বাংলা ব্লগ – সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই

সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব তাহার উপরে কোনো জীবকে সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেননি। বিশেষ গুণাবলি থাকলে কোনো জিনিসকে আমরা অন্য জিনিস থেকে আলাদা করি আর তার সমতুল্য কিছু না পেলে তাকেই আমরা শ্রেষ্ঠ বলি। সৃষ্টিকর্তা বিশে ষ গুণাবলী দিয়ে মানুষকে বিশেষায়িত করেছেন যা মানুষকে সৃষ্টির সেরা বানিয়ে দিয়েছে।
জ্ঞান, বুদ্ধি, বিচার ক্ষমতা,আচার-আচরণ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি বিশেষ উপাদান দিয়ে তারা সব জীব থেকে আলাদা। ইতিহাসের সূচনা লগ্ন থেকে উন্নতির চরম শিখরে পৌছার মধ্য দিয়ে যুগে যুগে মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করেছে।
আলোর পাশেই অন্ধকারের বসবাস। মানুষের এতো গুনের পাশে কি কোনো ডার্ক চিহ্ন নেই? বিষয়টা একেবারেই এরকম নয়। ইতিহাসের কাল পাতা টেনে না ধরলেও বর্তমান সমাজের চিত্র দিয়েই বোঝা যায় যে মানুষ শ্রেষ্ঠ জাতি হওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। আসলেই কি তাই? তাহলে কি এমন আছে যা মানুষ থেকেও এগিয়ে গেছে? কেমন হয় যদি বলা হয় “সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপর টাকা”? তিক্ততা প্রকাশ প্রায় নাকি চির সত্যতা? আমার কোনো ইচ্ছায় নেই কবি বড়ু চন্ডিদাসের বাণী বদলে ফেলার। শুধু ধারনা করে নিলাম আর কি যে মানুষ টাকার মূল্য দিতে গিয়ে,টাকা হাতে পেয়ে,টাকার গড়িমা দিয়ে নিজেদেরকে কিভাবে “ক্লাস বেইজড” সুসাইটি বানিয়ে ফেলেছে। মানে টাকাকে সবার উপরে জায়গা দিয়ে ফেলেছে। এখানে একটু অংক কষে নেওয়া যাক তাহলে বিখ্যাত মানবিক বাণী ও বদলাবে না, আবার বিষয়টাও পরিষ্কার করা যাবে। ধরা যাক, মানুষ শ্রেষ্ঠ জাতি (আসলেও শ্রেষ্ঠই) তারপরে ধরা যাক মানুষ মানুষের মনুষত্বের জন্য শ্রেষ্ঠ। এখন মানে বর্তমানে মানুষের মনুষ্যত্ব টাকার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তাহলে মনুষত্য=টাকা বলা যায়। ফলস্বরূপ, মানুষের জায়গায় ও আমরা টাকা বসাতে পারি। কারণ মানুষ কে আজ টাকার পরিমাণের সাথেই পরিমাপ করা হয়। মানুষতো শ্রেষ্ঠই রইল শুধু তাদের মনুষত্য, জ্ঞান, মানবতা, ভালবাসা ইত্যাদি টাকার কাছে বিক্রি করে তাদের শ্রেষ্ঠ হওয়ার সেন্টিমেন্ট বদলে দিল। আজকের সমাজে যত অরাজকতা, রাহাজানি, হানাহানি ইত্যাদি অপরাধমূলক কাজ হয়ে থাকে তার মূলে রয়েছে টাকা, ক্ষমতার লোভ আর সোসাইল ক্লাস মেইনটেইন টেনডেনসি। আজ হইতো মানুষ জাতি ভুলেই গেছে লালন শাহের সেই মানবিক কবিতা :
গর্তে গেলে কূপজল কয়,
গঙ্গায় গেলে গঙ্গাজল হয়,
মূলে এক জল, সে যে ভিন্ন নয়,
ভিন্ন জানায় পাত্র-অনুসারে।
মানুষ সামাজিক স্ট্যাটাস দিয়ে, জাত ফাত দিয়ে নিজদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন শ্রেণীবিন্যাস, জাতিভেদ, বর্ণবাদ ইত্যাদি। যেই স্ট্যাটাস দিয়ে মানুষ নিজেদেরকে বিভিন্নভাবে সংঙ্গায়ন করছে আসলে তা মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নয়। লালন শাহের কবিতা তাকেই ইঙ্গিত করে যে আসলে বিভিন্ন পদ,জাত,বর্ণ ভিন্ন হতে পারে কিন্তু মানুষ কিন্ত একই থাকে। কিন্তু মানুষ সেই মানুষটাকেই ভুলে যায় টাকার গরমে। যেই গুনাগুন মানুষকে শ্রেষ্ঠ করেছে সেই গুনাগুন আাস্তে আস্তে তলিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক ক্ষমতা তথাকথিত টাকার গরম মানুষকে অমানুষ করে তুলছে। তাই বলেইতো বিখ্যাত লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল তার গল্প “মহাজাগতিক কিউরেটর” এ পিপড়া কে শ্রেষ্ঠ প্রাণী রুপে নির্বাচন করেছেন।
অন্ধকারের গল্প শোনিয়ে যাচ্ছি তাই বলে আলোকে ভুলে যাওয়া যায়না। এখনো সময় আছে সুশিক্ষা নিয়ে মানুষকে তার হারিয়ে ফেলা সেই গৌরব ফিরিয়ে আনার। যদিও এখনো হারানোর পথে আছে, চাইলেই গৌরবের দিকে ফিরা যাবে।
আমরা আশাবাদী যে আমরা অন্ধকারের পাশে থেকেই আলোকে বেঁছে নিব। যেমন কবি শেখ ফজলুল করিম মাত্র একশ বছর আগে বলেছেন,
কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক
কে বলে তা বহুদূর
মানুষের মাঝেই স্বর্গ নরক
মানুষতেই সুরাসুর।
মানুষের মাঝের এই স্বর্গ নরক থেকে আমরা স্বর্গের পথকেই বেঁছে নিব।
কবি বড়ু চন্ডিদাস সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই এই মহান মানবিক বাক্য দিয়ে এক বাক্যে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ও পরিচয় তুলে ধরেছেন।অনেক অরাজকতা, যুদ্ধ,রাহাজানির মধ্য দিয়ে মানুষ যখন তার ইতিহাস কলঙ্কিত করছিল তখন তিনি এই বাণী শুনিয়েছিলেন। আমরাও সেই কথায় বিশ্বাসী। ফজলুল করিম ও অনেক হতাশার মাঝেও মানবিক কবিতা দিয়ে আশার আলো দেখিয়েছেন। আমরা সেই আশার আলোয় আলোকিত হব।
লেখকঃ মাহমুদা তাবাসসুম
প্রিয়জানালা কনটেন্ট রাইটার
প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় –
প্রিয়জানালা মুক্তকথা বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব,প্রিয়জানালা সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
আমাদের ফেইসবুক পেইজ- প্রিয়জানালা