বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক সম্পর্কে অজানা তথ্য
ইলন মাস্ক ৪৪ বিলিওন ডলারে টুইটার খরিদ করে নিয়েছেন।
আমরা এই পর্বে এমন এক মানুষের কথা বলবো যাকে বলা হচ্ছে এই মুহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে সফল বিলিয়নিয়ার উদ্যোক্তা।
মানবজাতিকে মঙ্গল গ্রহে পাঠাতে চায় যিনি, স্বপ্ন দেখেন মঙ্গলে উপনিবেশ স্থাপন করার ।
যা মানুষ কল্পনাও করেনি কিন্তু এই অবিশ্বাস্য ঘটনাকেই বাস্তবে পরিণত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যিনি তিনিই আমাদের আজকের বিষয় বস্তু, সে আর কেউ নন ব্যবসায়িক দুনিয়ার পথপ্রদর্শক ইলন মাস্ক। মাস্ক মঙ্গল গ্রহ নিয়ে এতটাই আশাবাদী যে তিনি পৃথিবীতে নয় , বরং মঙ্গল গ্রহে মৃত্যুবরণ করারও ইচ্ছা ব্যাক্ত করেন ।
তবে কে এই ইলন মাস্ক?
কিছুটা খ্যাপাটে ধরনের লোকই বলা চলে তাঁকে ! নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা আর সেগুলোর বাস্তবায়ন করে প্রতিনিয়ত সংবাদের শিরোনাম হয়ে চলেছেন । মাত্র ৪৯ বছর বয়সে হয়েছেন বিশ্বের ২য় ধনী ব্যক্তি! ফোর্বস এর ২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মাত্র ১০ বছর বয়সেই সে নিজ থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এ পারদর্শিতা লাভ করেন । ১২ বছর বয়সেই তিনি ব্লাস্টার নামক একটি মজাদার ভিডিও গেম তৈরি করে ফেলেন । মজার ব্যাপার হলো , সেই ভিডিও গেমটি তিনি একটি ম্যাগাজিনের কাছে বিক্রি করে নগদ ৫০০ মার্কিন ডলার আয় করেন ।
পেশাজীবনে মাস্ক এক জাদুকর বটে । যেখানে হাত দিচ্ছেন সফলতার মুখ না দেখা পর্যন্ত অদম্য পরিশ্রম করে চলেছেন । একের পর এক অবদান রেখে চলেছেন সমাজের নানা ক্ষেত্রে ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে হয়ে উঠেছেন তিনি আজকের ইলন মাস্ক – ভিডিও দেখুন 👇👇
একজন ব্যক্তি একাধারে উদ্যোক্তা , প্রকৌশলী , বিনিয়োগকারী , উদ্ভাবক এবং ভবিষ্যৎ প্রবক্তা । এতগুলো বিশেষণ দিয়েও হয়তো পরিচয় আন্দাজ করা সহজ নয় কিন্তু পেপাল অথবা স্পেসএক্স এর নাম শোনার সাথে সাথে চকিতেই পাঠক বুঝে যাবেন কার কথা বলছি । ইলন মাস্ক বর্তমান বিশ্বের এক অনুপ্রেরণার নাম । ব্যবসায়িক দুনিয়ার পথপ্রদর্শকও বলা চলে । ইলন মাস্ক এমন একজন ব্যক্তি যিনি শুধু স্বপ্ন দেখেন না বরং স্বপ্ন বাস্তবায়নও করেন । স্পেসএক্স , টেসলা , সোলারসিটি এই তিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে মাস্কের নাম জড়িত । এছাড়াও তিনি পেপাল এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সারা বিশ্বে খ্যাত । মাস্ক একাধারে স্পেসএক্স এর সিইও , সিটিও এবং লিড ডিজাইনার , টেসলা ইনকর্পোরেটেড এর সিইও , চেয়ারম্যান ও প্রোডাক্ট আর্কিটেক্ট আর সেই সাথে সোলার সিটি’র চেয়ারম্যান । তিনি স্বপ্ন দেখেন মঙ্গলে উপনিবেশ স্থাপন করার । ২০২৪ সালের মাঝে মানবজাতিকে মঙ্গল গ্রহে পাঠানো শুরু করবেন বলে নিজেই জানিয়েছেন মাস্ক । মহাকাশ যাত্রাকে মাস্ক এতটাই সস্তা করেছেন যে এর খরচ এখন আগের থেকে ৯০% এর মতো কমে এসেছে । কিছুটা খ্যাপাটে ধরনের লোকই বলা চলে তাঁকে ! নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা আর সেগুলোর বাস্তবায়ন করে প্রতিনিয়ত সংবাদের শিরোনাম হয়ে চলেছেন । জন্মগতভাবে তিনি আফ্রিকান হলেও মোট তিনটি দেশের নাগরিকত্ব ( আফ্রিকা , কানাডা এবং আমেরিকা ) রয়েছে তাঁর । বর্তমানে আমেরিকাতেই বসবাস করছেন তিনি । ২০২১ সাল পর্যন্ত ইলন মাস্ক বিশ্বের ২য় বিলিয়নিয়ার হিসাবে পরিচিত এবং তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার । প্রায় ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পত্তির মালিক ইলন মাস্ককে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দেয়া হয় । বিচিত্র চিন্তাধারার এই মানুষটির আপাদমস্তক জীবনধারা আমাদের অনেক বেশি অনুপ্রেরণার জোগান দেয় । শত ব্যর্থতা পেছনে ফেলে সাফল্যের চূড়ায় আহরণে সক্ষম হয়েছেন। ক্ষুদ্র কম্পিউটার প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে মঙ্গলের লাল মাটিতে প্রাণের বিকাশে পদচারণ , এত লম্বা যাত্রাপথটা কিন্তু মোটেও সুগম ছিলো না । দেখে আসা যাক প্রিটোরিয়ার ছোট্ট এক বালকের বিলিয়নিয়ার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প ।
দক্ষিন আফ্রিকান বাবা ও কানাডিয়ান মা এর সন্তান ইলনের পুরো নাম “ ইলন রিভ মাস্ক । জন্ম ১৯৭১ সালে । দক্ষিন আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায় । ছোটবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি খুব ঝোঁক ছিল ইলনের । মাত্র নয় বছর বয়সে ঘরে বইয়ের অভাবে তিনি শেষমেষ পড়া শুরু করেন বিখ্যাত এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা , যা তিনি একসময় পড়া শেষও করে ফেলেন । স্কুল জীবনে অনেকটাই চুপচাপ ছিলেন তিনি , যাকে আমরা বলি ইন্ট্রোভার্ট । একারণে স্কুল পড়ুয়াবস্থায় প্রচন্ড বুলির শিকার হতেন এবং তাকে একবার হসপিটালেও নেয়া হয় । জীবনের শুরুতেই এত এত মানসিক চাপ কিন্তু কোনোভাবেই তাঁর সাফল্যের অগ্রযাত্রাকে শিকল পড়িয়ে রাখতে পারেনি । মাত্র ১০ বছর বয়সেই সে নিজ থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এ পারদর্শিতা লাভ করেন । ১২ বছর বয়সেই তিনি ব্লাস্টার নামক একটি মজাদার ভিডিও গেম তৈরি করে ফেলেন । মজার ব্যাপার হলো , সেই ভিডিও গেমটি তিনি একটি ম্যাগাজিনের কাছে বিক্রি করে নগদ ৫০০ মার্কিন ডলার আয় করেন ।
দক্ষিন আফ্রিকার আবশ্যিক সামরিক জীবনকে “না” বলে মাস্ক কানাডা পাড়ি দেন উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে । যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ পেনিসিলভেনিয়া থেকে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন । পরবর্তীতে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের উপর দ্বিতীয় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন । স্কুল-কলেজে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ে কমার্স কিংবা আর্টসে পড়াশুনা করতে গেলেও অনেকের মধ্যেই সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ডে ক্যারিয়ার গড়ার একটা ইচ্ছা থাকে । তাদের জন্য অনুপ্রেরণা ইলন মাস্ক । কেননা তিনি একসময় অর্থনীতির শিক্ষার্থী হওয়ার পরও পরবর্তীতে তিনি কিন্তু বৈজ্ঞানিক কর্মক্ষেত্রেই সফল হতে পেরেছেন । এনার্জি ফিজিক্সের উপর পিএইচডি করার উদ্দ্যেশে মাস্ক স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরপরই তিনি ঠিক করেন যে , পিএইচডি বাদ দিয়ে তিনি ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে মনোনিবেশ করবেন এবং ঠিক ২দিন পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপ আউট হন ।
পেশাজীবনে মাস্ক এক জাদুকর বটে । যেখানে হাত দিচ্ছেন সফলতার মুখ না দেখা পর্যন্ত অদম্য পরিশ্রম করে চলেছেন । একের পর এক অবদান রেখে চলেছেন সমাজের নানা ক্ষেত্রে । চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে হয়ে উঠেছেন তিনি আজকের ইলন মাস্ক –
জিপ ২
