priyojanala blog

মিনার ও মেঘার কাছে আসার গল্প Kache Ashar Golpo

মিনার ও মেঘার কাছে আসার গল্প Kache Ashar Golpo
কাছে আসার গল্প

ঘড়িতে সকাল ৯ টা, আজকে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেল মিনারের, সারা রাত ঘুম হই নি নানা রকম চিন্তা ঘুমের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে  ভোর বেলা ঘুমের জয় হয়। 
কি সুন্দরই চেহারা  ছিল মিনারের একটানা সেইভ না করায় কেমন যেন কবি কবি ভাব চলে আসছে। অযত্নে গুছালো চুলগুলো লালচে হয়ে আছে, চোখের নিচে কালো ছাপ অনুমান করে দেয় ছেলেটি অনেকদিন ধরেই নিজের সাথে যুদ্ধ করছে, কোন এক দোটানা হয়তো কোন এক আক্ষেপ অথবা কোন কিছু হারানোর যন্তনা সারা মন দেহ গ্রাস করে আছে। 

কোন রকম ড্রেসটা পরে টেবিলের উপরে রাখা কিছু কাগজপত্রের ফাইল নিয়েই বের হয়ে গেল ভার্সিটির উদ্দেশ্যে,  বোঝা যাচ্ছে লাইফে কঠিন এক সিদ্ধান্তের পথে মিনার। 

রিক্সায় উঠে একটা দীর্ঘশ্বাস,  বন্ধু মেহেদীর ফোন-
মেহেদী: দোস্ত ব্যাপারটা আরেকটু ভেবে দেখলে হয় না? 
মিনার: দোস্ত কথা বলতে ভাল লাগছে না পরে কথা হবে। ( ফোন কেটে দিলো) 
মিনার সিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র,  ভার্সিটির মেধাবী ছাত্র প্রতি সেমিস্টার চোখ জুড়ানো সিজিপিএ, এজন্যেই ভার্সিটি থেকে স্কলারশিপ হিসেবে টিউশন ফি মওকুপ হয়েছে। এই সুবিধার পরেও আজকে ভার্সিটি থেকে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে অন্য ভার্সিটি তে যাওয়ার জন্যেই বাসা থেকে নামা। তাহলে কি এই জন্যেই মিনারের চেহারার এই হাল নাকি অন্য কোন ঘটনা আছে যার যোগসূত্র আজকে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া? 

এসব জানতে অবশ্যই কয়েক  মাস পুর্বের ফ্লাসব্যাকে যেতে হবে যখন মিনারের বসন্তকালীন সেমিষ্টার শুরু হয় ও ভার্সিটিতে নতুন এক ব্যাচ ভর্তি হয়। 
ভার্সিটির সকলেই খুব ভাল জানে মিনারকে ভদ্র ও মেধাবী ছাত্র হিসেবে। 
সোহান, রাজু, মেহেদী ও রিমা এ চারজন মিনারের ভাল বন্ধু সারাদিন পড়াশুনার মাঝে এরাই মিনারের নিত্য সংগী।
রাজু ছিল খুব সাদাসিধে , মেহেদী ছিল খুব সাহসী ও চালু প্রকৃতির ছেলে , রিমা ছিল খুব রাগী একটা মেয়ে কারো সাথে একবার ঝগড়া বাধলে কোন ছাড়াছাড়ি নাই। মিনার পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো মেয়েদের সাথে তেমনটা মিশতো না ভার্সিটির মেয়েরা সেকারনেও মিনারকে খুব পছন্দ করতো। 
নতুন ব্যাচ ভার্সিটিতে আসাতেই দৃশ্যপট বদলে যেতে শুরু হলো, নবীনবরনের দিন ভার্সিটির গেটের সামনে তিন বন্ধু চা খাচ্ছিলো কেনই যেন সাদা পোষাক পরিহিত নতুন ভর্তি হওয়া একটি মেয়েকে দেখে বার বার চোখ ফেরাতে পারছিলো না মিনার।  এর মধ্যেই রাজু বলে উঠলো দোস্ত মেয়েটাকে খুব ভাল লাগছে আমার, সাদাসিধার মধ্যে চোখে কি সুন্দর একটা মায়া! 
মিনার কিছুটা অবাক হলো, রাজুকে কখনো কোন মেয়ের সম্পর্কে এই প্রথম কমেন্ট করতে শুনলো তাহলে বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটি সত্যিই ব্যতিক্রম!

