘সার্কাস’ গ্রিক থেকে ল্যাটিন হয়ে ইংরেজি ‘circus’ শব্দে পরিণত হয়েছে। আনুমানিক চৌদ্দ শতকে ইংরেজিতে এর ব্যবহার লক্ষ করা যায়। গ্রিক শব্দে এর অর্থ ‘রিং’। গোলাকারভাবে সার্কাসের প্যান্ডেল সাজানো হয়। এর প্রদর্শনের জন্য খোলামেলা উন্মুক্ত জায়গার দরকার পড়ে। গোলাকার জায়গাটিকে ‘রিং’ বলে আর এর তদারকির জন্য যারা থাকে তাদেরকে ‘রিংমাস্টার’ বলে। সার্কাসে যারা পারফর্ম করে তারা এক একজন জিমন্যাস্ট এবং পারফরম্যান্সের বিষয়গুলো জিমন্যাস্টিকসের অংশ। এগুলো প্রদর্শনের জন্য নানা খেলা দেখানো হয় যার মধ্যে দড়ি দিয়ে হেঁটে যাওয়া, রুমাল দিয়ে ভেলকি দেখানো, শারীরিক কসরত প্রদর্শন ইত্যাদি। নানা প্রাণিদেরকেও কাজে লাগানো হয় খেলা প্রদর্শনের জন্য। সার্কাসের শিল্পীরা নানা কৌশলে পারদর্শী হয় তারা এক একজন ‘ভাঁড়’ বা ক্লাউন হয়ে দর্শকের মনোরঞ্জন করে। বঙ্গদেশে ১৯০৫ সালে ‘দি লায়ন সার্কাস’ নামে প্রথম সার্কাস দল গঠিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জনপ্রিয় ছিল বগুড়ার মহাস্থানগড়ের ‘দি বুলবুল সার্কাস’, বরিশালের ‘দি রয়েল সার্কাস’, ফেনীর ‘দি সবুজ বাংলা সার্কাস’, সাতক্ষীরার ‘দি সুন্দরবন সার্কাস’, ঢাকার কেরানীগঞ্জের ‘দি সোনার বাংলা সার্কাস’। বর্তমানে চালু আছে ‘দি রাজমনি সার্কাস, দি গ্রেট রওশন সার্কাস’ সহ সরকার অনুমোদিত ২৫টি সার্কাসদল।
‘বিউটি সার্কাস’ ছবিতে ঐতিহাসিক সূত্রমতেই নামকরণ করা হয়েছে ‘দি বিউটি সার্কাস’। নারীকেন্দ্রিক নামে ছবির গল্প সার্কাসের পাশাপাশি নারীর গল্পও হয়ে উঠেছে।
ছবিতে সার্কাসের প্রদর্শনীগুলো ছিল অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। বিশাল প্যান্ডেলে শারীরিক কসরতের সাথে অন্যান্য খেলা প্রদর্শন করে দর্শকের মনোরঞ্জন দেখানো হয়েছে। সাধারণত জনগণকে দিয়ে অভিনয় করানো সহজ কাজ না কিন্তু এ ছবিতে সাধারণ জনগণের সার্কাসকেন্দ্রিক আবেগ, উচ্ছ্বাস ছিল স্বাভাবিক পর্যায়ের। ‘হৈ হৈ কান্ড রৈ রৈ ব্যাপার, জলেতে জিওল মাছ জমিনে সার্কাস’ এ জাতীয় প্রচারণার ভাষাগুলো চিত্তাকর্ষক ছিল নিঃসন্দেহে। সার্কাসের শিল্পীরা কেমন জীবনযাপন করে তার একটা চিত্রও আছে। তারা পালা করে বাংলা ছবি দেখে যা আমাদের নস্টালজিক করে দেবার মতো। ‘বিউটি সার্কাস’-এ দেখানো হচ্ছে সার্কাসে শিল্পীরা জনগণের মনোরঞ্জন শেষে নিজেরা টেলিভিশনে বাংলা ছবি দেখছে এবং জসিম-শাবানার ‘জিদ্দি’ ছবি দেখা গেছে টিভি পর্দায়। জয়া হুমায়ুন সাধুকে বলে-‘দেখ দেখ তোর পছন্দের নায়িকা।’ এটাও প্রমাণ করে তারা কোন ধরনের অভিনয়শিল্পীকে পছন্দ করত যেখানে শাবানাকে একজন সার্কাসশিল্পী আইডল মানে। এটা খুব ভালো ছিল।
জয়া আহসান প্রধান চরিত্রে ছবির। জয়া ‘বিউটি সার্কাস’-এ অগ্নিকন্যা। পর্দা কাঁপিয়ে দিয়েছে। একদিকে সার্কাস দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ অন্যদিকে সার্কাস টিকিয়ে রাখার জন্য সম্মুখ সমরে ঝাঁপ। ভাঙাগড়ার খেলায় একদম একশোতে একশো। দ্বিতীয় বলতে হয় রংলালের চরিত্রে এবিএম সুমনের কথা। জয়া আহসানের মতো একজন ক্লাস অভিনেত্রীর সাথে ন্যাচারালি অভিনয় করা অবশ্যই ভালো বিষয়। তার ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো চরিত্র এটাই হয়ে থাকবে অভিনয়ে, গেটআপে। তৌকীর আহমেদের চরিত্রটি মজার ছিল। নিজের অভিনয়ের পূর্ণ সক্ষমতা দেখিয়েছে গাজী রাকায়েত, তার চোখ যেন কথা বলে। শতাব্দী ওয়াদুদও তার সক্ষমতা দেখিয়েছে। ফেরদৌস নেগেটিভ রোলে ভালো ছিল। হুমায়ুন সাধু এখন একটা আবেগের নাম, যতটুকু স্পেস ছিল তার অভিনয়ে অসাধারণ।
