bangla techSajib Debnathtechnology

টেক জায়ান্ট অ্যাপেলের বিরুদ্ধে মামলা : Apple vs Epic Games

Fornite কে Apple বের করে দিলো iPhone-এর অ্যাপস্টোর থেকে, তারপর Fornite গিয়ে মামলা করলো Apple-এর বিরুদ্ধে, তারপর ? কেঁচো খুঁড়তে কোন সাপ বেরিয়ে এলো ?

টেক জায়ান্ট অ্যাপেলের বিরুদ্ধে মামলা : Apple vs Epic Games


শুরুটা হয় জনপ্রিয় গেইম ফোর্টনাইট এর বিভিন্ন in-app purchase-এর ক্ষেত্রে পেমেন্ট মেথড নিয়ে। সাধারণত, অ্যাপেলের পলিসি অনুসারে প্রত্যেক অ্যাপ ডেভলপার যে কিনা অ্যাপেলের অ্যাপ স্টোরের মাধ্যমে এবং অ্যাপেলের পেমেন্ট মেথড ব্যবহার করে ডিজিটাল কেনাবেচা করছে, তাদের ৩০% কমিশন দিতে হবে অ্যাপেলকে।

 এবং এই অ্যাপেলের জোরজবরদস্তির ৩০% কমিশনের বিরুদ্ধে ফোর্টনাইটের ডেভলপার এপিক গেইমস। তারা এই পর্যায়ে গেইমের মধ্যে নিজেদের পেমেন্ট মেথড চালু করে, যেখানে তারা নিজেদের পেমেন্ট মেথড ব্যবহারে ইউজারকে ডিস্কাউন্টও দিচ্ছিলো। যাতে করে ইউজার ডিরেক্টলি ট্র্যানজ্যাকশন এপিক গেইমসের সাথেই করে। কিন্তু অ্যাপেল তো এমনটা হতে দিবে না। তাদের কথা হচ্ছে, “Security Concern” এর খাতিরে তারা কোনো ধরনের থার্ড পার্টি পেমেন্ট মেথড অ্যালাউ করবে না।

 এবং এই রেষারেষিটা বাড়তে থাকলো। অ্যাপেল এরপর ফোর্টনাইট গেইমটা তাদের iPhone আর iPad এর যে অ্যাপ স্টোর, তা থেকে রিমুভ করে দেয়। অ্যাপেলের যুক্তি ছিলো গেইমটি অ্যাপ স্টোর এবং অ্যাপেলের ল’ ভায়োলেট করেছে। এবার এই রিমুভালের পর অ্যাপেলকে Sue করে এই যুক্তিতে যে কিনা অ্যাপেল তাদের অ্যাপ স্টোর নিয়ে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা এবং Monopoly তৈরী করেছে !

মে মাসের শুরুর দিকে কোর্টে গড়ানোর পর বিষয়টা নিয়ে শুনানি শুরু হয়। এখানে উপস্থিত ছিলেন এপিক গেইমসের CEO Tim Sweeney, অ্যাপেলের CEO Tim Cook, অ্যাপেলের এক্সিকিউটিভস্ Phil Shciler, Craig Federighi, সেই সাথে মাইক্রোসফ্টে আর nVidia এর রিপ্রেজেন্টেটিভস্, আর একইসাথে আরোও ডজনখানেক মানুষ বিভিন্ন সাক্ষী হিসাবে। মূলত এখানে কথা উঠেছিলো অ্যাপেলের কমিশন, অ্যাপেলের পেমেন্ট মেথড, ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসে কোনো ধরনের মোনোপলি আসলেই তৈরী হয়েছে কিনা সেসব নিয়ে।

এখন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হওয়া শুরু!

