একনজরে বিশ্বকাপ ২০২২- মেসির স্বপ্নপূরণ ও বিশ্বকাপের ঘটনাবলী
FIFA World Cup 2022 Overview
কাতার বিশ্বকাপ যেন পণ করেছিল সব সমীকরণ, অনুমান আর নিশ্চিতের বেড়াজাল ভেঙে দিয়ে নতুন ইতিহাস গড়বে। শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনা চরম নাটকীয়তা আর টানটান উত্তেজনার অনেক সমীকরণ বদলে দেওয়া ম্যাচ দেখল ফুটবল বিশ্ব। গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোতে অঘটনের পর অঘটন ঘটতে দেখে সবার সব হিসাব পরিবর্তন হয়ে গেছে এবার। বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার আকাশছোয়া প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই খালি হাতে ফিরেছে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি, দুইবারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে ও ২০১৮ সালের সেমিফাইনালিস্ট বেলজিয়াম।
গ্রুপপর্বের ঘটন- অঘটন
বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার আর্জেন্টিনাকে শুরুকেই হারিয়ে হিসাব বদলে দেয় সৌদি আরব। লিওনেল মেসিদের হতাশ করে নিজেদের বিশ্বকাপে নিজেদের সবচেয়ে বড় জয় পায় সৌদি আরব। মেসির গোল স্বত্তেও ২-১ গোলে হেরে শুরুতেই বড় রকমের ধাক্কা খায় আর্জেন্টিনা। ৩৬ টি ম্যাচ টানা অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙে যায় তাদের। গ্রুপ পর্ব পার হওয়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তা দেখা দেয় আর্জেন্টিনা শিবিরে। কিন্তু সেই হতাশা কাটিয়ে ঠিকই শেষ ষোল নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা। আশার আলো জ্বালিয়েও শেষ ষোলো নিশ্চিত করতে পারেনি সৌদি আরব। সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটে ৪ বারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানির সাথে। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের হতাশা কাটিয়ে পঞ্চমবারের মত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার মিশন নিয়ে এসেছিল জার্মানি। কিন্তু শুরুতেই তাদের স্বপ্নভঙ্গ করে দেয় এশিয়ার দেশ জাপান। জাপান জয় পায় ২-১ গোলে। অবশেষে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় অন্যতম ফেবারিট দল জার্মানিকে। ২০১৮ বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান অর্জন করা বেলজিয়াম দলটিও মরক্কোর কাছে অভাবনীয় পরাজয় বরন করে ২-১ গোলে এবং শুরুতে আশা জাগালেও এই হারেই তারা বিশ্বকাপ মিশন থেকে ছিটকে পড়ে। অঘটনের ঘনঘটা থেকে বাদ যায় নি ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে জেতার পর বেশ গা ছাড়া ভাবেই তৃতীয় ম্যাচে ক্যামেরুন এর বিপক্ষে মাঠে নামে ব্রাজিল এবং নেইমার বিহীন বেঞ্চ টিম খেলে ১-০ ব্যবধানে হেরে যায় ব্রাজিল। অবশ্য আগের দুই ম্যাচ জেতায় অনায়াসে ব্রাজিল শেষ ষোলতে চলে যায়।
রাউন্ড ১৬ তে ম্যাচের ফলাফল
