বাংলাদেশের ৫টি সুন্দর দর্শনীয় স্থান

ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য বাংলাদেশের ৫টি সুন্দর দর্শনীয় স্থান
ঘুরে বেড়ানো মানুষের এক ধরনের শখ। প্রকৃতির হাওয়া গায়ে লাগাতে এবং একঘেয়ে জীবন থেকে একটু বিরতি নিতে কার না ভালো লাগে? প্রকৃতির রূপ মানুষের মন কে তৃপ্তি দেয়। কারো কারো কাছে এই তৃপ্তি নেশায় পরিনত হয়। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বাংলাদেশে রয়েছে অসাধারণ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। শুধু কক্সবাজার কিংবা সুন্দরবন নয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে এ দেশের বিভিন্ন জেলা।
তাই ভ্রমণ পিপাসুদের ভ্রমণ নেশা মেটাতে রয়েছে বাংলাদেশের ৫টি বিশেষ দর্শনীয় স্থান। যার মনমুগ্ধকর পরিবেশে আপনি আপনার পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন।
১. নাফাখুম
নাফাখুম জলপ্রপাত, বান্দরবান। জলপ্রপাত দেখতে নায়াগ্রা যাবেন কেন যখন অবিরাম সৌন্দর্য এখানেই? বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় অবস্থিত এই জলপ্রপাতের নামটি মারমা শব্দ ‘নাফা’ অর্থাৎ মাছ এবং ‘খুম’ অর্থাৎ জলপ্রপাত। সেখানে প্রধানত আদিবাসীদের বসবাস। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় জলপ্রপাত। নাফাখুম যাবার পথে দেখতে পাবেন বড় বড় পাথর ঘেরা পাথুরে বাগান। পানির গতিমাত্রা অতন্ত্য বেশি যার কারনে সূর্যের আলোর সাথে বিকিরণ সৃষ্টি করে পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে দেখা যায় রংধনু। যারা ঝরনা দেখতে পছন্দ করেন এবং পাহাড় ঘেরা নদী ট্রেকিং করে বেড়াতে চান তাদের জন্য এই জায়গাটি বেস্ট। নাফাখুম এ বেড়াতে যাওয়ার আদর্শ সময় শীতকালের একটু আগের সময়টা।
![]() |
nafakhum |
নাফাখুম যেভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে বান্দরবান গ্যামি বাসে চড়ে বান্দরবান সদরে পৌছাতে হবে। বান্দরবান থেকে থানচি যেতে হবে। সেখানে নৌকায় সাংগু নদী ধরে রেমাক্রি বাজার পর্যন্ত গিয়ে ২-৩ ঘন্টা ট্রেকিং করে পায়ে হেঁটে নাফখুম যেতে হবে।
২.নিঝুম দ্বীপ
বাংলাদেশের নোয়াখালি জেলার হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের ছোট্ট একটি দ্বীপ। দ্বীপটি সম্পূর্ণ নীরব বলে এর নাম নিঝুম দ্বীপ দেওয়া হয়েছে এই দ্বীপকে ইছামতির দ্বীপ বলা হয়।আপনি যদি একজন প্রকৃতি প্রেমিক হয়ে থাকেন তাহলে এই জায়গাটিতে ঘুরতে জেতে ভুলবেন না। সেখানে গাছগাছালির, সমুদ্রের পানি, হরেক রকমের পাখির ডাক, বন্যপ্রাণীর দেখা ইত্যাদি মিলে একটি মনরোম পরিবেশ রয়েছে। মূল দ্বীপসহ আসেপাশের কিছু দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে হচ্ছে, চৌধুরী খাল এবং কবিরাজের চর, কমলার দীপ,ম্যানগ্রোভ বন,নোয়াখালী সি বিচ, নামাবাজার সী বিচ, কুমারী সি বিচ অন্যতম। এসব জায়গায় জানা অজানা অনেক পাখি এবং হরিণের দেখা মিলবে সর্বক্ষন।অক্টোবর থেকে মার্চ এর মাঝামাঝি সময়ে গিয়ে ঘুরে আসতে পারে।
![]() |
Nijhum Dwip |
নিঝুম দ্বীপ যেভাবে যাবেন।
ঢাকা সদরঘাট থেকে লঞ্চ এমভি পানামায় করে হাতিয়া তমরুদি। তারপর সেখান থেকে নামা বাজার। এটি সবচেয়ে সহজ রুট।
৩.রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট
রাতারগুল সিলেট জেলা থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত যেটি বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট। এটিকে বাংলাদেশের আমাজন বন বলা যেতে পারে। গাঢ় সবুজ স্তব্ধ বনে হারিয়ে যেতে চান? এবং তা যদি হয় একটি জলাবন। হ্যা বনটি ৫-৬ মাস পানিতে ডুবে থাকে। আপনাকে বনে ঘুরতে হবে নৌকায় করে। চারিদিকে সবুজে সমরহ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং গাছে গড়ে উঠেছে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট একটি প্রাকৃতিক বন, স্থানীয় ববনবিভাগ এখানে বিভিন্ন গাছ রোপন করে থাকেন। বর্ষার শেষের দিকে রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
