বাংলাদেশে শীতকালে বেড়ানোর ৫ টি জনপ্রিয় স্থান
Top 5 Tourist Places in Bangladesh.
ষড়ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। প্রতি বছরই গ্রীষ্ম, বর্ষার পর কুয়াশার চাঁদর জড়িয়ে আসে শীত। শীতকাল মানেই বছর শেষ ঘুরাঘুরি শুরু। এই শীতকালীন সময়ে ভ্রমণপ্রিয় মানুষ শুরু করে তাদের ভ্রমণ পথযাত্রা। ভ্রমণ করার জন্য শীতকাল বছরের সেরা সময় এবং অন্যান্য সময়ের চেয়ে অত্যন্ত সুবিধাজনক। তাই ভ্রমণপিপাসুরা তাদের ভ্রমণ পিপাসা দূর করতে শীতকালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়ায়। যারা সারা বছর ব্যস্ত থাকেন চাকরি কিংবা অন্যান্য কাজের সূত্রে, তাঁদের অনেকেই বছরের এই শেষ সময়ে, শীতকালে ছুটি পেয়ে থাকেন। সেই ছুটিতে ঘোরাঘুরিরও পরিকল্পনা থাকে অনেকের। এছাড়াও শীতকালীন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যাদের আকর্ষণ করে তারা এই সময়টাতে বেড়িয়ে পড়েন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। আপনি যদি শীতকাল পছন্দ করেন এবং শীতকালে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন তাহলে আপনার জন্য রয়েছে বাংলাদেশের পাঁচটি জায়গা যা শীতকালের ভ্রমণের জন্য সেরা। চলুন জেনে নেই শীতকালে বেড়ানোর ৫ টি জনপ্রিয় স্থান সম্পর্কে।
১. সাজেক ভ্যালি।
সাদা তুলোর মত ভেসে বেড়ানো মেঘের রাজ্যে, পাহাড়ের দেশে ঘুরে বেড়াতে চান? হারিয়ে যেতে মনরোম অকাল্পনিক সুন্দর প্রাকৃতিক নিসর্গে? তবে সেটা নিজের দেশেই বিরাজমান রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে। বর্তমানে ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান এই সাজেক ভ্যালি যেটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। সূর্যাস্ত কিংবা সূর্যোদয়, বিকেল কিংবা দুপুর সাজেক এর অসাধারণ সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে। সূর্যের আলো কিংবা মেঘের খেলা অথবা সন্ধ্যার আকাশে হাজার হাজার তারার অমায়িক সৌন্দর্য আপনার চোখ জুড়াবে। ভাগ্য ভালো থাকলে এবং আকাশ পরিষ্কার থাকলে দেখা পেয়ে যেতে পারেন মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথের। আশ্চর্যজনক হলেও একমাত্র সাজেকেই দেখতে পাবেন তিন রকমের প্রাকৃতিক রূপের সান্নিধ্য। দেখা পাবেন সাজেকের অন্যতম আকর্ষন কলাংক পাহাড় এবং আদিবাসীদের সহজ সরল জীবনযাপন।
যেভাবে যাবেন সাজেক ভ্যালি :
ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি খাগড়াছড়ি দীঘিনলা। খাগড়াছড়ি থেকে জীপগাড়ি/চান্দের গাড়ি করে সাজেক ঘুরে আসা যায়। জিপ গাড়ি কিংবা চান্দের গাড়ি যাওয়া-আসা মিলিয়ে ভাড়া ৮০০০-১০,০০০ টাকা। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার।
২. সেন্ট মার্টিন দ্বীপ।
দারুচিনি দ্বীপ,নারিকেল জিঞ্জিরা কিংবা সেন্টমার্টিন। প্রায় সকলের কাছেই পরিচিত জায়গাটি। বঙ্গোপসাগরের এক ছোট্ট একটি প্রবাল দ্বীপ তবে অবিরাম সৌন্দর্য্যে পরিপূর্ণ। এটি দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ যেটি শীতকালীন সময়ে ভ্রমণের জন্য আদর্শ জায়গা। শীতকালে সমুদ্র তুলনামুলক স্থির এবং পরিবহন ব্যবস্থা অনুকূলে থাকে যার ফলে ভ্রমণ করা সুবিধাজনক হয়। পুরো বৈচিত্রতার খনি দ্বীপটি আয়তন ১৬ বর্গ কিলোমিটার যেখানে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক এসে ভিড় জমায়। সাগরের হালকা নীল রঙের নোনা পানির জলরাশির মাঝে ছড়িয়ে আছে প্রবাল পাথর, সৈকতে সারি সারি নারিকেল গাছের এক কোনায় সূর্যাস্ত দেখার অবিরাম সৌন্দর্য সব মিলিয়ে এক চোখ জুড়ানো দৃশ্য। ভ্রমন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণের এক অসম্ভব সুন্দর জায়গায়। যেখানে ঘুরে আসা একরকম বাঞ্ছনীয়।
যেভাবে যাবেন সেন্ট মার্টিন দ্বীপ:
সেন্টমার্টিন যেতে হলে প্রথমে কক্সবাজার জেলার টেকনাফে যেতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি টেকনাফ যাওয়া যায়। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। ১০-১২ ঘণ্টার এ ভ্রমণে ভাড়া বাস ও ক্লাস অনুযায়ী সাধারণত ৯০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে।
