
ইতিহাস গড়তে চলেছে দামাল। গত ২৮ অক্টোবর শুক্রবার সারাদেশে মুক্তি পেয়েছে “দামাল”। পরাণ এর তিনমাসের সাফল্যের পর দামাল ও বছরের বাকী সময়টুকু হলে রাজত্ব করবে বলে দর্শক মতামতে জানা গেছে। দর্শকরা পরিবারসহ দলে দলে “দামাল” প্রচারনার এমন অভিনব কৌশল ইমপ্রেস টেলিফিল্মের কোন সিনেমায় এর যায় নি। ফুটবল ম্যাচের আয়োজন, লাইভ প্রোগ্রাম , আলাদা মিউজিক ভিডিও, বাংলাদেশী সিনেমা হিসাবে প্রচারনা যেন অন্য মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে “দামাল” এর। সিনেমার পরিচালক রায়হান রাফি নিজেই বলেছিলেন “দামাল” তার শ্রেষ্ঠ নির্মাণ। খোদ পরিচালকের এমন আগাম উক্তি অনেকেই সহজভাবে নিতে পারেন নি। কারন এমন উক্তিতে দর্শক প্রত্যাশা বেড়ে যায় বহুগুনে। সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে তো “দামাল”? এমন প্রশ্ন ছিল সবার মুখে মুখে। কিন্তু এবার পরিচালকের কাজ আসলেই শেষ। এবার দর্শকদের মুখেই চলছে “দামাল” এর জয়জয়কার! দেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট দুইটা সময়কে এত নিখুঁতভাবে সমন্বয় করা হয়েছে যা এর আগে অন্য কোন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমায় দেখা যায় নি। বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের আন্তর্জাতিক সচেতনতা ও অর্থনৈতিক সাহায্যের উদ্দেশ্য ভারতজুড়ে ১৬ টি প্রীতি ম্যাচে অংশ নেওয়ার কাহিনী “দামাল” এ দারুনভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। লিড কাস্ট এ ছিলেন অনেকেই। অভিনয়ের লড়াইয়ে কেউ কাউকে হারাতে পারেন নি। লিড কাস্ট থেকে সাপোর্টিং কাস্ট সবাই নিজের সেরাটা দিয়েছেন। পরিচালক রায়হান রাফির মূল স্বার্থকতা এখানেই , কারন অভিনয় জীবন্ত না হলে কাহিনী উপস্থাপন কখনোই পুর্নতা পায়না। প্রথম হাফে চরিত্রগুলোর পরিচিতি , কাহিনী বিন্যাস, সুমি সিয়াম , এবং রাজ-মিমের প্রণয় বেশ ভালভাবে উস্থাপন করা হয়েছে।

পরবর্তী ধাপে মুক্তিযুদ্ধ ,খেলা ফুটবল ম্যাচ সবকিছুর সমন্বয় করা হয়েছে। দর্শকদের মতে সেকেন্ড হাফই বেশি ভাল ছিল। সিনেমার কাহিনী অনেকটাই অনুমেয় হলেও তা বিরক্তির সৃষ্টি করবে না। মিমের অভিনয় আপনাকে আবেগপ্রবন করে তুলবে। বাঙালি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সেই সময়ে আপনি যে কখন একাত্ম হয়ে যাবেন নিজেই বুঝতে পারবেনা না। হলের দর্শকদের বেশিরভাগই নিজেদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি। সিনেমা বর্তমান এবং মুক্তিযুদ্ধ দুই সময়ের কালার গ্রেডিং ছিল মানানসই। স্থান নির্বাচন ,কস্টিউম , ডায়ালগ , কাস্টিং সবকিছুই ছিল ঠিকঠাক। প্রতিটি অভিনেতা অভিনেত্রীকেই তাদের চরিত্রে সঠিক নির্বাচন মনে হয়েছে। রাজের অভিনয় ছিল অন্যান্য সিনেমা থেকে একদম অন্যরকম। পরান , না ডরাই , গুনিন এর রাজের সাথে এই রাজকে একেবারেই মেলাতে পারবেন না দর্শক। মীমের অভিনয় ছিল হৃদয় ছোঁয়া। প্রেমিকা চরিত্রে ছটফটে তরুনী তেমনি মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্যে তার আগ্রাসী রুপ ফুটে উঠেছে। সিয়ামের চরিত্রটি দর্শকদের মনে দাগ কেটেছে। রাজ ও সিয়াম দুজনেই ছিলেন অনবদ্য। ইন্তেখাব দিনার, শাহনাজ সুমী, রাশেদ অপু সকলেই তাদের সেরাটা দিয়ে অভিনয় করেছেন। তবে সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফী, কালার গ্রেডিং, কাস্টিং গ্রাফিক্স, দৃশ্যায়ন, গান, ঘটনা প্রবাহ সবকিছু ঠিক থাকলেও লিপসিংকে সমস্যা ছিল। সিনেমায় দুয়েকটি গান না থাকলেও সমস্যা ছিল না। “ঘুরঘুর পোকা” গানটির আরও প্রচারণা হওয়া দরকার ছিল। “দামাল” টাইটেল ট্র্যাক মিউজিক ভিডিওটিও সকলেই পছন্দ করেছেন। রায়হান রাফী যোগ্য নির্মাণ দিয়ে বুঝিয়েছেন স্বল্প বাজেটেও কিভাবে কাহিনীকে তুলে ধরতে হয়। দর্শকরা দামাল কে বছরের সেরা সিনেমা, মুক্তিযুদ্ধকালীন ফুটবল টিম নিয়ে সেরা সিনেমা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এর আগে মুক্তিযুদ্ধের সময় ফুটবলকে এভাবে কেউই পর্দায় উপস্থাপন করে নি, অল্প সময়ের জন্য উপস্থাপন করলেও তা পর্দায় জীবন্ত হয়ে ওঠে নি। বাংলা সিনেমার জয়জয়কারে যুক্ত হল নতুন আরেকটি সিনেমা “দামাল”। পরিবার নিয়ে উপভোগ করার মতই সিনেমা। “দামাল” সিনেমায় কিছু গালিগালাজ থাকলেও তাতে খুব বেশী অসুবিধায় পড়তে হবে না দর্শকদের। সময় থাকলে অবশ্যই রায়হান রাফীর “দামাল” দেখে নিতে পারেন। “দামাল” আপনাকে আনন্দ যেমন দেবে তেমনি আবেগপ্রবণ করে তুলবে সাথে আপনাকে যুদ্ধের সেই সময়ে নিয়ে যাবে। সময় এবং অর্থ দুইই উসুল হবে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।