গল্পের ভেতর আরেকটি গল্প আছে ‘বিউটি সার্কাস’-এ যা ছবিটির মাহাত্ম্য বাড়িয়েছে। ছবিটির গল্পে এ অংশটি গুরুত্ব রেখেছে বিশেষ করে সার্কাসকে যারা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে তাদের জন্য গল্পের এ অংশটা মেসেজ, এটা ভাবতে সাহায্য করবে সার্কাস দেখিয়ে ভালো কাজও করত এর সদস্যরা কিংবা তাদের জীবনেও ভালো কিছু গল্প থাকে।
ছবিতে গানের মধ্যে ‘নিরুদ্দেশ’ সেরা। এর বাণী, গায়কী মন ছুঁয়ে যায়। ‘বয়ে যাও নক্ষত্র’ ‘চিরকুট’ ব্যান্ডের সুমীর কণ্ঠে ভিন্নমাত্রা দেয়। লালন সঙ্গীত ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’-র ব্যবহারও ভালো ছিল। ছবির সিনেমাটোগ্রাফি প্রশংসনীয়। ধুলোমাখা শট, বৃষ্টির শট, সার্কাসের বিশাল প্যান্ডেল রাউন্ড করে দেখানো কিংবা ট্রলি শটগুলো দৃষ্টিনন্দন।
মাহমুদ দিদার ছোটপর্দায় আলো ছড়ানো নির্মাতা ছিলেন এখন সিনেমার পর্দায়ও আলো ছড়াবেন যার প্রথম পদক্ষেপ ‘বিউটি সার্কাস’। শিল্পসম্মত কাজ করা যার নেশা তার সিনেমার পথ চলাও এমনই হবে এটা বলা যায়।
আপাতত তাঁর ‘বিউটি সার্কাস’ মাস্টওয়াচ।
রেটিং – ৮/১০
রিভিউ লিখেছেন- রহমান মতি

বিউটি সার্কাস পাবলিক রিভিউ ০৩

সিনেমা – বিউটি সার্কাস।
অভিনয়ে – জয়া আহসান, ফেরদৌস আহমেদ, হুমায়ুন সাধু, তৌকির আহমেদ, এবিএম সুমন, গাজী রাকায়েত, শতাব্দী ওয়াদুদ সহ আরো অনেকে।
পরিচালনা – মাহমুদ দিদার।
প্রথম দিনের প্রথম শোতেই “বিউটি সার্কাস” সিনেমার পুরো গল্পটা আমার চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়ে উঠলো। আর এই সিনেমার গল্পটা দেখার পর আমার অনুভূতিগুলো ক্ষণিকের জন্য একরাশ মুগ্ধতার মাঝেই খুঁজে পেল তাদের নতুন গন্তব্যের ঠিকানা।
বর্তমানে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে একটা স্বস্তির হাওয়া বইতে শুরু করেছে। কারণ এখন বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে ভালো এবং মানসম্মত গল্পের সিনেমা নির্মাণ করা হচ্ছে এবং দিনকে দিন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের দর্শকের সংখ্যাটা বেড়েই চলেছে। আর এবার বহুল প্রতিক্ষিত সিনেমা “বিউটি সার্কাস” মুক্তি পাওয়ার মাধ্যমে যে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আরো একটু সমৃদ্ধ হলো সেটা তো নিঃসন্দেহে বলে দেয়ায় যায়।
একটা সময় সার্কাস নামের এই ছোট্ট শব্দটা বাঙালীর অস্তিত্বের সাথে মিশে থাকলেও এই সার্কাস এখন বাংলাদেশের মানুষ কিংবা বাঙালীদের জীবনের অতীতের মাঝে হারিয়ে গেছে। আর অতীতের সেই সার্কাসকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেই মাহমুদ দিদার “বিউটি সার্কাস” নামের এই সিনেমাটা নির্মাণ করেছেন। তবে সার্কাসকেন্দ্রিক এই সিনেমাটাই কখনো কখনো আবার একটা নারীকেন্দ্রিক সিনেমা হয়ে দর্শকদের চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়ে উঠছিল। কারণ সার্কাসের বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি একজন নারীর জীবন সংগ্রাম এবং তার জীবনের মাঝে রয়ে যাওয়া নানান রকমের প্রতিকূলতা আর প্রতিবন্ধকতাগুলোকেও দর্শকদের সামনে খুব নিখুঁতভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন নির্মাতা মাহমুদ দিদার।