![]() |
Ratargul Swamp forest |
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট যেভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে সিলেটগামী বাসে চড়ে সিলেট পৌঁছানোর পর সেখান থেকে আবার বাসে করে গোয়াইনঘাট তারপর রাতারগুল।
৪.বিরিশিরি।
বিরিশিরি, দূর্গাপুর। আপনি জাফলং কিংবা সেন্টমার্টিন এর নীলজল দেখেছেন কিন্তু সবুজ রঙ্গের জল দেখেছেন কি? সুসং দুর্গাপুরের বৈচিত্র্যময় অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এই বিরিশিরি। চিনামাটির খনি হচ্ছে বিরিশিরির মুল আকর্ষন। এছাড়াও রয়েছে চোখ ধাধানো কমলা রানীর দীঘি, সোমেশ্বরী নদী। স্বচ্ছ নীলচে-সবুজ পানিতে চিনামাটির পাহাড় আপনাকে মনমুগ্ধ করবে। বর্ষায় সোমেশ্বরী নদীর সৌন্দর্য পিপাসু যেন দ্বিগুন বেড়ে যায়। নীলচে সবুজ পানির হ্রদ সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের মন কেড়ে নিবে। বর্ষাকাল এবং শীতকালের মাঝামাঝি সময়ে বিরিশিরি তে ঘুরতে যাওয়া ই ভালো।
![]() |
birishiri |
বিরিশিরি যেভাবে যাবেনঃ
ঢাকা মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে জিন্নাত নামের একটি বাস সুখনগরী যায়। সেখান থেকে একটি নদী পাপাড় হয়ে রিকশা অথবা মোটরসাইকেলএ করে দুর্গাপুর যাওয়া যায়।
৫. টাঙ্গুয়ার হাওর।
বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ টাঙ্গুয়ার হাওর মিঠাপানির হাওর নামে পরিচিত। এটি সারি সারি পাহাড়, মেঘালয় জৈন্তিয়া হিলস, সবুজের সমারোহ আন্তরিকতা, হাওরর পানির জলমহাল, পাখিদের কলকাকলি মুখোরিত এক অনন্য অভয়াশ্রম। ২০৩ প্রজাতির পাখি এবং ৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ এবং অন্যান্য বিভিন্ন প্রাণী। প্রায় দুইশো প্রজাতির গাছগাছালি রয়েছে। পর্যটকদের মতে কাশ্মীরের প্রতিদন্দ্বিতা করতে সক্ষম এই স্বপ্নিল টাঙ্গুয়ার হাওর। এর চারিপাশে রয়েছে ছোটো ছোটে বিল।মাঝখানে রয়েছে হাতিরগাতা বিল।বর্ষাকালে পানিতে পূর্ণ থাকলেও শীতকালে পানি কমে যায়।
হাওরটি প্রকৃতির অসীম দানে পপরিপূর্ণ। মোহনীয় এই হাওর দেখতে শীতকালের পূর্ববর্তি সময়ে আসতে পারেন।
tanguyar hayor |
যেভাবে যাবেনঃ
সুনামগঞ্জ জেলা থেকে সুনামগঞ্জ বাসস্টান থেকে সাহেববাজার ঘাট পর্যন্ত রিকশায়। সেখান থেকে সাহেব বাড়ি ঘাট থেকে নৌকা বা স্পীড বোর্ডে টাঙ্গুয়ার হাওর।
প্রিয়জানালা ট্যুর ব্লগ
আরও পড়ুনঃ
ঢাকা সিটির ১০টি দর্শনীয় স্থান – ছুটির দিনে কোথায় যাবেন?
শীতে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের জনপ্রিয় বিশেষ ৫ টি স্থান
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আপনার মতামত আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই কমেন্ট এর মাধ্যমে আপনার মতামত জানান। ধন্যবাদ।
প্রিয়জানালা’র প্রিয় পাঠকঃ বাংলা ব্লগ, তথ্য ও প্রযুক্তি, সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান, খেলাধুলা, পড়াশুনা, বিউটি টিপস, স্বাস্থ্য টিপস, সিনেমা রিভিউ, চাকরির গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলোর আপডেট পেতে এবং মতামত প্রকাশের জন্য আমাদের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ প্রিয়জানালা এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।