পৃথিবী সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন? Interesting things about Earth
![পৃথিবী সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন? Interesting things about Earth 1 পৃথিবী সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন? Interesting things about Earth](https://priyojanala.com/wp-content/uploads/2021/07/পৃথিবী-সম্পর্কে-আপনি-কতটুকু-জানেন.jpg)
অজানা পৃথিবী
মহাবিশ্বের অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্ক বিদ্যমান । বিশেষ করে সূর্য ও চাঁদের সঙ্গে এই গ্রহের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে বর্তমানে পৃথিবী নিজ কক্ষপথে মোটামুটি ৩৬৫.২৬ সৌর দিনে বা এক নক্ষত্র বর্ষে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে । পৃথিবী নিজ অক্ষের ৬৬.১/২ ডিগ্রি কোণে হেলে রয়েছে । এর ফলে এক বিষুবীয় বছর ৩৬৫.২৪ সৌরদিন সময়কালের মধ্যে এই বিশ্বের বুকে ঋতুপরিবর্তন ঘটে থাকে । পৃথিবীর একমাত্র বিদিত প্রাকৃতিক উপগ্রহ হল চাঁদ । ৪.৩৫ বিলিয়ন বছর আগে চাঁদ পৃথিবী প্রদক্ষিণ শুরু করেছিল । চাঁদের গতির ফলেই পৃথিবীতে সামুদ্রিক জোয়ারভাঁটা হয় এবং পৃথিবীর কক্ষের ঢাল সুস্থিত থাকে । চাঁদের গতিই ধীরে ধীরে পৃথিবীর গতিকে কমিয়ে আনছে । গ্রহের খনিজ সম্পদ ও জৈব সম্পদ উভয়ই মানবজাতির জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য । এই গ্রহের অধিবাসীরা প্রায় ২০০ টি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে সমগ্র গ্রহটিকে বিভক্ত করে বসবাস করছে । এই সকল রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক কূটনৈতিক , পর্যটন , বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক বিদ্যমান । মানব সংস্কৃতি গ্রহ সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণার জন্মদাতা । এই সব ধারণার মধ্যে রয়েছে পৃথিবীকে দেবতা রূপে কল্পনা , সমতল বিশ্ব কল্পনা এবং পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্ররূপে কল্পনা । এছাড়া একটি সুসংহত পরিবেশ রূপে বিশ্বকে কল্পনা করার আধুনিক প্রবণতাও লক্ষিত হয় ।
উৎপত্তিসম্পাদনা :
আকৃতিসম্পাদনা :
পৃথিবী দেখতে পুরোপুরি গোলাকার নয় , বরং কমলা লেবুর মত উপর ও নিচের দিকটা কিছুটা চাপা এবং মধ্যভাগ স্ফীত । একই কারণে বিষুব অঞ্চলের ব্যাস মেরু অঞ্চলের ব্যাসের তুলনায় প্রায় ৪৩ কি.মি. বেশি । ঘূর্ণনের ফলে , পৃথিবীর ভৌগোলিক অক্ষ বরাবর এটি চ্যাপ্টা এবং নিরক্ষরেখা বরাবর এটি স্ফীত । নিরক্ষরেখা বরাবর পৃথিবীর ব্যাস মেরু থেকে মেরুর ব্যাসের তুলনায় ৪৩ কিলোমিটার বৃহৎ । তাই , পৃথিবী পৃষ্ঠের উপর পৃথিবীর ভরকেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ দূরত্বটি হল নিরক্ষরেখার উপর অবস্থিত চিম্বরাজো আগ্নেয়গিরির সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি । জিওডেসি প্রকাশ করে যে , পৃথিবীতে সমুদ্র তার প্রকৃত আকার ধারণ করবে যদি ভূমি ও অন্যান্য চাঞ্চলতা যেমন ঢেউ ও বাতাস না থাকে , আর একে সংজ্ঞায়িত করা হয় জিওইড দ্বারা । আরো স্পষ্ট ভাবে পরিমাণ হবে গড় সমুদ্র পৃষ্টতলের উচ্চতায় অভিকর্ষীয় মানের সমান ।