ইতোমধ্যে ফোর্টনাইটের পক্ষ থেকে একটা অ্যাড ক্যাম্পেইন লঞ্চ করা হয় যেখানে #FreeFortnite হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে দেখানো হয় অ্যাপেল সবাইকে ডমিনেট করতেছে এবং অ্যাপেলের এই মনোপলি ভাঙতে ফোর্টনাইটের একজন ক্যারেক্টার এসে অ্যাটাক করে জায়ান্ট স্ক্রিনটা ভেঙে ফেলে। এই অ্যাডটি মূলত অ্যাপেলের ১৯৮৪ সালের নিজেদের MacIntosh লঞ্চ করবার পূর্বের অ্যাড ছিলো, যেখানে তখনকার কস্পিউটার মার্কেটের একঘেয়ে অবস্থা দূরীকরনে তারা মার্কেটে আসছে এমন প্রচারণা করেছিলো।

APPLE-EPIC FORTNITE LAWSUIT - EPIC GAMES

তো বিষয হচ্ছে, অ্যাপেল সবসময় নিজেদের নিয়ে গর্ব করে যে তাদের হাতে তৈরী অ্যাপ স্টোর আজ অব্দি বিশ্বের সবথেকে ভালো অ্যাপ মার্কেটপ্লেস, যা কিনা অন্য যেকোনো কম্পিটিটরদের চাইতে মানসম্মত। অ্যাপেল সাথে এটাও জুড়ে দেয় যে তারা তাদের অ্যাপ ডেভলপারদের কদর করে, এবং একইসাথে সম্মানজনক সম্মানীও অর্জনে সহায়তা করে। তবে এখানে বেঁকে বসে অনেক অ্যাপ ডেভলপাররাই। তাদের অভিযোগ, অ্যাপেলের অ্যাপস্টোর এমনই বিশেষভাবে ডিজাইনড্ যে কিনা ডেভলপারের ইচ্ছানুসারে সব ধরনের কাস্টমাইজেশন সম্ভব হয় অ্যাপটিতে। অনেক সময় হয় না এমন যে কিনা একেকটি অ্যাপের একেকটি নিজস্ব এনভায়রনমেন্ট থাকে, ডেভলপার চায় যেন এন্ড-ইউজার তার অ্যাপটি ব্যবহারের সময় তারই এনভায়রনমেন্টে লকড্ থাকুক, এক্সপেরিয়েন্সটা সে-ই কন্ট্রোল করুক। কিন্তু অ্যাপেল তা করতে দেয় না।

 অ্যাপেলের কথা হচ্ছে এমন যে, “না, খবরদার! অ্যাপস্টোরে থাকতে দিসি, বসতে দিলে শুইতে চাও কেন?” 😜 যাই হোক, Jokes Apart! বিষয়টা সিরিয়াস হতে থাকে যখন সাক্ষ্য প্রমাণ এবং পুরোনো নথিপত্র সামনে আসে এবং তাতে আরোও প্রমাণিত হতে থাকে যে এর আগেও বেশ ক’বার অ্যাপেল এমন সেচ্ছাচারিতা করেছে, এবং কোন অ্যাপ কোথায় কিভাবে র‌্যাংক হবে তাও অ্যাপেলের ইচ্ছানুসারে হয়ে থাকে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

 অ্যাপেল তাদের অ্যাপ স্টোরে অনেক অ্যাপ যেমন Google Voice আনার ক্ষেত্রে ইচ্ছা করে খারাপ উদ্দেশ্যে দেরী করে, গুগলের ডেভলপারদের অপেক্ষায় রাখে যতক্ষণ না তাদের মতো অন্য কেউ এই অ্যাপ না তৈরী করছে। মানে অ্যাপেল চায় এমন যেন কম্পিটিশনে তাদের ধারে কাছে কেই না অাসুক অ্যাপ স্টোরে।

এছাড়া অ্যাপেলের অ্যাপস্টোরের একটা পলিসি অনুসারে কোনো অ্যাপ তার অ্যাপের মধ্যেই নিজেদের স্টোর রেখে কোনো কিছু কেনা বেচা করতে পারবে না। কারন হিসাবে সেই সিকিউরিটি ইস্যু দেখায় অ্যাপেল। কিন্তু টুইস্ট এবং হিপোক্রেসি এখানেই যে অনেক স্বনামধন্য অ্যাপকে এমন সুবিধা দেয় আবার অন্য অ্যাপকে দেয় না !