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে ভাইয়ের সাথে মিলে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর প্রথম কোম্পানি “জিপ২” । জিপ ২ আসলে ছিল একটি অনলাইন ভিত্তিক সিটি গাইড । এটি মূলত ছিল পত্রিকা প্রকাশকদের জন্য যা ব্যবসায়িক দিক নির্দেশনা এবং মানচিত্র প্রদান করত । ১৯৯৯ সালে কমপ্যাক কম্পিউটার্স নগদ ৩০৭ মিলিয়ন ডলার ও ৩৪ মিলিয়ন ডলারের স্টকের বিনিময়ে জিপ টু কিনে নেয় । এখান থেকে ইলনের ভাগে জোটে প্রায় ২২ মিলিয়ন ডলার । যা তিনি তাঁর পরবর্তী উদ্যোগের মূলধন হিসেবে ব্যবহার করেন ।
পেপ্যাল
১৯৯৯ সালে আরো কয়েকজন সহ নির্মাতার সঙ্গে x.com নামে একটি অনলাইন ভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবাদাতা সাইট চালু করেন যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী পেপ্যাল (PayPal) হিসেবে পরিচিতি পায় । শুরুতে এই সেবাটি কেউ গ্রহণ করতে না চাইলেও বর্তমানে এটি ইন্টারনেট ভিত্তিক টাকা লেনদেনের সবচেয়ে বড় মাধ্যমে পরিণত হয়েছে । ২০০২ সালে পেপালকে eBay কিনে নেয় প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে । বিক্রির পূর্বে মাস্ক পেপাল এর ১১ শতাংশ শেয়ারের মালিক থাকায় প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ডলার অর্জন করেন ।
স্পেসএক্স
২০০২ সালে মাস্ক তাঁর তৃতীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স এর যাত্রা শুরু করেন । এটি মূলত মহাকাশযান তৈরি এবং উৎক্ষেপণ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান । স্পেসএক্স থেকে এমন রকেট তৈরি করা হয় যেগুলো প্রচলিত রকেটের চাইতে অনেকগুণ বেশী সস্তা কিন্তু কার্যকারিতার দিক দিয়ে এক নম্বরে অবস্থান করছে । রকেট সম্পর্কে তেমন কোন পূর্বজ্ঞান না থাকলেও দিনের পর দিন বই পড়তে পড়তে নিজেকে রীতিমত রকেট বিজ্ঞানীতে পরিণত করেন তিনি । স্পেসএক্সই একমাত্র ব্যক্তি মালিকাধীন কোম্পানি যেখান থেকে প্রথম কোন মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা হয় । নাসার সাথেও স্পেসএক্সের চুক্তি হয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে মালামাল পৌঁছানো এবং নাসার নিজস্ব মহাকাশযানের বদলে স্পেসএক্স এর যানে মহাকাশচারী আনা নেয়ার ব্যাপারে । কারণ স্পেসএক্সের মহাকাশযানগুলো একাধিকবার ব্যবহারোপযোগী । তাছাড়া সে বছরের শেষের দিকে স্পেসএক্স থেকে চাঁদের মাটিতে ২ জন পর্যটক নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে ।
ফ্যালকন ৯ রকেট
২০১২ সালের ২২ মে স্পেসএক্সের পাশাপাশি ইলন মাস্কও বিশ্বজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি পান একটি নামহীন ক্যাপসুল সহ ফ্যালকন ৯ রকেট উড্ডয়ন করার মাধ্যমে । মহাকাশযানটিতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে অবস্থানরত মহাকাশচারীদের জন্য ১০০০ পাউন্ড ওজনের রসদ ছিল । ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে স্পেসএক্স আরও একটি মাইলফলক অতিক্রম করে ফ্যালকন ৯ এর মাধ্যমে একটি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়ে । এছাড়াও সম্প্রতি ২০১৮ সালের ১২ মে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট তথা কৃত্রিম উপগ্রহ ” বঙ্গবন্ধু-১ ” কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্স এর ফ্যালকন-৯ রকেটে করে মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ।
ফ্যালকন হেভি
তবে সব মাইলফলক ছাড়িয়ে যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন ইলন মাস্ক তা হচ্ছে ফ্যালকন হেভি । ৬ ফেব্রুয়ারি , ২০১৮ তে পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হয় বিশ্বের সব থেকে ক্ষমতাশালী রকেট ফ্যালকন হেভি । ফ্যালকন হেভির প্রথম উৎক্ষেপণে ভর হিসেবে একটি টেসলা রোডস্টার গাড়ি মহাকাশে পাঠিয়েছে স্পেসএক্স । গাড়ির চালকের আসনে বসানো হয়েছে মানবাকৃতির ডামি । এটি পুরোপুরি সফল হলে প্রয়োজন মত যে কোনও কৃত্রিম উপগ্রহ বা অন্যান্য যন্ত্রাংশ মহাকাশে পাঠাতে পারবে তারা ।
