দুনিয়া মাতানো ১০ টি সেরা বই যা না পড়লেই নয়
১০ টি বই যা না পড়লেই নয়।
বই মানুষের সবচেয়ে উপকারি বন্ধু। বই মানুষের জীবন পাল্টে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। বই প্রেমিকেরা বই পড়ে তাদের আনন্দ পিপাসা মিটায়।বিভিন্ন ধরনের বই মানুষেকে বিভিন্ন ধারণা দিয়ে থাকে। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, সায়েন্স ফিকশন ইত্যাদি বই মানুষকে সমৃদ্ধ করে, মনকে প্রভাবিত করে। বই পড়ার ফলে মানুষ তার আগ্রহের বিষয়টি জানতে পারে। মানুষ নতুন বিষয়বস্তুর সাথে পরিচিত হয় বই পড়ার মাধ্যমে। বই প্রেমিরা বই পড়ার পাশাপাশি বই সম্পর্কে জানতেও ভালোবাসেন। যারা বই পড়তে চান এবং বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে চান কিন্তু কিভাবে শুরু করবেন সেটা বুঝতে পারছেন না তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য রয়েছে ১০ টি বিখ্যাত, চমৎকার কিছু বই। যেই বইগুলো না পড়লেই নয়। বই প্রেমি এবং যারা বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে চান তারা এই বইগুলো দিয়েই শুরু করতে পারেন। তো চলুন জেনে নেয়া যাক বই গুলোর সম্পর্কে।
১.’দ্য ডায়েরি অফ আ ইয়াং গার্ল’
‘দ্য ডায়েরি অফ আ ইয়াং গার্ল’ একটি বিখ্যাত বই যা ‘দ্য ডায়েরি অফ অ্যানা ফ্র্যাংক’ নামেও পরিচিত। এটি ওলন্দাজ ভাষায় লিখা হয়েছে। যার লেখিকা ছিলেন ১৩ বছর বয়সী কিশোরী অ্যানা ফ্র্যাংক। নেদারল্যান্ডসে আমস্টারডামের এই ১৩ বছর বয়সী আ্যনা ফ্র্যাংক ছিল মুক্তমনা, স্বাধীনচেতা। তার কিশোরী মনে এবং চিন্তা ভাবনায় আধুনিকতার ছোয়া ছিল। তার বই মূলত তার দিনলিপি। ১৯৪২ সালে তার জন্মদিনের উপহার হিসেবে একটি ডাইরি পেয়ে আ্যানা সে ডাইরিতে ১২ই জুন থেকে তার দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া সাধারণ ঘটনাগুলো লিখে রাখতে। ইহুদি পরিবারে জন্ম নেয়া আ্যানা ফ্র্যাংক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নাযি বাহিনীর অভিযানের সময় সপরিবারে একটি বাড়িতে লুকিয়ে থাকেন। বিভিন্ন বিধিনিষেধ মেনে চলা এবং সর্বাক্ষন আতংকের মধ্যে দিয়ে চলতে হত তাদের। তারপরও আ্যানা তার, মনভাব, অনুভুতি তার ডাইরিতে লিখে রাখতেন। ‘দ্য ডায়েরি অফ আ ইয়াং গার্ল’ বইটি ৬০টির ও বেশি ভাষায় অনুবাদকৃত এবং সংকলিত হয়েছে। বইটি নিয়ে বিভিন্ন প্রচ্ছেদ, নাটক, চলচ্চিত্র নির্মান হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর এ জনপ্রিয় আ্যানা ফ্র্যাংক এর বইটি এখনো পাঠকের মনে বিশেষভাবে জায়গা করে আছে।
Source: Rokomari |
২.’দ্য আলকেমিস্ট’
বিশ্ব বিখ্যাত লেখক পাওলো কোয়েলহো এর এক মহৎ অনবদ্য সৃষ্টি বই ‘দ্য আলকেমিস্ট ‘। তার সর্বাধিক জনপ্রিয়, সর্বাধিক পাঠকৃত এবং বহুল আলোচিত সাহিত্যকর্ম হলো এই বইটি।৬৭টির বেশি ভাষায় অনুবাদকৃত বইটির গল্প হচ্ছে এক সাধারণ রাখাল ছেলেকে নিয়ে। যে ভ্রমণ করতে পছন্দ করে। হঠাৎ তার জীবনে ঘটতে থাকে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা এবং ঘটনা। যা তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন করে। বইটি একই সাথে অ্যাডভেঞ্চারিয়াস, আত্মউন্নয়নমূলক এবং জীবনদার্শনীক। পুরো বইটিতে জীবন দর্শনের নানা দিক ফুটে উঠেছে। বইটির সারকথা হচ্ছে