ওই দিনের পর থেকেই রাজু পুরোপুরি মেয়েটার পিছনে ঘুরতে লাগলো মিনার ও মেহিদী রাজু কে সাপোর্ট দিতে লাগলো। ক্যাম্পাসে প্রতিদিনের কাজ হলো রাজু ওই মেয়ের পিছনে ঘুরবে আর  মিনার ও মেহেদী রাজুর পিছনে পিছনে ঘুরবে, ওরা দুজন অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলো রাজুকে যে এই মেয়ে তোকে মে বে লাইক করে না সেরকম কোন রেসপন্স পাচ্ছি না! রাজু একদিন তো মেহেদীর হাতে পায়ে ধরতে লাগলো তার হয়ে মেয়েটিকে প্রোপোস করে দেয়ার জন্যে। মেহেদীও একদিন রাজি হয়ে গেলো যে সরাসরি মেয়েটাকে বলে দিবে। একদিন মেহেদী একাই মেয়েটার সাথে কথা বলতে গেলো। ওই প্রথম মেয়েটির নাম জানা গেল , মেয়েটির নাম মেঘা,  মেহেদী ভাবলো ক্যাম্পাসের অন্য মেয়েদের মত স্মার্ট নয় সুতরাং কথা বার্তায় মনে হয় আনস্মার্ট কিছুই থাকবে। অবাক করা বিষয় মেহেদী মেঘাকে ডাকতে তাকে তুমি সম্বোধন করে ফেললো মনে হলো ক্যাম্পাসের কোন বড় আপু হবে! মেহেদী একটু অবাক হল সাথে রাগ ও লাগলো যে আমাদের চেয়ে ৩ বছর এর জুনিয়র এভাবে তুমি বলছে, কি সাহস! যাই হোক রাজুর জন্যে মেনে নিলো এবং সরাসরি বলেই দিলো যে রাজু তোমাকে খুব পছন্দ করে, মেয়েটি হুট করে বলে ফেললো আমি অন্য কাউকে ভালবাসি! এমন ভাবে কথাটা বললো মেহেদী অবাক হয়ে মেয়েটির দিক তাকিয়ে রইলো কোন দিন এভাবে জোর দিয়ে কোন মেয়েকে বলতে শুনে নি ! মেহেদী জিজ্ঞাস করলো -কাকে ভালবাসো? মেয়েটা স্পষ্ট জানিয়ে দিলো যে আপনার বন্ধুকে। 

মেহেদী পুরাই থ! কোন বন্ধু কিসের বন্ধু কি বলে মেয়েটা। মেঘা সরসরি বলে দিলো মিনার কে ভালবাসি! 
মেহেদী হাসবে না কান্না করবে নাকি রাগ করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না  , একদিকে মিনার কে সরাসরি নাম ধরে সম্বোধন অন্য দিকে বলে ওরে ভালবাসে! কি মেয়েরে বাবা!! 
মেহেদীর মুখে কিছু বলার ভাষা নাই কি বলতে আসলো আর কি হলো, এক দৌড়ে মিনার ও রাজুর কাছে, সব খুলে বলায় রাজু ও মিনার এর মুখ ছোট হয়ে গেল! মিনারের মাঝে ভয় ঢুকে গেলো একটা মেয়ে তো দেখছি আমাদের বন্ধুত্ব শেষ দিয়ে দিবে! রাজু হালকা মন খারাপ করলেও যেহেতু মেয়েটি মিনার কে পছন্দ করে সে ক্ষেত্রে হাঁসি মুখেই মেনে নিলো কিন্তু মিনার ওই মেয়েটাকে পছন্দ করলেও বন্ধুদের এমন পরিস্থিতে সরাসরি না বলে দিলো। মেয়েটা প্রতিদিনই মিনার কে কিছু বলার জন্যে ঘুরতে লাগলো কিন্তু বন্ধুদের জন্যে সুযোগ পাচ্ছিলো না, মেয়েটার এমন ঘোরাঘুরি পুরো ক্যাম্পাস জেনে গেলো সকলেই পিছনে সমোলচনা করতে লাগলো যা মিনার ও তার বন্ধুদের ভাল লাগছিল না। 