রাউন্ড ১৬ এ পর্তুগাল ও সুইজারল্যান্ড ম্যাচের ফলাফল, সুইজারল্যান্ডকে ৬-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে পর্তুগাল। বিশ্বকে চমকে দিয়ে মরক্কো বনাম স্পেনের ম্যাচে টাইব্রেকারে ৩-০ গোলে স্পেনকে হারিয়ে মরক্কো কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে। ব্রাজিল ও সাউথ কোরিয়া ম্যাচে, সাউথ কোরিয়াকে ৪-১ গোলে হারিয়ে ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে। নেদারল্যান্ডস যুক্তরাষ্ট্রকে হারায় ৩-১ গোলে। ফ্রান্স পোল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে। ইংল্যান্ড ও সেনেগালের ম্যাচে, ইংল্যান্ড ৩-০ গোলে সেনেগালকে হারিয়ে কোয়ার্টার নিশ্চিত করে। জাপান ও ক্রোয়েশিয়ার উত্তেজনাকর ম্যাচে ১-১ সমতায় থেকে টাইব্রেকারে ৩-১ গোলে জাপানকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে ক্রোয়েশিয়া। আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে।
নেইমারের কান্নাজড়িত বিশ্বকাপ
৯ ডিসেম্বর ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলের ব্যবধানে হেরে কাতার বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় ব্রাজিল। বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর মাঠে শিশুর মত কান্নায় ভেঙে পড়েন দলটির সুপারস্টার ফুটবলার নেইমার। তার কান্নায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সতীর্থসহ দর্শক, সমর্থক এমনকি বিপক্ষ দলও।
ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ১-১ এ নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ায় অতিরিক্ত সময়ের খেলার ১৫ মিনেটে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন নেইমার। কিন্তু সেই লিড বেশি সময় ধরে রাখতে পারেনি ব্রাজিল।
মাত্র ১০ মিনিট ব্যবধানে পেটকোভিচের গোলে সমতায় ফেরে ক্রোয়েশিয়া। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় ব্রাজিলের, সেই সাথে ভেঙে যায় নেইমারের বিশ্বকাপ জয়ের। ৩০ বছর বয়সী নেইমার ইনজুরির কারণে আর কোন বিশ্বকাপ খেলবেন না বলে জানিয়েছেন। তাই শেষ বিশ্বকাপে স্বপ্নের বিশ্বকাপ জিততে না পারার কষ্ট নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কাদতে কাদতেই মাঠ ছাড়েন নেইমার। তার কান্নায় কেদেছেন তার অগণিত ভক্ত-সমর্থক। বিপক্ষ দলের সাপোর্টাররাও নেইমারের কান্নায় কষ্ট পেয়েছেন। সত্যিই এই সুপারস্টার ফুটবলার বিশ্বকাপের দাবিদার ছিলেন।
কোয়ার্টার ফাইনাল এর ফলাফল
কোয়ার্টার ফাইনালে ৯ ডিসেম্বর ক্রোয়েশিয়া ব্রাজিলকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করে। আর্জেন্টিনা নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারিয়ে সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করে। মরক্কো পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়ে সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করে। ফ্রান্স ইংল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করে।
রেফারি লাহোসের- হলুদ কার্ডের বিশ্বরেকর্ড
বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম হট ফেভারিট আর্জেন্টিনা। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে ৪-৩ গোলে জিতে শিরোপার অনেকটাই এগিয়ে যায় তারা। তবে এই ম্যাচে নেতিবাচকভাবে আলোচনায় এসেছে রেফারিং। স্প্যানিশ রেফারি আন্তনিও মাতেও লাহোস আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন ১৮টি। মোট ৪৮ বার তিনি ফাউলের বাঁশি বাজান। মেসিকেও কার্ড দেখিয়েছেন রেফারি লাহোস। তার এই হলুদ কার্ডের যত্রতত্র ব্যবহারে ক্ষুব্ধ সবাই। এজন্য ম্যাচ শেষে ফিফার তদন্তে পরবর্তী ম্যাচগুলোর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় লাহোসকে।