“যখন তুমি মন থেকে কিছু চাও, পুরো বিশ্ব তোমাকে সেটি অর্জন করতে সাহায্য করবে”
বইটিতে বিভিন্ন ধরনের উক্তি রয়েছে যা বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষকে অনুপ্রেরণা দিবে। সাহায্য করবে তার লক্ষ্য অর্জনে অটল থাকতে।অন্যান্য বিখ্যাত লেখকদের মতে যেকোনো মানুষের জীবন পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে এই বইটি।জীবনকে সুন্দর, সফল, সমৃদ্ধ এবং অর্থবহ করে তুলার জন্য একবার হলেও বইটি সকলের পড়া উচিত।
Source: Rokomari |
৩.’দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’
এটি এমন একটি বই যার কথা বিশ্বের খুব কম মানুষই বলবেন যে পড়েন নি বা বইটির সম্পর্কে জানেনা।বই পড়া প্রসঙ্গে কথা উঠলে অবশ্যই নাম আসবে ‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’ উপন্যাস এর। এই বিশ্ব বিখ্যাত বইটি লিখেছেন ‘এফ স্কট ফিটজেরাল্ট’।এটি বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম রচনা যা ১৯২৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশিত হয়েছে। এই বইটি থেকে একাধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।উপন্যাসটির মূল চরিত্র হলেন ‘জে গ্যাটসবি’। তার বিস্ময়কর এবং রহস্যময় চরিত্র উপন্যাসটিকে করে তুলেছে কিংবদন্তী।‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’ উপন্যাসের মূল কথা হচ্ছে “নট অল দ্য গ্লিটারস আর গোল্ড” অর্থাৎ “চকচক করলে ই সোনা হয় না”। নতুন পাঠকদের মন জয় করতে ‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’ এর জুড়ি নেই।
Source: Rokomari |
৪.’ইকিগাই’
‘ইকিগাই’ একটি জাপানিজ শব্দ। এই ছোট শব্দের অর্থটা কি জানেন? ‘ইকিগাই’ শব্দের অর্থ হলো “বেঁচে থাকার কারণ”। ‘ইকিগাই’ একটি জাপানিজ বই। সারা বিশ্ব জুড়ে এর লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রি করা হয়েছে। অনুবাদ করা হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। এটি একটি আত্ম-উন্নয়নমূলক বই যেটি লিখেছেন জাপানিজ লেখক হেক্টর গার্সিয়া আর মিরালস। ‘Ikigai: The Japanese Secret to a Long and Happy Life’ বইটি একটি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে লেখা।যে তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে লেখা সে তত্ত্বের উৎপত্তি জাপানের ওয়াকিনাওয়া দ্বীপ থেকে। সেখানে বাস করেন শতবর্ষী মানুষ। তাদের দীর্ঘ জীবনের রহস্য এবং প্রেরণা ই এই বইটির মূল কথা। জাপানের মানুষেরা অন্যান্য দেশের মানুষের তুলনায় গড়ে বেশি দিন বেঁচে থাকে। তাদের এই রহস্য সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই পড়ুন এই চমৎকার বইটি। ইকিগাই বইটি আপনাকে বুঝিয়ে দিবে আপনি কেন বেঁচে আছেন এবং এই পৃথিবী আপনার অস্তিত্বের কারন কি, আপনার কাজ কি।