একদিন রাজু ও মেহেদী বসে ছিল ক্যাম্পাসে মেঘা তাদের কাছে এসেই বলে বসলো, তোমাদের বন্ধু মিনার কে ভার্সিটি শেষে দেখা করতে বলিও তো! 
রাজু ও মেহেদী তো ক্ষেপে আগুন একটা জুনিয়র মেয়ে এসে কিনা তুমি  বলে ডাকছে! 
রাজু ও মেহেদী সরাসরি মিনার এর কাছে গিয়া ঝগড়া বাধিয়ে দিলো , ওদের দাবি মিনার মেয়েটিকে এই সাহস জোগানোর জন্যে দায়ী , মিনার কেন ওই মেয়েটার এসব পাগলামী সহ্য করছে এটাও পছন্দ নয় এদের।
মিনার কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না মেয়েটার উপর কিছুটা দুর্বল থাকলেও বন্ধু ক্যাম্পাস ও পড়াশুনার জন্যে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। 
দেখা করে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলো মিনার, দেখা করা মাত্র মেয়ের প্রথম কথা ছিল , আপনি নাকি প্রেম করেন?
মিনার হুট করে এমন প্রশ্নের মুখে পরবে বুঝতে পারে নি, সরাসরি জিজ্ঞেস করে ফেললো কে বললো আপনাকে? 
মেয়েটার সহজ উত্তর, আপনার বান্ধবী  রিমা বলছে ! মিনার আর কোন কথা বলার ভাষা পেল না  মেঘার কথাই সত্য ভেবে রিমার কাছে ছুটে গেলো এক কথায় রিমার সাথে ঝগড়া শুরু করলো, ঝগড়ার এক পর্যায় মিনার বুঝতে পারলো মেয়েটি হয়তো কোন কথা খুজে পাই নি তাই উলটা পালটা বলে ফেলছে কিন্তু ঝগড়া করতে এসে আরেকটা জিনিস অবাক হলো যে মিনার এর পক্ষে কোন বন্ধুরা নেই সকলেই মিনার কে দোষারপ করতে লাগলো যে মিনারের জন্যেই তাদের ব্যাচ কে জুনিয়ররা সম্মান দেয় না! এক কথায় বন্ধুদের সম্পর্কে একটা ভাঙ্গন ধরে গেলো। রিমাও মেঘার সাথে মিট করে সকলের সামনে অপমান করে দিলো যা দেখে  মিনারের মন আরো বেশী খারাপ হয়ে গেলো। এমনি তে পরীক্ষার পড়াশুনার চাপ আরেকদিকে বন্ধুদের সাথে এমন সম্পর্ক অন্যদিকে মেঘা, কেন যেন পড়াশুনা ও খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ হয়ে গেল, বার বার কেন যেন মেঘার অশ্রুসিক্ত মুখটা মনে পরতে লাগলো।

মিনার যে কখন মেঘাকে ভালবেসে ফেলছে নিজেও বুঝতে পারে নি। কিন্তু নিয়তী হয়তো পক্ষে নয়। কিছুদিন পরে বন্ধুদের সাথে মোটামুটি চলাচল শুরু হলো । দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারী সকলের মিড টার্ম ছিলো, পরীক্ষার হলে ঢোকার পুর্বেই এক বক্স চকলেট নিয়ে হাজির মেঘা! মিনারের সাথে তার বন্ধুরা তাই কি করবে বুঝতে পারলো না হাসিমুখে চকলেট বক্সটি নিবে নাকি বন্ধুদের কথা ভেবে  না করে দিবে কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না, এই দোটানার মধ্যে চকলেট বক্সটা হাতে নিয়ে ফেলে দিলো কিছু যে বলবে তার কোন ভাষা ছিল না , সেদিনের মিনারের চোখের জল কেউ দেখতে পেলো না , মেঘার কি হলো বা কি রিয়াক্ট করলো তাও পিছনে তাকিয়ে দেখলো না কেউ। মন খারাপ নিয়ে পরীক্ষাগুলো শেষ করলো। সব ভেবে চিনতে দেখলো এভাবে ক্যাম্পাসে থাকা সম্ভব না, দিনে দিনে বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক খারাপ হবে সাথে পড়াশুনার খারাপ হচ্ছে সাথে মেঘার জন্যেও কষ্ট হচ্ছে । সিদ্ধান্ত একটাই ভার্সিটির ক্রেডিট ট্রান্সফার করে অন্য ভার্সিটিতে চলে যাওয়া। 