রোনালদোর কান্না
পর্তুগালের কিংবদন্তি প্লেয়ার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো -এবার ভক্তদের জানিয়েছিলেন বিশ্বকাপে আসার পূর্বে নিজেঁকে ভালোভাবে প্রস্তুত করেসেন তিনি। আশায় বুক বেঁধেছিলেন ভক্তরা। শুরুটাও করেছিলেন দারুণভাবে। ঘানার বিপক্ষে পেনাল্টিতে ম্যাচের প্রথম গোলটি করেন তিনি। সেদিন পর্তুগাল ম্যাচ যেতে ৩-২ এ। পরের দুই ম্যাচে গোল পাননি এই বিশ্বসেরা ফুটবলার। শেষ ষোলতে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে সেরা একাদশেই নি কোচ ফারর্নান্দো সান্তোস। এ নিয়ে ভক্ত-সমর্থকরা ভীষণ হতাশ হন। কারন পর্তুগালের হয়ে রোনালদোর গোলসংখ্যা ৮, আর একটি গোল করলেই একটি গোল করতে পারলেই ইউসেবিওর রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলতে পারতেন রোনালদো। কোয়ার্টার ফাইনাল এ ও শুরুর একাদশে রোনালদোকে রাখেন নি কোচ। কিন্তু দল প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়লে কোচ রোনালদোকে মাঠে নামান। সমস্ত অবহেলার জবাব চাইলে মাঠেই গোল করে দিতে পারতেন রোনালদো। কিন্তু তিনি বেশকিছু গোলের সুযোগ মিস করেন। পরের ম্যাচেও মরক্কোর বিপক্ষে বেঞ্চেই বসে ছিলেন রোনালদো। মরক্কোর কাছে ১-০ গোলে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় পর্তুগাল। ম্যাচ শেষে হতাশায় শিশুর মত কাদতে থাকেন রোনালদো। কিংবদন্তী এই ফুটবলার, যার কারণে পর্তুগালের এত সাপোর্টার, তিনিই কিনা শেষ ম্যাচে মাঠেই নামতে পারেন নি। তার বর্নিল ক্যারিয়ারে একটা বিশ্বকাপের অভাব নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন তিনি। CR7 কে মাঠে না নামানোয় এবং পর্তুগাল কোয়ার্টার ফাইনাল হেরে বিদায় নেওয়ায় ফার্নান্দো সান্তোসকে কোচের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে দেশটির ফুটবল এসোসিয়েশন।
সেমি ফাইনালের ফলাফল
সেমি ফাইনালে ফ্রান্স মরক্কোকে ২-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনাল নিশ্চিত করে। সেমিতে আর্জেন্টিনা ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে তাদের বিশ্বকাপ ফাইনাল নিশ্চিত করে।
রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে ঐতিহাসিক বিজয়!
২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর, কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে বিশ্ব সাক্ষী হয়ে থাকল এক অবিশ্বাস্য শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালের। প্রথমে ভারী একপেশে ম্যাচ ছিল, আর্জেন্টাইন দল থেকে আক্রমনের পর আক্রমন। ডি মারিয়ার দাপটে ফ্রান্সের প্লেয়াররা একেবারে ম্রিয়মান ছিলেন। তাদের পায়ে বলই খুব কম যাচ্ছিল। দেম্বেলের ফাউলে পেনাল্টি পেয়ে যায় মেসিরা। মেসির পেনাল্টিতে আর্জেন্টাইন শিবিরে উল্লাসধ্বনি ওঠে।ক কিছুক্ষন পরেই ডি মারিয়ার আত্মবিশ্বাসী অসাধারণ গোলে আর্জেন্টাইন শিবিরে প্রায় বিজয় উল্লাস শুরু হয়ে যায়। কারণ তখনও ফ্রান্সকে যেন খুজেই পাওয়া যাচ্ছিল না! ৮০ মিনিটের মাথায় ইতিহাস যে এভাবে বদলাবে ভাবেনি কেউ! পেনাল্টিতে এমবাপ্পের গোল খেলায় উত্তেজনা ফিরিয়ে আনে। আত্নবিশ্বাসী এমবাপ্পে পরের ৯৬ সেকেন্ডের মাথায় আবার একটি গোল দিলে পুরো ফুটবল বিশ্ব বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। এভাবে ম্যাচ ঘুরে যাবে, ভাবতেও অবাক লাগে!
