priyojanala blog

প্রিয়জানালা কাছে আসার মজার গল্প – বাদাম প্রেম!

প্রিয়জানালা কাছে আসার মজার গল্প - বাদাম প্রেম!
কাছে আসার গল্প 

ভার্সিটি ছুটি দেয়া মাত্র এক দৌড়ে বাস স্ট্যাণ্ড চলে গেলাম, এত তারাহুড়ার কারন বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মাঠে যেতে হবে আজ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এর ফাইনাল। অনেক কষ্টে আমাদের টিম ফাইনালে উঠছে যেখানে আমার অবদান খুব একটা খারাপ না। 

দুপুর বেলা তাই রাস্তাটা খুবই ফাঁকা দুই একটা সিএনজি আর মোটর সাইকেল ছাড়া কোন বাস দেখছি না। এমনিতেও এই রাস্তাটি তুলনামূলক ফাঁকাই থাকে।
পাবলিক যাত্রী ছাউনিতে দুই এক জন বসে ফোনে কথা বলছে, কেউ পত্রিকা পরছে। আসেপাশে আরো দুই এক জন দাঁড়িয়ে ও হাটা হাটি করছে। আমার খুব উদাসিন লাগছে মন চাচ্ছে বাদাম খেতে। ভাবতে না ভাবতেই এক বাদাম বিক্রেতা হাজির। 

-ও মামা শিঘ্রই ৫ টাকার বাদাম দেন… না না ১০ টাকার দেন।
-আচ্ছা মামা ।
আমি বাদাম বিক্রেতার হাতের দিক তাকিয়ে আছি এমনি সময় আমার পাশে একটি মেয়ে এসে দাঁড়িয়ে বাদাম কেনার জন্য অপেক্ষা করছে যা আমি অনুভব করলাম কিন্তু চেহারাটা দেখার ইচ্ছে হই নি। বাদাম টা আমার হাতে দেয়া মাত্রই আমার পিছনের চুলে একটু আলতো টান অনুভব করলাম, কিছু ভাবার আগেই পিছন ফিরে তিন জন কমন জেন্ডার (হিজরা) কে দেখলাম যার একজন আমার চুলে হাত দিয়ে বলছে-

“কিরে দুষ্টু গার্লফ্রণ্ড এর জন্যে বাদাম কেনা হচ্ছে, শয়তান কোথাকার!!”  -বলেই তারা হেঁটে  চলে গেলো। আমি আমার ডান দিকে খুব উচ্চ হাসি টের পেতে লাগলাম, আর এই প্রথম মেয়েটার মুখটি দেখলাম যেন বুকের ডান দিকটায় মোচড়  দিয়ে উঠলো… মনে হলো ওই মেয়েটিকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি! এবার বুজলাম ওরা ওই মেয়েটাকে আমার গার্লফেন্ড ভেবেছে আর মেয়েটা তা বুজে হাসছে! মনে হলো এই বুঝি  সৃষ্টিকর্তা আমার সিঙ্গেল স্টাট্যাস কে ইন এ রিলেশনশীপ বানানোর জন্য আমাকে সুযোগ দিচ্ছে… ! 

আমি কিছুক্ষন হেসে মেয়েটাকে সরি বললাম। মেয়েটা একটু মৃদু হাসি দিয়ে
-আপনি সরি বলছেন কেন …
– ইয়ে মানে …ইয়ে মানে !!
এমন সময় বাস এসে ঠিক আমাদের পিছনে থামলো আমি মামাকে টাকা দিয়ে উঠার আগেই মেয়েটা উঠে গেল আর সোজা ডাবল সিটে গিয়ে বসলো। আমার মনে হতে লাগলো আমি হাজার মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে আছি এখন্ বক্তিতা দিবো তাই নার্ভাস হয়ে গায়ের ঘাম বাষ্পায়িত হচ্ছে… 