রিক্সায় ভার্সিটি যেতে যেতে সব মনে পরে গেলো মিনারের, হঠাত স্কুল জীবনের বন্ধু রাফির ফোন। 
রাফির সাথে মিনারের ৪-৫ বছরে কোন যোগাযোগ নেই এমন কি মোবাইল নম্বর ও ছিল না, রাফি মিনারের কোন এক বন্ধুর কাছ থেকে ওর নাম্বার নিয়ে ফোন দিলো,  স্কুলে মিনারকে সবাই বাবু বলে ডাকতো তাই রাফি মিনার কে বাবু বলেই সম্বোধন করলো । রাফি মিনারের কাছে একটা সাহায্য চাইলো, রাফির এক কাজিন মিনারের ভার্সিটিতে নাকি পড়ে যে এবার মিড টার্মে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেনি  তাই ভার্সিটি থেকে অভিবাবক খবর দিতে বলছে, রাফির কাজিন খুব ভাল ছাত্রী তার বাবা মা শুনলে সমস্যা হবে , তাই যেহেতু মিনার সিনিয়র তাই তার কাছে সাহায্য চাইলো যাতে কিছু একটা করতে পারে, এমনি মিনার আজকে ভার্সিটি ছাড়ার জন্যে যাচ্ছে তার মধ্যে রাফি অনুরোধ করলো তার কাজিন এর জন্য সুপারিশ করতে, যাই হোক যেহেতু স্কুলের বন্ধু তাই মেনে নিলো যে দেখি কি করা যায়, তার কাজিন কে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বাবু নামের এক সিনিয়র ভাইয়ের জন্যে অপেক্ষা করতে বললো , মিনার কে রাফি বলে দিলো মুগ্ধতা নামে একটা মেয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অপেক্ষা করবে। 

মিনার ভার্সিটিতে ঢুকলো কেন যেন একটা বুকের মধ্যে ব্যাথা অনুভব করতে লাগলো কাকে যেন খুজতে লাগলো চারপাশে, মনে হতে লাগলো কেউ একজন হুট করে সামনে এসে দাঁড়াবে লাজ লজ্জা ভুলে তার চোখের দিক তাকিয়ে হাসতে থাকবে, এসব ভেবে ভেবে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে গেলো, একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে সাদা ড্রেস দাঁড়ানো , পিছন থেকে বোঝা যাচ্ছে না কে! 
মিনার পিছনে থেকেই ডাক দিলো  -হেলো, আপনি মুগ্ধতা?  
মেয়েটি ঘুরে দাড়ালো যা দেখে মিনার পুরাই থ! এ তো মেঘা! তার মানে কি মেঘাই মুগ্ধতা? হ্যা তাই হলো মেঘাও বুঝতে পারি নি বাবুই মিনার হয়তো তাহলে এভাবে আর সামনে এসে দাড়াতো না! 
মিনার বুঝে গেল কেন মেঘা মিড টার্ম দেই নি, সেদিনের ঘটনার পরে মেঘা আর পরিক্ষার হলেই আসে নি! 
মিনার কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না, আরেক দিকে মেঘা মিনার কে দেখে অবিরত কাদতেই লাগলো, আর একটা কথাই বললো -একি অবস্থা হয়েছে তোমার!  
এই কথাটায় এমন একটা মায়া ছিল মিনারের মনে হত লাগলো মেঘার সাথে তার যুগ যুগ ধরে ভালবাসা ছিল, মিনার কি করবে বুঝতে পারলো না , দুই হাত দিয়ে মেঘার চোখের জল মুছিয়ে দিলো সাথে সাথে হাতে থাকা ভার্সিটি বদলীর সকল কাগজপত্র ছিড়ে ফেলে দিলো। 
Back to top button