২-২ এ নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হয়। শুরু হয় এক্সট্রা ৩০ মিনিট। মেসির কৌশলী তড়িৎ গোল আর এমবাপ্পের পেনাল্টিতে গোলে আবারও ৩-৩ সমতায় ম্যাচের এক্সট্রা টাইম শেষ হয়। এই সময়টুকুতে দর্শক খেলা থেকে এক সেকেন্ডের জন্য চোখ সরাতে পারেন নি। এতটাই আক্রমনাত্মক খেলা ছিল। এরপর খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। আর্জেন্টিনা ৪ টি গোল এবং ফ্রান্স শিবির থেকে ২ টি গোল হয়। গোলকীপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজের জাদুতে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায় এবং নিশ্চিত করে স্বপ্নের বিশ্বকাপ। কাল মার্টিনেজ যদি টাইব্রেকারে গোল আটকাতে না পারতেন তবে শেষ হাসিটা মেসিরা হাসতে পারতেন না। টাইব্রেকার সহ ৪ টি গোল করেন এমবাপ্পে একাই। কিন্তু সতীর্থদের ব্যর্থতায় কাল তাকে প্রায় পেয়ে যাওয়া বিশ্বকাপ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। শেষ হাসি হাসেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনার কোচ কান্নায় ভেঙে পড়েন খুশিতে। ডি মারিয়া, গোলকীপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, আলভারেজ, দিবালারা আবেগে এবং খুশিতে মেতে ওঠেন। কাল এক ঐতিহাসিক জয় পায় আর্জেন্টিনা যার অপেক্ষা করতে হয়েছে ৩৬ বছর। মেসির পঞ্চম বিশ্বকাপে মার্টিনেজ তার দেওয়া কথা রাখেন। তিনি বলেছিলেন মেসিকে তিনি বিশ্বকাপ এনে দেবেন, এবং মার্টিনেজ তার কথা রেখেছন।
গোল্ডেন গ্লাভস- এমিলিয়ানো মার্টিনেজ
গোল্ডেন গ্লাভস যেতেন আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ যাকে সবাই “আর্জেন্টিনার প্রাচীর” বলে আখ্যা দিয়েছেন। এবারের বিশ্বকাপের সেরা গোলকীপার মার্টিনেজ, তিনি দেয়ালের মতই গোল রক্ষা করেছেন। মার্টিনেজের অসাধারণ , দুর্দান্ত গোল কিপিংয়ে আর্জেন্টিনা ফাইনালে ওঠে এবং ফাইনালেও টাইব্রেকার গোল রক্ষাসহ নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে হয়ে যান ম্যাচের হিরো। মার্টিনেজ মেসিকে কথা দিয়েছিলেন জীবন দিয়ে হলেও বিশ্বকাপ এনে দেবেন মেসিকে, এবং মার্টিনেজ তার কথা রেখেছেন। অধিনায়কের প্রতি এমন বিরল ভালোবাসা পৃথিবীর ফুটবল ইতিহাসে সত্যিই বিরল!
সেরা তরুন প্লেয়ার
সেরা তরুণ প্লেয়ারের পুরস্কারও যেতে আর্জেন্টাইন দলের তরুণ এনজো ফার্নান্দেজ।
গোল্ডেন বল
গোল্ডেন বুট, গোল্ডেন বল সবই পাওয়ার কথা ছিল ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসির। কিন্তু রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে শেষ মুহূর্তে এমবাপে ম্যাজিকে গোল্ডেন বল হাতছাড়া হয়ে যায় মেসির। কিন্তু মেসি তো মেসিই। তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান হয়েছে প্রতিটি ম্যাচে। পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে তার সর্বোচ্চ গোল,এসিস্ট, বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড, সফল অধিনায়ক সব মিলিয়ে তার পুরো সিরিজ পারফর্ম এর জন্য তিনি সেরা প্লেয়ার হিসেবে গোল্ডেন বল জেতেন।
গোল্ডেন বুট
এবারের বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট পাওয়ার লড়িয়ে এগিয়ে ছিলেন দুই তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসি এবং কিলিয়ান এমবাপে। ফাইনালের আগে দুজনেরই গোলসংখ্যা ছিল ৫। ফাইনালে যে গোলে এগিয়ে থাকবে তারই হবে গোল্ডেন বুট। ফাইনালে প্রথম পেনাল্টি দিয়ে মেসি এগিয়ে থাকলেও ৯০ মিনিটের খেলার প্রায় শেষার্ধে কিলিয়ান এমবাপে পেনাল্টিসহ ২ টি গোল করেন। এরপর মেসি আবারও একটি গোল দিলে গোলসংখ্যা দুজনেরই সমান হয়ে যায়। এক্সট্রা টাইমে এমবাপে আবারও পেনাল্টিতে গোল দিলে মেসির ৭ গোল , এবং কিলিয়ান এমবাপের ৮ গোল হয়। গোলসংখ্যা বেশি হওয়ায় গোল্ডেন বুট পেয়ে যায় কিলিয়ান এমবাপে ! ফাইনালের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে এমবাপে আর মেসির মধ্যে গোল্ডেন বুটের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে জেতেন এমবাপে।