টেসলা
২০০৩ সালের জুলাইয়ে যাত্রা শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণকারী কোম্পানি টেসলা মোটরস । গাড়ি প্রেমিকদের কাছে টেসলা এক পরিচিত নাম । যদিও কোম্পানির শুরুতে মাস্ক ছিলেন না । ২০০৪ সালে তিনি এর চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন । মাস্ক টেসলাতে যোগদান করার পর কোম্পানিটি নতুন করে যাত্রা শুরু করে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে । প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় ২০০৮ সালে টেসলা স্পোর্টস কার এর একটি এডিশন রোডস্টার বাজারজাত করে । ২০১৬ তে মাস্ক Tesla.com ডোমেইনটি একজন ব্যক্তির কাছ থেকে কিনে নেন যার কাছে ডোমেইন নেইমটি প্রায় ২৪ বছর ধরে ছিল । এছাড়াও এই কোম্পানি থেকে ইলেকট্রিক সিডানের অনেক মডেল বাজারে আনা হয় যা গাড়ির জগতে রীতিমত শোরগোল ফেলে দেয় । ২০১৯ সালে টেসলা সেমি নামে একটি ট্রাক প্রস্তুতের কাজ শুরু হবার কথা রয়েছে যা একবার ব্যাটারি ফুল চার্জ দিলে প্রায় ৫০০ মাইল পথ পাড়ি দিতে পারবে । বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী গাড়ির মর্যাদা পাওয়া রোডস্টার এর নতুন এডিশন ২০২০ সালে বাস্তবতার মুখ দেখবে বলে ইলন মাস্ক জানিয়েছেন । টেসলা কোম্পানির নামকরণ করা হয় কিংবদন্তী বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার নামানুসারে ।
সোলারসিটি
২০০৬ সালে ইলন এবং তাঁর দুই কাজিন মিলে গড়ে তোলেন সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সোলারসিটি । ২০১৬ সালে মাস্ক এটিকে সম্পূর্ণ টেসলার অধীনে নিয়ে আসেন । বর্তমানে দুই প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ শেয়ারই তাঁর ।
হাইপার লুপ
২০১৩ এর অগাস্টে ইলন মাস্ক যাতায়াতের একটি নতুন পদ্ধতির কথা ঘোষণা দেন যার নাম তিনি দেন “হাইপার লুপ”। এটি এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে অল্প সময়ে বড় বড় শহরগুলোতে যাতায়াত করা সম্ভব হবে । ক্যাপসুলের মতো দেখতে এই যানবাহন একটি লো প্রেশার টিউবের নেটওয়ার্কের ভেতর দিয়ে ঘণ্টায় ৭০০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলতে পারবে । টিউবটি হবে সম্পূর্ণ বায়ু-মুক্ত , কাজেই এতে ঘর্ষণ থাকবে না বললেই চলে । মাস্কের মতে এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন ও ব্যবহারোপযোগী হতে সাত থেকে দশ বছর সময় লাগবে ।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ওপেন এ আই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ২০১৫ এর শেষের দিকে যাত্রা শুরু করে । মাস্ক কোম্পানিটির চেয়ারম্যান । এই কোম্পানিটি মানবতার কল্যাণে ডিজিটাল বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নের জন্য গবেষণার কাজ করে থাকে । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে মাস্কের আগ্রহ বরাবরই ছিল ।
নিউরালিঙ্ক
স্নায়ুবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থাটি ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে । মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে কম্পিউটারের সংযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে নিউরালিঙ্ক নামের এই প্রতিষ্ঠান চালু করেছিলেন । একের পর এক উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে কাজ করে যাওয়া মাস্ক । যদিও জনসমক্ষে ২০১৭ সালে খবরটি প্রকাশিত হয় ।