Source: Rokomari |
৫’নরওয়েজিয়ান উড’
বিখ্যাত জাপানি লেখক হারুকি মুরাকামির এক অনবদ্য মৌলিক রচনা। নরওয়েজিয়ান উড সারা পৃথিবীতে তুমুল জনপ্রিয় একটি উপন্যাস। তার এই উপন্যাস এর ৫০ এর অধিক অনুবাদ করা হয়েছে। ষাটের দশকের বয়ঃসন্ধি পার করা গম্ভীর প্রকৃতির ছেলে তরু এবং তার জীবনে আসে দুই বিপরীতধর্মি নারী। তাদের জীবনে ঘটে চলে বিভিন্ন ঘটনা। প্রেম, ভালবাসা, একাকিত্ব, সম্পর্কের জটিলতা, প্রিয়জন হারানোর বেদনা ইত্যাদি খুব চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এই জাদুকরী লেখক। ষাটের দশকের লেখা হলেও লেখায় সবসময় আধুনিকতার ছাপ রেখে গেছেন তিনি। তার লিখিত এই বই এখনো মানুষের হৃদয়ে ছেয়ে রয়েছে।১৯৮৭ সালে জাপানি লেখক মুরাকামি তার এই বহুল প্রশংসিত লেখা প্রকাশ করেন। এটি বিভিন্ন পুরুষ্কারপ্রাপ্ত অন্যতম উপন্যাস।
Source: Rokomari |
৬.’ফরটি রুলস অব লাভ’
যাদের এই বইয়ের সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই তারা হয়ত ভাবতে পারেন এটি একটি প্রেমকাহিনি, রোমান্টিক ধাঁচের অথবা প্রেমের নিয়মকানুন সম্পর্কিত তথ্যের বই। তবে এ ধারণা ভুল৷এটি বিখ্যাত তুরস্কের লেখিকা এলিফ শাফাকের লিখা জনপ্রিয় একটি উপন্যাস।উপন্যাসটিতে দুটি ভিন্ন সময়ের কাহিনি রয়েছে যা একে অপরের থেকে সম্পুর্ন আলাদা। একটি হচ্ছে বর্তমান অপরটি ঐতিহাসিক কাহিনি নিয়ে। যা ত্রয়োদশ শতাব্দীর মুসলিম দার্শনিক রুমিকে নিয়ে এবং অপরটি চল্লিশ বছর বয়সী এক নারী যে তার দাম্পত্য জীবন নিয়ে সুখি নন। তবে তাদের জীবন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে থাকেলেও তাদের দুজনের কাহিনীর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
Source: Rokomari |
৭.’স্যাপিয়েন্স: অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অব হিউমানকাইন্ড’
অর্থাৎ মানবজাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। ইসরাইলের লেখক ইউভাল নোয়া হারারি এর রচিত কিংবদন্তি বই স্যাপিয়েন্স। মানুষের অস্তিত্বের চিন্তা এবং মানবজাতীর সৃষ্টি, বিবর্তন নিয়ে হারারির লিখিত একটি চমৎকার সংকলন। ২০১১ সালে এটি হিব্রু ভাষায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তিতে এটি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম “হোমো স্যাপিয়েন্স” কে কেন্দ্র করে বইটির নামকরণ করা হয়। লেখক হারারি মানুষের সৃষ্টির শুরু হতে বিবর্তন, বিভিন্ন পরিবর্তন এবং ইতিহাসকে একটি কাঠামোর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। বইটি পাঠকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর তৈরি করবে। বিজ্ঞান প্রিয় পাঠকদের জন্য এটি একটি আশীর্বাদ।
Source: Rokomari |
৮.’সাইলেন্ট পেশেন্ট ‘