কিলিয়ান এমবাপ্পে- দুর্দান্ত প্রতিভা, অসামান্য আত্নবিশ্বাস
২০১৮ সালের বিশ্বকাপে করেছিলেন ২ গোল। মাত্র ১৯ বছর বয়সে ফাইনালে ২ গোল করে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ এনে দেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। এমবাপ্পে তার দুরন্ত গতি, এবং অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যর জন্য মাত্র ২৩ বছর বয়সেই বিশ্বসেরা ফুটবলারদের মধ্যে এখন অন্যতম। এবারের বিশ্বকাপে ফাইনালের আগে গোল করেন ৫ টি। ফাইনালের আগেই তিনি জানিয়েছিলেন ফাইনালেই প্রমান হবে কে সেরা। এমবাপ্পে কথা রেখেছিলেন- প্রায় হাতছাড়া হওয়া ম্যাচের শেষের ১০ মিনিটে পরপর দুই গোল দিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন তিনি। এরপর পেনাল্টিসহ টাইব্রেকারে আরও দুইটি গোল দিয়ে মোট ৪ টি গোল করেন ফাইনালে। বিশ্বকাপে ৮ টি গোল করে জিতে নেন গোল্ডেন বুট, যা মেসিই পাবে বলে মনে হচ্ছিল। অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী এই ফুটবলার একাই প্রায় জিতিয়ে দিয়েছিলেন ফ্রান্সকে। তার এই অসামান্য ক্রীড়া কৌশল নজর এড়ায়নি কারো! এমবাপ্পেই যে আগামী দিনের অনবদ্য সুপারস্টার হতে চলেছেন তা তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন। দলীয় পারফর্মেন্সে মেসি সেরা হলেও, একক পারফর্মেন্সে বেশিরভাগ মানুষই ফাইনাল ম্যাচে এমবাপ্পেকে এগিয়ে রেখেছেন। যদিও একার দক্ষতায় দল জেতে না। এবং শুধু গোল দেওয়াই সেরা হওয়ার মাপকাঠি নয়। কিন্তু এমবাপ্পে যে একাই ১০০ তা প্রমাণে তিনি সফল হয়েছেন।
লিওনেল মেসি- ফুটবলের জাদুকর!
লিওনেল মেসি- ফুটবলের জাদুকর। জীবন্ত এক কিংবদন্তী। মাঠের এক হৃদয়স্পর্শী নেতা, যার জন্য সতীর্থরা যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত। সব শিরোপা, সব অর্জনই তার আছে। অভাব ছিল শুধু একটা বিশ্বকাপের। এবারের বিশ্বকাপে ৭ টি গোল করেন মেসি, ৩ টি এসিস্ট, দলীয় ও ব্যক্তিগত সেরা পারফর্মেন্স এ জিতে দিয়েছেন গোল্ডেন বল। অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন সবার হৃদয়। নম্রতায়-ভদ্রতায় আর বিনয়ে, সেই সাথে অসামান্য, অবিশ্বাস্য ক্রীড়া নৈপুণ্যে তিনি যেন একের ভিতর সবকিছু। তার মত একজনকে পেয়ে শুধু আর্জেন্টিনা নয়, পুরো ফুটবল বিশ্বই গর্বিত।
এবারের বিশ্বকাপ যেন ঘটন-অঘটন আর চমকের বিশ্বকাপ ছিল।।কে জিতবে আর কে হারবে তা শেষ মুহূর্তে ও বোঝা মুশকিল ছিল। ৩৬ বছরের অপেক্ষার পর আর্জেন্টিনা কাপ নিতে পারবে এ বিশ্বাস ছিল না অনেকেরই। কিন্তু আর্জেন্টিনা নিজেদের সেরাটা দিয়ে লিওনেল মেসির স্বপ্ন পূরন করেছেন। মেসি নিজের অসামান্য পারফর্মেন্স এবং নেতৃত্ব দিয়ে ৩৬ বছর পর জিতেছেন বিশ্বসেরার ট্রফি। অভিনন্দন আর্জেন্টিনা। সেই সাথে অভিনন্দন সকল টিমকে। অসামান্য ক্রীড়া নৈপুণ্য দিয়ে এবারের বিশ্বকাপকে সবচেয়ে চমকপ্রদ বিশ্বকাপ করে তোলায়!
– এ যেন হাজার বছর পর পরম সুখের এক ঘুম! বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে ফিরেছে আর্জেন্টিনা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পরম আনন্দে বিশ্বকাপ নিয়ে ঘুমোচ্ছেন লেওনেল মেসি! ছবি ভাইরাল হতেই আবেগে ভাসলেন আর্জেন্টিনা সমর্থকরা