এই পর্যায়ে সামনে আসে মাইক্রোসফ্ট, মাইক্রোসফ্টও কখনোই অ্যাপেলের অ্যাপস্টোরের এইসব পলিসি এবং ৩০% জোরপূর্বক কমিশনের পলিসি পছন্দ করেনি, সাপোর্টও করেনি। আর তাছাড়া মাইক্রোসফ্টের xCloud Gaming Service এর অ্যাপটি কখনোও অ্যাপস্টোরে লঞ্চই করতে দেয়নি অ্যাপেল, প্রত্যেকবার নানান অযুহাতে দূরে রেখেছে, বরং রাইভাল অ্যাপ Shadow-কে জায়গা করে দিঢেছে অ্যাপস্টোরে।

শেষমেষ অ্যাপেল মাইক্রোসফ্টকে প্রস্তাব দেয় এমন যে তাদের ক্লাউড গেইমিং-এর ক্ষেত্রে ইউজারকে প্রত্যেকটা গেইম আলাদা আলাদাভাবে ইন্স্টলেশনের সুযোগ দিতে হবে, কিন্তু মাইক্রোসফ্ট মনে করে এইটা ইউজারের জন্য এক ধরনের খারাপ এক্সপেরিয়েন্স হবে, তাই রাজী হয়নি তারা।

এদিকে ৩০% কমিশনের কথা যখন উঠছে, তখন দেখা যাচ্ছে মাইক্রোসফ্টও এমন ৩০% কমিশন নিচ্ছে ফোর্টনাইটের ক্ষেত্রে, সেখানে এপিক গেইমসের কোনো মাথাব্যাথা নেই। কিন্তু অ্যাপেলের অ্যাপস্টোরেই যত মাথাব্যাথা। কিন্তু ভিতরে আরেকটু ঢুকলে দেখা গেলো ফোর্টনাইটের প্রায় ৪৭% রেভিনিউ আসে মাইক্রোসফ্টের কল্যানে। এখন বাড়া ভাতে ছাঁই কে দেয় ? আর সেখানে অ্যাপেলের অ্যাপস্টোরের মাধ্যমে মাত্র ৭% রেভিনিউ জেনারেট করেছে ফোর্টনাইট।

কিন্তু অ্যাপেল তো নাছোড়বান্দা, আমাদের কমিশনে দিতেই হবে না হয় অ্যাপ স্টোরে জায়গা হবে না, যাও ভাগো। আবার iPhone আর iPad এ অ্যাপ সাইডলোডের তেমন সুযোগ থাকে না, সেটাও সমস্যা ইউজারদের জন্যে যে কিনা তারা চাইলে ফোর্টনাইট সাইডলোড করতে পারছে না। আবার অ্যাপেল তো নিজেদের অ্যাপ স্টোর ছাড়া আর কোনো অ্যাপ স্টোর আইফোনে সাপোর্টই করে না !

এ বিষয় ১৩ এপ্রিল ২০১২ তে এক ইমেইলে অ্যাপেলের Philips Schiller স্ট্রেইটকাট বলেন, “We run the store, We collect the revenue” ! মানে স্টোর তার লাভও তার। কোনো থার্ডপার্টি স্টোরের ভাত নেই এখানে।

কিন্তু এখানেই আবার হিপোক্রেট অ্যাপেল। থার্ড পার্টি অ্যাপস্টোর সাপোর্ট করবে না, কিন্তু Steam কিংবা Sony-র মতো বড় প্লেয়ারদেরকে মানা করতে পারেনি তারা। তাই তাদের ডেডিকেটেড অ্যাপ যেটাতে এইসব অ্যাপ ডেভলপাররা নিজেদের স্টোরও রেখেছে, সেসব অ্যাপেল অ্যাপস্টোরে রেখেছে। কিন্তু আবার কারোও কারোও ক্ষেত্রে অ্যাপেল তা মেনে নিতে নারাজ, যেমন আজকে এপিক গেইমস্ কিংবা মাইক্রোসফ্টের xCloud Gaming Service !