লেখক আ্যালেক্স মাইকেলাইডস একটি হাড়কাঁপানো থ্রিলার যা কল্পনাতিত। যারা রহস্যময়, গোয়েন্দা, রোমাঞ্চকর বই ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই অসাধারণ এই বইটি। যারা বই পড়াতে উম্মাদ তারা এক বসায় শেষ করে ফেলতে পারবেন বইটি। বইটি আপনার প্রতিটি মুহূর্ত কে সাসপেন্স এ বদলে দিবে। বইটি হচ্ছে চিত্রশিল্পী আ্যলিসিয়া বেরেন্সন এবং তার ফোটোগ্রাফার স্বামীকে নিয়ে যাকে সে হত্যা করে। তবে হত্যাকান্ডটি খুবই রহস্যজনক হয়ে থাকে কারন এ ঘটনাটির পর আ্যলিসিয়া সম্পুর্ন নিশ্চুপ হয়ে যায়। যার ফলে তাকে মানসিক চিকিৎসা দেয়া হয়।গল্পে প্রবেশ হয় থিও ফেবারের। যে কিনা একজন প্রফেশনাল ক্রিমিনাল সাইকোথেরাপিস্ট। যে কিনা চেষ্টা করে বেরায় আ্যালিসিয়ার মুখ খোলার জন্য। কাহিনি এবং প্রেক্ষাপট এভাবেই এগিয়ে জেতে থাকে যতক্ষণ না সত্য বেরিয়ে আসে। ২০১৯ সালে এটি প্রকাশিত হয়।
Source: Rokomari |
৯. ‘থিকং অ্যান্ড গ্রো রিচ’
‘থিকং অ্যান্ড গ্রো রিচ’ একটি আত্ম-উন্নয়ন মূলক বই যেটি লিখেছেন স্যার নেপোলিয়ন হিল।১৯৩৭ সালে প্রকাশিত এই বইটি এখন পর্যন্ত সেল্ফ ডেভেলপমেন্ট বইগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। যেকোনো আত্ম-উন্নয়নমূলক বই এর থেকে অনুপ্রেরণিত এবং পিছনের মূল ভিত্তি কিন্তু এই বই থেকেই। বইটির পুরো বিশ্বএ ৩০ মিলিয়ন বৈধ কপি বিক্রি করা হয়েছে। ‘থিকং অ্যান্ড গ্রো রিচ’ অর্থাৎ “চিন্তা কর এবং ধনী হও”। এর মানে মানুষের সমৃদ্ধি ধনের হক অথবা জ্ঞানের, সবটুকুই তার চিন্তা ভাবনার উপর গভীরভাবে নির্ভরশীল। বইটি লিখার আগে নেপোলিয়ান হিল ৫০০ জন মানুষের সাথে সময় কাটিয়েছিলেন, সময় নিয়ে পর্যবেক্ষন করেছিলেন। শুনেছিলেন তাদের সফলতার গল্প, তাদের জীবনের বিভিন্ন পথ পাড়ি দেয়ার কাহিনি। সে ৫০০জন এর গল্পের মধ্যে যে বিষয়টি কমন সে বিষয়টি টুকে নিয়েছিলেন। তারপরই লিখে ফেললেন তার যুগান্তকারী এই বইটি। সবার জীবনে একবার হলেও বইটি পড়া উচিত।
Source: Rokomari |
১০. ‘টু কিল আ মকিং বার্ড ‘
‘টু কিল আ মকিং বার্ড ‘ মার্কিন লেখক হার্পার লি এর একটি বিশেষ রচনা। ১৯৬০ সালে প্রকাশিত এই বইটি ১৯৩৬ সালে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে সৃষ্টি করা হয়েছিল। বইটি প্রকাশের সাথে সাথেই বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। বইটি যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদী আচরণ, জাতিগত বৈষম্যের এবং ধর্ষনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ফুটে উঠেছে। উপন্যাসে মেকম্ব নামক একটি শহর যেখানে কৃষ্ণাঙ্গেরা বাস করতেন। তবে কৃষ্ণাঙ্গরা সবসময় অবহেলিত এবং নীরবে নির্যাতিত হত সাদা বর্নের মানুষের কাছে।এভাবেই গল্প এগিয়ে জেতে থাকে।
Source: Rokomari |
এই ছিলো ১০ টি বিখ্যাত সব বই। যা না পড়লেই নয়।
আমাদের প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে লাইক ও শেয়ার করুন এবং অন্যদের জানার সুযোগ করে দিন । এছারাও কমেন্টের মাধ্যমে আপনার সুযোগ্য মতামত জানতে ভুলবেন না ।
লেখিকাঃ – অরফিয়াস নিজাম (প্রিয়জানালা)