অল ইজ ওয়েল বলে একেবারে চোখ বন্ধ করে মেয়েটার পাশে গিয়েই বসলাম। দুই মিনিট মনে হলো আমার মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে কি বলবো! কি বলবো বলে…! 
মনে মনে ভাবলাম এমন কিছু করা যাবে না যাতে আপসোস করতে হয় … আমার হাতে তখন পরিপূর্ন বাদাম। 
মেয়েটির দিকে তাকিয়ে- –
-আচ্ছা আপনি বাদাম কিনলেন না?
-বাসে উঠার তাড়ায় ভুলে গেলাম!
-যাই হোক আপনি এখান থেকে নিলে আমি খুশি হব …
-অপরিচিত লোকের দেয়া কিছু খেতে হয় না আপনি জানেন না?!
-অদ্ভুত তো আপনি! খোসা সহ বাদামে কিছু মেশানো যায় নাকি?
-কেন!! অন্য কিছু হলে মেশাতেন নাকি?
-আরে না বাবা… আপনি ধরুন তো। আমার জন্যেই আপনি বাদাম কিনতে পারেন নি এখন যদি এখান থেকে না নিলে আমার খুব খারাপ লাগবে। 
-আচ্ছা আপনি তো এটা আপনার গার্লফেন্ড এর জন্য কিনেছিলেন না!!!
– হা হা হা … কিনে ছিলাম কিন্তু আমার গার্লফেন্ড এর দাত নেই তো তাই আপনাকে খাওয়াচ্ছি!
-দাঁত নেই মানে? আপনার গার্লফ্রেন্ড কি বাচ্চা শিশু নাকি??
-আরে না, আমার নানী বয়স প্রায় ৮৮! সেই আমার একমাত্র গার্লফ্রেণ্ড !
 -খুব মজার তো…! 
বাদাম খেতে খেতে এভাবে কথা চলতে লাগলো কখন যে বাদাম শেষ হওয়ার পরেও কথা বলছিলাম খেয়াল করি নি … 

এমন কি আমি আমার স্টেশন থেকে দুই স্টেশন পেরিয়ে গিয়েছি এমন সময় মোবাইলের রিং বেজে উঠলো বন্ধু জিসান এর ফোনঃ

– কিরে দোস্ত কোথায় তুই খেলা শুরু হতে এক ঘণ্টা বাকি আর তোর খবর নাই? আমি তোর বাসায় এসে বসে আছি …
-দোস্ত এই তো আধঘন্টার মধ্যেই আসছি।।
-দেখ হৃদয় তোর উপরে আজকের খেলার আমাদের বাঁচা মরা নির্ভর করছে সুজন এর হাতে ব্যাথা ও বল করতে পারবে না আর তুইও যদি দেড়িতে আসিস তাহলে বিপদে পরে যাবো…
-দোস্ত টেনশন নিস না আমি আসছি খুব তারাতারি…

ফোন রেখে দিলাম এমন সময় মেয়েটির একটা কথা শুনে মনে হলো আমার শরিরের শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে , আমি বুঝি নি এত সামান্য একটি কথা আমাকে এত বড় ধাক্কা দিবে …
অবশ্যই কথা ছিল সামান্য!! 

—“এক্সকিউজ মি আমি এখানে নামবো”


আমি হঠাত ভাবতে লাগলাম কি করবো? মেয়েটার ফোন নম্বর বা এড্রেস ফেইসবুক আইডি এমন কি মেয়েটার নামটাও জানতে পারলাম না … হাতেও সময় নেই যে মেয়েটার পিছনে পিছনে যাবো তাহলে বন্ধুদের সাথে জীবনের বড় বেইমানী করা হবে, ওদিকে আমি অনেক দূরে চলে এসেছি এখান থেকে যেতে বাস ভাড়া ছাড়া পকেটে কোন টাকাও নেই!! কি করবো বোঝার আগেই মেয়েটি নেমে গেলো আর আমিও কিছু না ভেবেই নেমে গেলাম !!

