সমাজের চোখে ইভটিজিং – ইভটিজিং প্রতিরোধ করা সম্ভব?
বাংলাদেশে সমাজের চোখে ইভটিজিং কি?
যখন কোনো পুরুষের মাধ্যমে কোনো নারী শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে উত্যক্ত হয় তখন সাধারণত আমরা তাকে ইভটিজিং বলে থাকি। নারীর দিকে কুনজর কিংবা অশ্লীল কোনো মন্তব্য কিংবা অসৎ উদ্দেশ্য নারীর শরীরে স্পর্শ করা সবই ইভটিজিং এর অন্তর্ভুক্ত।
বর্তমানে ইভটিজিং একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যধিতে পরিণত হয়েছে। নারী নির্যাতনের বেশিরভাগ সমস্যার পাদুর্ভাব কিন্তু ইভটিজিং এর মাধ্যমেই হয়ে থাকে। বিশ্বের যেকোনো দেশ উন্নতির দিক থেকে যতই এগিয়ে থাকুক না কেনো যেকোনো দেশে শতকরায় ১ জন নারী পাওয়া দুষ্কর যে কখনো ইভটিজিং এর স্বীকার হয় নি। অবশ্য যে দেশে পতিতালয় থাকা সত্ত্বেও ৫ বছরের শিশু ধর্ষিত হয় করোনার মতো অবস্থায় সেখানে ইভটিজিং তো কোনো ব্যাপার-ই না। ইভটিজিং এর পেছনে আমি একটি কারণ-ই খুঁজে পাই আর তা হলো ইভটিজারের বিরূপ মানসিকতা। আমরা এখন এমন এক যুগে বসবাস করছি যেখানে বয়স্ক পুরুষ দ্বারাও নারীরা উত্যক্ত হচ্ছে।
ইভটিজিং এর মাধ্যমে একজন নারী হীনমন্যতায় ভোগা শুরু হয় এবং যার ফলাফল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আত্মহত্যা। ইভটিজিং এর প্রভাব শুধুমাত্র নারীর প্রাণের নির্মম বলিদানেই শেষ হয়ে যায় বরং বাধাপ্রাপ্ত হয় আর্থসামাজিক উন্নয়ন।ইভটিজিং এর ৮৭% ঘটনাই ঘটে থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে। ফলে কোনো কোনো শিক্ষার্থীর পড়াশুনা থেকে ঝরে পড়ে, যার প্রভাবে নারী সমাজ পিছিয়ে পড়ার উপক্রম হয়।
আরো পড়ুন – হতাশা দূর করার উপায়? হতাশা থেকে বাচার উপায়? কিভাবে হতাশা দুর করবেন?
বয়ঃসন্ধিকালঃ কিশোর কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন ও করনীয়
ইভটিজিং রোধ
ইভটিজিং রোধ করতে বাংলাদেশে ১৩ই জুনকে ‘Eve-teasing Protection Day’ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু যেহেতু জরিমানা নেওয়া সত্ত্বেও এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হয় নি সেহেতু পরিলক্ষিত হয় যে, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ স্ব স্ব নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাবেন না ততক্ষণ অব্ধি ইভটিজিং কলুষিত করতে থাকবে আমাদের সমাজকে।
ইভটিজিং করা হোক কিংবা ইভটিজিং এর স্বীকার হওয়া হোক উভয়ই দৃষ্টিভঙ্গির খেলা। একজন ইভটিজার কখনো তার মা,বোন,মেয়ে কিংবা স্ত্রীকে ইভটিজিং করবে না কেননা তাদের জন্য ইভটিজার এর দৃষ্টিভঙ্গি অন্যরকম। আবার ইভটিজিং এর স্বীকার হওয়া একজন নারী হীনমন্যতায় না ভুগে উত্যক্তকারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে আমাদের সমাজ-ও ইভটিজিং মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতো।
কখনো কখনো তো সমাজের কিছু মানুষকে বলতে শুনা যায় যে, “নিশ্চয়ই নারীটির চালচলনে কিংবা পোশাকে সমস্যা ছিলো, আর তা না হলে কি সে ইভটিজিং এর স্বীকার হয়?” তখন তাদের থেকে খুব জানতে ইচ্ছে হয় যে, যেসব নারীরা শালীনভাবে চলাচল করে,পর্দা করে তাদের উদ্দেশ্যে কটুক্তি করার কারণ কী?
আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদের পর্দা সম্পর্কে বলেছেন,“তোমরা তোমাদের চোখকে হেফাজত করো।”
যেদিন নরজাতি আল্লাহর উক্ত বিধানকে প্রয়োগ করবেন নিজেরা এবং পাশাপাশি নারীজাতি আল-কুরআনে তাদের উদ্দেশ্যে উল্লেখিত বিধানগুলোকে নিজের জীবনে প্রতিফলিত করবেন সেদিন কোনো প্রকারের কারণ থাকবে না ইভটিজিং হওয়ার পেছনে। যতদিন পর্যন্ত আমাদের মধ্যে ইভটিজিং করার মতো বিরূপ মনমানসিকতা কাজ করবে ততদিন আমরা Digital Bangladesh হয়েও অসম্পূর্ণ থেকে যাবো। তাই আমাদের সবার উচিত ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণের পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা করা।
লিখেছেন- ফাতেমী সুষম ( প্রিয়জানালা)
প্রিয়জানালা’র প্রিয় পাঠকঃ বাংলা ব্লগ, তথ্য ও প্রযুক্তি, সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান, খেলাধুলা, পড়াশুনা, বিউটি টিপস, স্বাস্থ্য টিপস, সিনেমা রিভিউ, চাকরির গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলোর আপডেট পেতে এবং মতামত প্রকাশের জন্য আমাদের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ প্রিয়জানালা এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।