“প্রহেলিকা”- এক প্রিয়তমার বঞ্চনার গল্প..
এক প্রিয়তমার বঞ্চনার গল্প!
সিনেমার পোস্টারের মতই এক গোলোকধাঁধা যেন প্রহেলিকা!
ট্রেইলার দেখে যেমন কাহিনীর জট ছাড়ায়নি আরও জট বেধে গিয়েছিল। মুভি দেখতে বসেও তেমনি ভাববেন এক, আর হবে আরেক। “প্রহেলিকা” সম্পূর্ন গল্প নির্ভর সিনেমা। পুরানো কাহিনীকে নতুনভাবে প্রেজেন্টেশন নয়, সম্পূর্ন নতুন ধরনের কাহিনীকে নতুনভাবে প্রেজেন্ট করা হয়েছে৷ মুভির প্রথম হাফে চরিত্রগুলোর পরিচয় দেওয়া হয়েছে, প্রথম হাফে বেশকিছু গান রয়েছে। গানগুলো শুনতে ভালো লাগলেও গানের সংখ্যায় অনেকের আপত্তি হতে পারে। তবে চরিত্রগুলোর জন্য গান প্রয়োজনীয় ছিল। প্রথম হাফ দেখে প্রহেলিকাকে মিউজিক্যাল ফিল্ম মনে হতে পারে। কিন্তু টুইস্ট এ ভরপুর সিনেমাটি আপনাকে একদমই বিরক্ত হতে দিবে না।
অভিনয়ের প্রসঙ্গে বলতে গেলে- সিনেমাটির কোন ক্যারেক্টারই কোন ক্যারেক্টারের চেয়ে কম নয়। পুরো” সিনেমায় আলো ছড়িয়েছেন বুবলি। তার অভিনয়, চাহনি, এক্সপ্রেশন, রহস্যময়তা, অসহায়ত্ব, মিলেমিশে এক স্নিগ্ধ রহস্য সে। ইতিমধ্যে দর্শক ট্রেইলারে বুবলির অভিনয়ের ঝলক দেখে বুবলিকে দ্বিতীয় শাবনূর হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। স্পয়লার দেব না, এক নতুন অনবদ্য বুবলিকে পেতে সিনেমাহলে গেলে ঠকবেন না। নিজেকে নিজেই ছাড়িয়ে গিয়েছেন বুবলী। এই সিনেমায় বুবলি যেন নিজেই এক “প্রহেলিকা”।
মাহফুজ আহমেদকে প্রথমে এক সাধারণ ভীতু যুবক বলেই মনে হবে। কিন্তু রহস্য আর ধাঁধায় সিনেমার ক্লাইমেক্সে গিয়েই বুঝতে পারবেন এই সিনেমা কেন বেছে নিয়েছেন সবার প্রিয় মাহফুজ!
নাসিরউদ্দীন খানের অভিনয় বরাবরই অত্যন্ত শক্তিশালী। তিনি দূর্দান্ত অভিনয় করেছেন। শারীরিকভাবে কিছুটা বিকলাঙ্গ এবং একগুয়ে, নিষ্ঠুর চরিত্র তার। ট্রেইলারেই দেখেছন তার মাহফুজ এবং বুবলীর প্রতি অত্যাচারের নিষ্ঠুর দৃশ্য। প্রথম হাফে তার দাপটে অতিষ্ঠ সবাই।
রাশেদ মামুন অপু সেকেন্ড হাফে সকল আলো নিয়ে নিয়েছেন নিজের দিকে। এ যেন প্রতিভার লড়াই পুরো সিনেমা জুড়ে।তার চরিত্র আরেক “প্রহেলিকা”।
মেকিং এর দিক দিয়ে প্রথম সিনেমা বিশ্বসুন্দরীর সকল কমতিকে উতরে গিয়েছেন চয়নিকা চৌধুরী। অসাধারণ থ্রিলিং গল্প “প্রহেলিকা”। বিজিএম, সিনেমাটোগ্রাফি, মাহফুজ-বুবলীর রসায়ন, সিনেমার গানগুলো ভীষণ ভালো লেগেছে। সবচেয়ে ভালো ছিল সংলাপ, বাংলা সিনেমায় এত যত্নে সংলাপ সাধারণত লেখা হয়না। সেদিক দিয়ে প্রহেলিকা অনবদ্য।
সিনেমার কমতি ছিল কালার গ্রেডিং ও গানের আধিক্য। কিন্তু গল্প আর অভিনয়ে চাইলে এই কমতিটুকুকে অনায়াসে ক্ষমা করা যায়।
সিনেমায় রয়েছে চরম এক ক্লাইম্যাক্স,যা পুরো সিনেমার মোড় ঘুরিয়ে দেবে। এই সিনেমা বাংলার নারীদের প্রতিচ্ছবি, ভালোবাসার পাওয়া, না পাওয়ার গল্প, জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ঘটনার ঘনঘটার গল্প। যারা রহস্য, সম্পর্কের গভীরতা এবং মগজের খোরাক চান তাদের জন্য মাস্ট ওয়াচ প্রহেলিকা। এ সিনেমার গল্প এবং অসাধারণ উপস্থাপন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পাবার দাবীদার বলে মনে করছেন অনেকেই। বুবলি, মাহফুজ, নাসিরউদ্দীন, এবং রাশেদ মামুনের অভিনয়ে রীতিমত মুগ্ধ দর্শক। মাহফুজ-বুবলীর কেমিস্ট্রি দেখে আপনারা আরও একবার ভাববেন, এই জুটি বাস্তবেও প্রেম করছে না ত? এমনই জীবন্ত, চোখে পড়ার মত অনবদ্য রোমান্স তাদের। ” মেঘের নৌকাতে ইতিমধ্যে তার আভাস পেয়েছেন আপনারা।
এ পর্যন্ত ৮ টি হলে চলছে “প্রহেলিকা”।স্টার সিনেপ্লেক্সের ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাঁচটি শাখা এবং ব্লকবাস্টার সিনেমাস, লায়ন সিনেমাস ও চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিন মিলে মোট আটটি হলে মুক্তি পেয়েছে ‘প্রহেলিকা’। এরমধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন অনলাইন সূত্র অনুযায়ী সবগুলো হলেই হাউজফুল যাচ্ছে। তবে বক্স অফিস না থাকায় বক্স অফিস কালেকশনের কোন নির্ভরযোগ্য খবর এখনো পাওয়া যায়নি। খুব শীঘ্রই দেখা যাবে আপনার নিকটস্থ প্রেক্ষাগৃহে।
আমাদের প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে লাইক ও শেয়ার করুন এবং অন্যদের জানার সুযোগ করে দিন ।