“বিউটি সার্কাস” এর মাধ্যমে জয়া আহসানকে দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের কোনো সিনেমাতে অভিনয় করতে দেখা গেল। আর গুণী এই অভিনেত্রী তার চরিত্রটাকে পর্দায় এতোটাই সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন যে তার অভিনয় দেখে নিঃসন্দেহে যেকোনো দর্শকই মুগ্ধ হতে বাধ্য হবে। কখনো নিজের চরিত্রকে ভাঙা কিংবা কখনো আবার সেই চরিত্রটাকে নতুনভাবে গড়ার কাজটা জয়া আহসান খুব ভালোভাবে করতে পেরেছেন বলেই হয়তো তার অভিনয়ের সৌন্দর্যটা আমার মাঝে এতো বেশি মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। জয়া আহসানের পাশাপাশি প্রয়াত অভিনেতা হুমায়ুন সাধুও “বিউটি সার্কাস” সিনেমাতে দারুণ অভিনয় করেছেন। তবে আলাদাভাবে নিজের অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন অভিনেতা এবিএম সুমন। এবিএম সুমন “বিউটি সার্কাস” সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং তার অভিনয়ই একটা সময় তার চরিত্রটাকে পরিপূর্ণ করে তুলেছে। এছাড়াও ফেরদৌস আহমেদ, গাজী রাকায়েত, তৌকির আহমেদ কিংবা শতাব্দী ওয়াদুদ যতোক্ষণ পর্দায় ছিলেন ততোক্ষণই তারা দারুণ অভিনয় করে গেছেন।
“বিউটি সার্কাস” সিনেমার অসাধারণ গল্প কিংবা অভিনয়শিল্পীদের দারুণ অভিনয়ের পাশাপাশি এই সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফি, কালার গ্রেডিং কিংবা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কাজও ছিল বেশ মানানসই। “বিউটি সার্কাস” সিনেমাটা দেখার পর আমার মনে হয়েছে নির্মাতা মাহমুদ দিদার তার এই সিনেমার প্রত্যেকটা বিষয়কেই সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। আর সেকারণেই হয়তো এই সিনেমাটা আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে অনেক বেশি ভালো লেগেছে।
জীবনের কিছু কিছু গল্পের কাছে হয়তো কখনো কখনো রূপকথার গল্পগুলোও হার মেনে যায়। আর জীবনের সেই কিছু গল্পের মাঝেই কখনো কখনো এমন কোনো মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায় যে মানুষটার অস্তিত্বের মাঝেই হয়তো একটা সময় জীবনের সেই গল্পগুলো তাদের পরিপূর্ণতাটা খুঁজে পায়।
ঘাত-প্রতিঘাত, নানান রকমের প্রতিকূলতা আর প্রতিবন্ধকতা যখন একজন মানুষের অভ্যন্তরীণ সত্ত্বাটাকে চারপাশ থেকে আঁকড়ে ধরে তখনই হয়তো সেই মানুষটার জীবনের কোনো একটা গল্প তার রূপটাকে বদলে ফেলে। “বিউটি সার্কাস” সিনেমার গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতেও এমন একজন মানুষই রয়েছেন। তবে কি “বিউটি সার্কাস” সিনেমাটা ওই সার্কাসের ওপর ভিত্তি করেই নির্মিত হয়েছে নাকি এই সিনেমার গল্পের মাঝে অন্য কোনো চমক রয়েছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হলে আপনাদেরকে অবশ্যই “বিউটি সার্কাস” নামের এই সিনেমাটা দেখতে হবে।
উল্লেখ্য, মাহমুদ দিদার পরিচালিত এই সিনেমাটা কিন্তু এখন আপনাদের নিকটস্থ প্রেক্ষাগৃহেই দেখা যাচ্ছে।

রিভিউ লিখেছেন- Sazzad Ur Rahman 

Back to top button