অন্যান্য কম্পিটিটর প্ল্যাটফর্ম যেমন অ্যান্ড্রয়েড, উইন্ডোজ, এমনকি অ্যাপেলের নিজেদেরই ম্যাক ওএস পর্যন্ত থার্ড পার্টি অ্যাপস্টোর অ্যালাউ করে, যেখানে আপনি চাইলে যেকোনো অ্যাপ বা সফ্টওয়্যার সাইডলোড করতে পারবেন। কিন্তু সাইডলোডের সুযোগ কেন দেয় না অ্যাপেল মোবাইল ডিভাইসে, সে বিষযে অ্যাপেল বলে, “আমরা যদি ম্যাক ওএস এর সিকিউরিটি টেকনিক মোবাইল ডিভাইসে কাজ লাগাই তবে অনেক বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে ইউজাররা, কারন কম্পিউটারের চেয়ে অনেক বেশি ডেটা আদান-প্রদান হয় মোবাইল ডিভাইসগুলোতে। যা কিনা লিক হওয়ার বা হ্যাক হওয়ার সুযোগ থাকবে অনেকবেশি যদি কিনা আরোও ফ্রিডম দেওয়া হয়!”

তবে ফোর্টনাইটকে নিজেদের অ্যাপস্টোর না চালাতে দেওয়ারও একটা কারন দেখিয়েছে অ্যাপেল যে কিনা এপিক গেইমস্ তাদের স্টোরে রিডিরেক্ট করে এমন সব আইটেম বেচতে চায় যা কিনা আসলে অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট বা গেইমস আর কি ! অ্যাপেলের ভাষ্যমতে, মানুষ আইফোন আইপ্যাড কেনে সিকিউরিটি এবং এন্ড ইউজার হিসাবে একধরনের ডিলাইটফুল এক্সপেরিয়েন্সের জন্য। কিন্তু এমনসব উদ্ভট থার্ডপার্টি অ্যাপ স্টোর তাদের নিজেদের এই আইফোন অাইপ্যাডগুলোর উপরে কন্ট্রোল কমিয়ে ফেলবে। আর অ্যাপেল হিস্টোরিক্যালি সবসময় তাদের আইফোন আইপ্যাডগুলোকে অনেক বেশি কন্ট্রোলে রেখেছে ইভেন আপনি ডিভাইসটা কিনে বাড়ি আনার পরেও।

তারপর ? সব কাহিনীর পর শেষে কি হলো ? কে জিতলো ?

আসলে এখানে জিতে নাই কেউ। কারন এখনোও কিছুকাল আরোও চলবে মামলামোকদ্দমা। এ ধরনের আনফেয়ার বিজনেস পলিসি অবশ্যই কাম্য নয়। হয়তো অ্যাপেল জিতে যাবে তাদের সিকিউরিটি অজুহাতে। কিন্তু অ্যাপেল জিতলেও এপিক গেইমস্ হারছে না, কারন এরপর থেকে হয়তো অ্যাপেলের অ্যাপ স্টোরের পলিসি থেকে শুরু করে সবকিছুতেই এক ধরনের ড্র্যাস্টিক চেঞ্জ আনবে অ্যাপেল। Win-Win Situation !

দেখা যাক ভবিষ্যতে কি হয় না হয়, বিষয়টা বেশ ইন্টারেস্টিং ছিলো, শেয়ার করলাম। 

লেখকঃ – সজীব দেবনাথ , কনটেন্ট ক্রিয়েটর, প্রিয়জানালা 

আমাদের ফেইসবুক পেইজ- প্রিয়জানালা

 আরো পড়ুনঃ বাদুড় : এক বিস্ময়কর প্রাণী – বাদুড়ের বিস্ময়কর তথ্য

Back to top button