৩. শ্রীমঙ্গল, সিলেট।
শীতকালে বেড়ানোর একটি অন্যতম স্থান হচ্ছে সিলেটের শ্রীমঙ্গল। পরিবার পরিজন নিয়ে পাহাড়, সবুজের সমরোহ এবং চা বাগানের মনোরোম পরিবেশে হাড়িয়ে যেতে পারেন সিলেট মৌলভিবাজারের শ্রীমঙ্গল জেলায়। কুয়াশায় শিশির ভেজা পাহাড়ি বনভূমি গাছগাছালির আপনার ক্লান্তি দূর করবে। বাইক্কা বিল, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হামহাম জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, চা জাদুঘরসহ আরও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে শ্রীমঙ্গল জেলায়। স্বাদ নিতে পারবেন নীলকণ্ঠের সাতরঙা চায়ের। এছাড়াও সময় থাকলে দেখে নিতে পারেন আদিবাসীদের বাসভূমি, খাসিয়া পল্লী, পাহাড় ঘেরা টিলা ইত্যাদি।
যেভাবে যাবেন শ্রীমঙ্গল:
পছন্দমত সময়ে কোন একটি ট্রেন করে শ্রীমঙ্গল আসতে পারেন সহজেই। ট্রেনের টিকেটের ভাড়া শ্রেণী ভেদে ১৮৫ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালি থেকে হানিফ, শ্যামলী, বিআরটিসি, এনা ইত্যাদি পরিবহনের নন-এসি ও এসি বাস প্রতিদিনই শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
৪. নীলগিরি, বান্দরবান।
বাংলাদেশে থেকে দার্জিলিং উপভোগ করতে চান? তবে ঘুরে আসুন মেঘ এবং দিগন্ত জুড়ে পর্বতমালার অতুলনীয় সৌন্দর্যের লীলাভূমি নীলগিরি বান্দরবান। বান্দরবান জেলা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পার্বত্ব এলাকাটি। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর এবং শৃংখল পর্যটন কেন্দ্র যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। যতদূর চোখ যায় সব পাহাড় এবং মেঘ সব এক হয়ে একাকার করে। সারি সারি পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে আকাশ পরিষ্কার থাকলে দেখা পাবেন বগালেকের, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া কেওক্রাডং, চট্টগ্রাম বন্দর ও সাঙ্গু নদী।চট্টগ্রাম বন্দর ও সাঙ্গু নদী। বিভিন্ন রিসোর্ট এবং পাহাড় ঘেরা এলাকায় অনায়েসে পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন বাংলাদেশের দার্জিলিং ক্ষেত নীলগিরিতে।
যেভাবে যাবেন নীলগিরি:
জনপ্রতি এসব বাসের ভাড়া যথাক্রমে নন এসি ৫৫০ টাকা ও এসি ৯৫০-১৫০০ টাকা। ঢাকা থেকে বাসে বান্দরবান যেতে সময় লাগে ৮-১০ ঘন্টা। ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম গামী সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিতা, মহানগর গোধূলি এইসব ট্রেনে করে চট্রগ্রাম যেতে পারবেন।
৫. সুন্দরবন।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল হচ্ছে সুন্দরবন। শীতকালীন সময়ে প্রাকৃতিক নিসর্গ, বৈচিত্রময় প্রানীকূল এবং সম্পদে ভরপুর এই সুন্দরবনে ঘুরে আসতে পারেন।তবে সুন্দরবনের আছে নিজস্ব নীরবতা। কিন্তু একদম পশু–পাখি দেখবেন না, বিষয়টা তা নয়। চিত্রাহরিণ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বানর, গুইসাপ, বন্য শূকর এ প্রাণীগুলো প্রায়ই দেখা যায় সুন্দরবনে। চিত্রাহরিণ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বানর, গুইসাপ, বন্য শূকর এ প্রাণীগুলো প্রায়ই দেখা যায় সুন্দরবনে।
যেভাবে যাবেন সুন্দরবন:
আর খুলনা থেকে ছেড়ে যাওয়া শীপ মোংলা হয়েই সুন্দরবনে প্রবেশ করে। ঢাকা থেকে খুলনা বাসে বা ট্রেনে সরাসরি যাওয়া যায়। গুলিস্তান, সায়দাবাদ ও গাবতলি থেকে খুলনা যাবার নন এসি বাসের ভাড়া ৫০০-৫৭৫ টাকা ও এসি বাসের ভাড়া ৭৫০-১৩০০ টাকা।
সুপ্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না। এরপর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।
আমাদের প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে লাইক ও শেয়ার করুন এবং অন্যদের জানার সুযোগ করে দিন ।
✍(প্রিয়জানালা) – www.facebook.com/priyojanala