দ্য বোরিং কোম্পানি
মাস্ক যখন দেখলেন যে রোজ ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে থেকে আমাদের জীবনের মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট হচ্ছে তখন তিনি আরেকটি যুগান্তকারী আবিষ্কারের পরিকল্পনা করেন । তিনি একটি টানেল নির্মাণকারী কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেন । আর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি “ দ্য বোরিং কোম্পানি ” নামে খননকারী প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেন যার প্রথম কাজ ছিল লস এঞ্জেলসে অবস্থিত স্পেসএক্স এর আওতাভুক্ত জমিতে পরীক্ষামূলক খননকার্য চালানো । অক্টোবরের শেষের দিকে মাস্ক কোম্পানির কাজের অগ্রগতির ছবি পোস্ট করেন তাঁর ইন্সটাগ্রামে ।
ইলন মাস্ক ছিলেন এমন একজন মানুষ যার মস্তিষ্ক সবসময়ই ব্যস্ত থাকতো সুদূরপ্রসারী কোনো চিন্তাভাবনায় । ইলন মাস্ক মনে করতেন , মানবজাতির পদচারনা শুধুমাত্র পৃথিবী থাকাটা হাস্যকর , কেননা পৃথিবীর বুকে যেকোনো মহাবিপর্যয়ে নিমিষেই মানবজাতির বিলুপ্তি ঘটতে পারে । তাই ইলন মাস্ক নিকট ভবিষ্যতেই মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি স্থাপনের উদ্যোগ নিলেন । মাস্ক মনে করতেন , পৃথিবী থেকে ৫৪.৬ মিলিয়ন কিলোমিটার পথ পারি দেয়ার খরচ যোগানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো রকেট পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা । স্পেসএক্স তৈরি করলো ফ্যালকন-৯ , ফ্যালকন হেভি , প্রস্তাব দিলো বিএফআর এর মত অত্যাধুনিক স্পেসক্রাফটের । মাস্ক ২০২০-২০২৪ সালের মধ্যে মঙ্গল অভিযানকে বাস্তবে রূপ দিতে চান । আর ফ্যালকন-৯ থেকে শুরু করে আজকের ফ্যালকন হেভি একটা জিনিসই প্রমাণ করে , আর তা হলো ইলন মাস্কের সেই মিশন-২ মার্স এখন অনেকটাই বাস্তব । মাস্ক মঙ্গল নিয়ে এতটাই আশাবাদী যে তিনি পৃথিবীতে নয় , বরং মঙ্গল গ্রহে মৃত্যুবরণ করারও ইচ্ছা ব্যাক্ত করেন ।
জীবনে কোনো ব্যক্তি সফল হয়েছেন এবং তিনি সমালোচনার শিকার হননি এরকম উদাহরন খুঁজে বের করা আসলেই দুষ্কর । যেমনটি ঘটেছে ইলন মাস্কের ক্ষেত্রেও । স্কুল জীবনের শুরু থেকেই তিনি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের চোখে যেমন তুচ্ছ ছিলেন , তেমনি সমালোচিত হয়েছেন নিজের বিভিন্ন চিন্তাধারার জন্যও । এমনকি মাস্কের মঙ্গল গ্রহকে নিয়ে এত সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনাকেও অনেকে অহেতুক বলে চলেছেন ।
পরিশেষে বলা যায় , এত দ্রুতই ইলন মাস্ক পৃথিবীতে যে আমূল পরিবর্তনের ছাপ রেখে যাচ্ছেন , তা সত্যিই সাধারণ সাফল্যের পাল্লায় পরিমাপ করা সম্ভব নয় । ফোর্বস এর ২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার । তাঁর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স এর মোট সম্পদের পরিমাণ তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদের থেকেও বেশি । ইলন মাস্ক তাঁর সফল পেশাজীবনে কিছু নীতি সবসময়ই মেনে চলেন । আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা হওয়ার কথা ভেবে থাকেন বা একজন সফল ব্যবসায়ী হতে চান তাহলে অনুসরণ করতে পারেন মাস্কের সাফল্যে
আমাদের প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে লাইক ও শেয়ার করুন এবং অন্যদের জানার সুযোগ করে দিন । এছারাও কমেন্টের মাধ্যমে আপনার সুযোগ্য মতামত জানতে ভুলবেন না ।
লেখিকাঃ সায়মা আক্তার
আমাদের ফেইসবুক পেইজ- প্রিয়জানালা