bangla blogcurrent affairsGeneral Knowledge

পদ্মা সেতু- আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু- দক্ষিণের মানুষের ভাগ্য ঘুরবে?

 স্বপ্নপূরণের আরেক নাম-পদ্মাসেতু!

পদ্মা সেতু! আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বর্তমানে দেশে ১০-১২টি মেগা প্রকল্প চলছে যার পথিকৃৎ পদ্মা সেতু প্রকল্প। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সাথে রাজধানী ঢাকা সহ সারা দেশকে সম্পৃক্ত করার কাঙ্ক্ষিত এই প্রকল্প নিয়ে দেশব্যাপী মানুষের অনেক স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে অবকাঠামো উন্নয়ন তথা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক হারে শিল্প কারখানা স্থাপিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে মংলা বন্দরে গতি আসবে, সুন্দরবনে পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে। দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সাথে ঢাকার যোগাযোগ অনেক সহজ এবং কম সময়সাপেক্ষ হয়ে যাবে। 

পদ্মা সেতু- আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু- দক্ষিণের মানুষের ভাগ্য ঘুরবে?

পদ্মা নদীর উপর নির্মিত পদ্মা সেতু একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হয়। ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার।

বাংলাদেশের স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। বাংলাদেশের গর্ব পদ্মা সেতু আজ সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বপ্ন অনেকেই অলীক কল্পনা বলে ভাবলেও সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। ২৫ জুন হতে যাচ্ছে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। এরফলে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একটি সাহসী সিদ্ধান্ত তাকে একজন আত্মবিশ্বাসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, ধারাবাহিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। 

পদ্মা সেতু- আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু- দক্ষিণের মানুষের ভাগ্য ঘুরবে?

২০২২ সালের জুনে সেতুটি চালু হয়ে গেলে, এটি রাজধানী এবং ২১টি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলার মধ্যে একটি সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে, যা এই জেলার ক্ষুদ্র অর্থনীতির পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে অসামান্য অবদান রাখবে। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি অতি অল্প সময়ে পণ্য পরিবহন এবং যাতায়াত সুবিধা মানুষের দুর্ভোগ কমিয়ে বাণিজ্য উন্নয়ন ঘটাবে। এটি এমন কিছু জেলার সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন করবে যেখানে বর্তমানে কোনো রেল যোগাযোগ নেই। পদ্মা সেতুর নিকটবর্তী বহু কলকারখানা গড়ে উঠবে যা বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। দেশের বেকারত্ব ও দারিদ্র্য দূরীকরণে পদ্মা সেতু ব্যাপক অবদান রাখতে চলেছে। ইতোমধ্যেই টোল নিয়ে সেতু পার হওয়া শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। ২৫ তারিখ সেতু উদ্বোধনের পর সবরকম যানবাহনই টোল দিয়ে সেতু পার হতে পারবে।

একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো সেই অঞ্চলগুলোর জন্য একটি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। রাজধানী ও রাজধানীসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং দেশের পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি উন্নত ও নিরবচ্ছিন্ন সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য পদ্মা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের প্রথম মেয়াদের শেষের দিকে ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়ায় সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। 

পদ্মা সেতু- আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু- দক্ষিণের মানুষের ভাগ্য ঘুরবে?

দ্বিতলবিশিষ্ট সেতুর একতলায় নির্মিত হবে রেললাইন। দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার এর এই রেললাইন স্থাপনে যশোর থেকে ঢাকা যাওয়া যাবে মাত্র ২ ঘন্টায়। ঢাকা-যশোর রেলপথ হবে ব্রডগেজ রেলপথ। এটি বাংলাদেশ সরকারের রেলপথ মন্ত্রাণালয়ের অধীনে নির্মাণ করা হচ্ছে। লাইনটি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল জেলা হয়ে যশোর পৌঁছাবে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালে।

পদ্মা সেতু নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতু প্রকল্পের নাম কি?

উ: পদ্মা বহুমুখী সেতু।

প্রশ্ন-:পদ্মা সেতু প্রকল্পে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম কী?

উ: চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড।

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতুর নির্মান কাজ শুরু হয় কবে থেকে?

উ: ৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে।

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য কত কিলোমিটার?

উ: ৬.১৫ কি.মি

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক কত কিলোমিটার?

উ: দুই প্রান্তে ১৪ কি.মি.

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা কত?

উ: ৩৮৩ ফুট।

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতুর ধরন কেমন?

উ: দ্বিতলাবিশিষ্ট।

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা কত?

উ: ৪২ টি।

প্রশ্ন: পদ্মা কতটি জেলার সাথে সংযোগ হয়েছে?

উ: ২১ টি জিলা।

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতুর স্পান সংখ্যা কতটি?

উ: ৪১ টি

প্রশ্ন-: ৪১ তম স্প্যান কত তারিখে বসানো হয়?

উ: ১০ ডিসেম্বর ২০২০

প্রশ্ন-: ৪১ তম স্প্যান বসানো হয় কত নং পিলারের উপর?

উ: ১২-১৩ নং।

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতু হবার জন্য দেশে জিপিও বাড়বে কত?

উ: ১.২%।

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতু নিয়ে কোন মন্ত্রালয় কাজ করে?

উ: সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রালয়।

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতুর প্রস্থ কত?

উ: ১৮.১০ মিটার বা ৫৯.৪ ফুট।

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতুর মোট পাইলিংয়ের সংখ্যা কত?

উ: ২৬৪ টি।

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতুর পরিচালক কে?

উ: মোঃ শফিকুল ইসলাম।

প্রশ্ন-: সবগুলো স্প্যান বসাতে মোট কত সময় লাগে?

উ: ৩৮ মাস।

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতু বিশ্বের কত তম বৃহত্তম সেতু?

উ: ১১ তম।

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতুর ডিজাইনার কে?

উ: এ.ই.সি.ও.এম (AECOM) 

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতুর ভুমিকম্প সহনীয় মাত্রা কত?

উ: রিখটার স্কেল ৯।

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতুর প্রতিটি স্প্যানের ওজন কত?

উ: ৩১৪০ টন।

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতুর অবস্থান কতটি জেলা নিয়ে?

উ: ৩ টি।

প্রশ্ন-: পদ্মা সেতু কোন কোন জেলা নিয়ে বিস্তৃত?

উ: মুন্সিগঞ্জ,শরীয়তপুর ও মাদারীপুর।

প্রশ্ন-: কত তারিখে পদ্মা সেতু উদ্ধোধন করা হবে?

উ: ২৫  জুন ২০২২।

   প্রিয়জানালা’র প্রিয় পাঠকঃ বাংলা ব্লগ, তথ্য ও প্রযুক্তি, সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান, খেলাধুলা, পড়াশুনা, বিউটি টিপস, স্বাস্থ্য টিপস, সিনেমা রিভিউ,  চাকরির গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলোর আপডেট পেতে এবং মতামত প্রকাশের জন্য আমাদের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ প্রিয়জানালা এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।  

Back to top button