বাসযোগ্যতাসম্পাদনা :
যে গ্রহে প্রাণী-জগৎ টিকে থাকতে পারে বসবাসযোগ্য বলা হয় , যদিও সেই গ্রহে প্রাণের সঞ্চার না ঘটে তাহলেও । পৃথিবীতে রয়েছে পানির প্রাচুর্য্য যা জটিল জৈব যৌগের পরস্পরের সাথে সংযুক্তি ও সংমিশ্রণের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে , একই সাথে বিপাক প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে । পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব , একই সাথে এর অক্ষীয় উপকেন্দ্রীকতা , কক্ষীয় ঘূর্ণনের গতি , অক্ষীয় ঢাল , ভূ-প্রাকৃতিক ইতিহাস , সহনীয় বায়ুমণ্ডল ও চৌম্বকক্ষেত্র সবগুলো একসাথে ভূ-পৃষ্ঠের সামুগ্রিক বর্তমান জলবায়ু ও পরিবেশ বজায় থাকার পিছনে কাজ করছে ।
জীবমণ্ডলসম্পাদনা :
জীবমণ্ডল হচ্ছে পৃথিবীর সমগ্র ইকোসিস্টেমগুলির যোগফল । এটিকে বলা যেতে পারে পৃথিবীর জীবনের এলাকা , একটি সংযুক্ত প্রক্রিয়া এবং বৃহত্তরভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত । অন্য কথায় পৃথিবীর বাইরের স্তরে অবস্থিত বায়ু , ভূমি , পানি ও জীবিত বস্তুসমূহের সমষ্টিকে জীবমণ্ডল বোঝায় । জীবনের অস্তিত্বের সঙ্গেই জীবমণ্ডলের সম্পর্ক । জীবমণ্ডলের বিস্তৃতি ওপর-নিচে ২০ কিলোমিটারের মতো ধরা হলেও মূলত অধিকাংশ জীবনের অস্তিত্ব দেখা যায় হিমালয় শীর্ষের উচ্চতা থেকে ৫০০ মিটার নিচের সামুদ্রিক গভীরতার মধ্যেই । এখানে জীবকুল ৪.১ বিলিয়ন বছর পূর্বে বসবাস শুরু করে । গ্রহের প্রাণী জগৎ একটি বাসযোগ্য বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলে । কখন কখনও এই সবগুলোকে একসাথে বলা হয়ে থাকে জীবমণ্ডল । ধারণা করা হয়ে থাকে পৃথিবীর জীবমণ্ডলের গঠন শুরু হয় প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে । এই জীবমণ্ডলটি বেশ কিছু বায়োম দ্বারা বিভক্ত , প্রচুর পরিমাণে একই ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণি।
প্রচুর পরিমাণে একই ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণি একই বায়োমে বসবাস করে । ভূমিতে মূলত বায়োমকে বিভক্ত করা যায় অক্ষাংশের পার্থক্য থেকে , সমুদ্রতল থেকে উচ্চতা থেকে এবং আর্দ্রতা থেকে । সুমেরু অঞ্চলের বা অ্যান্টারর্টিক বৃত্তের স্থলজ বায়োসের ক্ষেত্রে অধিক উঁচু অক্ষাংশে বা অত্যন্ত শুষ্ক এলাকায় প্রাণি ও উদ্ভিদ তুলনামুলকভাবে নেই বললেই চলে বা এগুলো হল বিরান অঞ্চল । প্রজাতির বৈচিত্র্য সবচাইতে বেশি পরিমাণ দেখা যায় নিরক্ষীয় অঞ্চলের আদ্রতাপূর্ণ নিম্নভূমিতে ।