-হ্যালো মিস…
-জি বলুন?
-আসলে , আমি হৃদয় …।
-ও!! এতক্ষন পরে আপনার নাম বলছেন ব্যাপার কি ??
– না মানে! এতক্ষন কথা বললাম যদি নাম টাই না জানা হয় তাহলে কেমন দেখায়!
-ও আচ্ছা!! আমি প্রিয়া…
-ইয়ে মানে … বাদাম খাবেন?
-মানে! আপনি আবার বাদাম খাবেন… আচ্ছা আপনি কি সাড়া দিন বাদামই খান !!
– ইয়ে মানে বলছিলাম… আমরা কি আরেক দিন বাদাম খেতে পারি … -আচ্ছা আপনি কি সবাইকে বাদাম খাইয়ে বেড়ান?
-ইয়ে মানে, আপনাকে খাওয়ালে ভালই লাগবে।
মেয়েটির মুখে মিষ্টি একটা হাসির রেখা!  আমি ওটাকেই সন্মতি ভেবে নিলাম।
-তা আমরা কোথায় মিট করতে পারি?
-হাতিরঝিল? 
-জায়গাটা আমার অনেক প্রিয়।
আমি পিছন ফিরে হাটা শুরু করলাম। হঠাত মনে হলো কবে দেখা করবো তাই তো জানা হয় নি।
-হ্যালো, এই যে হ্যালো প্রিয়া ।
-আবার কি হলো?
-আরে আমরা কবে মিট করবো তাই তো বলেন নি।
-ভারি অদ্ভুত লোক তো আপনি।
-আচ্ছা আমরা আগামী রোববার বিকেলে মিট করি, ঠিক আছে? 

– হু। আরো কিছু?
– আপনি বরং এক কাজ করেন আপনার ফোন নম্বর দিয়ে যান। আরো কিছু জানতে চাইল আর দৌড়ে আসতে হবে না।
কিছুক্ষন ভেবে মেয়েটি তার নম্বর দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল।
আমি ঘটনার আকস্মিকতায় পাথরের মূর্তির মতো ঠায়  দাঁড়িয়ে রইলাম।

 যাই হোক আজকের দিনটা আমার জন্য শুভ ছিল তাই বন্ধুদের কাছে বদনাম শুনতে হলো না। খেলা শুরু হওয়ার ১০ মিনিট আগেই মাঠে ছিলাম। 

২ দিন পরের ঘটনাঃ 
-কিরে ভার্সিটিতে যাবি না?

 মায়ের কথায় আমার চিন্তায় ছেদ পরলো।মনে পরলো আজ রোববার। ইস রে এতক্ষন ধরে শুধু সেদিনের কথাই ভাবছিলাম। তারাতারি রেডি হয়ে ভার্সিটিতে ছুটলাম। ভার্সিটি থেকে ফিরে আবার বেরোতে হবে। 
ভার্সিটিতে ঢুকে যথারিতি সামনের বেন্চিতে যায়গা দখল করে বসলাম। কিন্তু আমার জন্য যে এতবড়  চমক অপেক্ষা করছিলো তা স্বপ্নেও ভাবি নি। আমার সামনেই নীল শাড়ি পরে মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। বড় একটা ধাক্কা খেলাম তার কথায়! 

-আমি প্রিয়া রায়। তোমাদের এই ভার্সিটিতে নতুন জয়েন করেছি। এখন থেকে তোমাদের প্রজেক্ট ক্লাশটা আমিই নিব। 
আমি ধিরে ধিরে পাথরের মতো জমে যাচ্ছি। দৃষ্টি কেমন যেন ঘোলা হয়ে আসছে। ।
 এতক্ষন সে আমাকে লক্ষ করে নি হঠাত তার দৃষ্টি আমার উপর পরলো। আমি ঝাপসা চোখে দেখতে পেলাম তিনিও ধিরে ধিরে জমে যাচ্ছেন। তার দৃষ্টিও ঝাপসা হয়ে আসছে। তেমনি আজো ঝাপসা হয়ে আছে এই গল্পের সমাপ্তি। 

Back to top button