কৃত্রিম উপগ্রহসম্পাদনা :
কৃত্রিম উপগ্রহ হলো মহাকাশে উৎক্ষেপিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত উপগ্রহ । এটা চাঁদের মতোই কিন্তু পার্থক্য কেবল এই যে চাঁদ প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত আর কৃত্রিম উপগ্রহ মানুষ তৈরি করেছে । জুন ২০১৬ এর হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীর কক্ষপথে ১,৪১৯ টি মানব কর্তৃক সৃষ্ট কার্যকরী কৃত্রিম উপগ্রহ ছিল । এছাড়াও সেখানে বর্তমানে আরো আছে সবচেয়ে প্রাচীন কৃত্রিম উপগ্রহ ভ্যানগার্ড-১ সহ ১৬,০০০ খন্ড অক্ষম উপগ্রহ এবং মহাকাশের জঞ্জাল । পৃথিবীর সর্ববৃহত কৃত্রিম উপগ্রহটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র ।
সৌরজগৎ ও গ্রহসমূহের চাকতি :
সৌরজগতের ভেতরে অবস্থিত সবচেয়ে পুরনো পদার্থের বয়স প্রায় ৪.৫৬ শত কোটি বছর । আজ থেকে ৪.৫৪ শত কোটি বছর আগে পৃথিবীর আদিমতম রূপটি গঠিত হয় । সূর্যের পাশাপাশি সৌরজগতের অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুগুলিও গঠিত হয় এবং এগুলোর বিবর্তন ঘটতে থাকে । একটি আণবিক মেঘ থেকে একটি সৌর নীহারিকা মহাকর্ষীয় ধসের মাধ্যমে কিছু আয়তন বের করে নেয় , যা ঘুরতে শুরু করে এবং চ্যাপ্টা হয়ে তৈরি হয় পরিনাক্ষত্রিক চাকতিতে , এবং এই চাকতি থেকেই সূর্য এবং অন্যান্য গ্রহের উৎপত্তি ঘটে । একটি নীহারিকাতে বায়বীয় পদার্থ , বরফকণা এবং মহাজাগতিক ধূলি থাকে । নীহারিকা তত্ত্ব অনুযায়ী সংযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অতিক্ষুদ্র গ্রহগুলি গঠিত হয় । এভাবে আদিম পৃথিবীটি গঠিত হতে প্রায় ১ থেকে ২ কোটি বছর লেগেছিল ।
চাঁদের গঠন নিয়ে বর্তমানে গবেষণা চলছে এবং বলা হয় চাঁদ প্রায় ৪.৫৩ বিলিয়ন বছর পূর্বে গঠিত হয় । একটি গবেষণারত অনুমানের তথ্য অনুসারে , মঙ্গল গ্রহ আকারের বস্তু থিয়ার সাথে পৃথিবীর আঘাতের পরে পৃথিবী থেকে খসে পড়া বস্তুর পরিবৃদ্ধি ফলে চাঁদ গঠিত হয় । এই ঘটনা থেকে বলা হয়ে থাকে যে , থিয়া গ্রহের ভর ছিল পৃথিবীর ভরের প্রায় ১০% যা পৃথিবীকে আঘাত করে কৌনিক ভাবে এবং আঘাতের পরে এটির কিছু ভর পৃথিবীর সাথে বিলীনও হয়ে যায় । প্রায় ৪.১ থেকে ৩.৫ বিলিয়ন বছরের মধ্যে অজস্র গ্রহাণুর আঘাত যা ঘটে , যার ফলে চাঁদের বৃহত্তর পৃষ্ঠতলের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে , আর এর কারণ ছিল পৃথিবীর উপস্থিতি ।
আজকের আমাদের প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে লাইক ও শেয়ার করুন এবং অন্যদের জানার সুযোগ করে দিন । এছারাও কমেন্টের মাধ্যমে আপনার সুযোগ্য মতামত জানতে ভুলবেন না ।
লেখিকাঃ – সায়মা আক্তার (প্রিয়জানালা)
আমাদের ফেইসবুক পেইজ- প্রিয়জানালা