bangla moviemovies

অপারেশন সুন্দরবন পাবলিক রিভিউ- Operation Sundarbans Public Review

 অপারেশন সুন্দরবন পাবলিক রিভিউ ০১ 

অপারেশন সুন্দরবন পাবলিক রিভিউ- Operation Sundarbans Public Review

সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত করতে র্যাবের এক সফল মিশন এর স্টোরি অবলম্বনে তৈরি হয় একশন-থ্রিলার Operation Sundarbans -অপারেশন সুন্দরবন !
প্রথমত ভাবছিলাম একটা টিপিকাল & প্রেডিক্টেবল একশন-থ্রিলার দেখতে যাচ্ছি কিন্তু পরে স্টোরি বিল্ডআপ এর সাথে সাথে এবং ফাস্ট হাফ শেষ হওয়ার পর ধারণা বদলাতে লাগলো। সিনেমায় প্রচুর পরিমানে সাসপেন্স ও টুইস্ট রাখা হয়েছে এবং সেই টুইস্ট গুলো ধরার জন্য দর্শকের অবশ্যই ভাবতে হবে এবং প্রচুর প্রেডিক্ট করতে হবে কিন্তু একের পর এক সকল প্রেডিকশন ভুল বের হবে৷
ডিরেক্টর Diponkor dipon শেষ পর্যন্ত সিনেমায় সাসপেন্স ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে, স্ক্রিনপ্লে খুবই ফাস্ট ছিল এক মুহূর্তের জন্যও বোরিং ফিল হয়নি। আরও ছিল সুন্দরবনের মধ্যে সুন্দর ও দৃষ্টি নান্দনিক সিনেম্যাটোগ্রাফি এবং কনসেপ্ট এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। সিনেমার এডিটিং এর কথা না বললেই নয়! এডিটর উনার কাজ একদম পারফেক্ট ভাবে করেছেন। এছাড়া একশন ডিরেক্টর এর কাজও ভালো ছিল। অযথা একশন সিকুয়েন্স অথবা গোলাগুলি দেখানো হয় নি। সিনেমার স্টোরিলাইন এর সাথে সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে একশন স্ট্যান্ট কোরিওগ্রাফ করা হয়েছে! সিনেমায় ৪ টি গান আছে। তারমধ্যে ৩ টি রোম্যান্টিক গান এবং একটি র্যাবদের তাদের মিশনের জন্য প্রিপেয়ার হওয়ার সময় ব্যাকগ্রাউন্ড এ দেওয়া হয়েছে। ৩ টি রোম্যান্টিক গানের মেধ্য সবচেয়ে ভালো ছিল Bappa Mazumder এর ‘এ মন ভিজে যায়’ গানটি এবং মিশনের জন্য রেডি হওয়ার সময় যে গানটি ব্যাকগ্রাউন্ড এ দেওয়া হয়েছে সেটাও ভালো ছিল এবং স্টোরি বিল্ড আপের জন্য খুবই দরকারী ও সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।
ডিরেক্টর Dipankar Dipon ২ ঘন্টা ২৫ মিনিটের মধ্যে খুবই সুন্দর এবং সাবলীলভাবে র্যাবের এই জয়যাত্রার কাহিনী দর্শকের সামনে প্রেজেন্ট করেছেন।
Siam Ahmed নিজের কম্ফোর্ট জোন ‘ড্রামা জনরা’ থেকে বের হয়ে ‘শান’ এর পর ২য় বারের মতো একশন-থ্রিলার জনরার সিনেমায় কাজ করলেন এবং লিড এক্টর হিসেবে খুবই ভালো পারফর্ম করেছেন ‘মেজর সায়েম’ চরিত্রে। এছাড়া Ziaul Roshan , Taskeen Rahman , Manoj Pramanik সহ সকল মেইল আরটিস্ট দের কাজ ভালো ছিল। Ziaul Roshan সেকেন্ড লিডে ভালো করেছেন। Manoj Pramanik পুনরায় উনার ন্যাচারাল এক্টিং দেখালেন, সাথে Taskeen Rahman উনার জায়গায় বরাবরের মতোই ভালো করেছেন যদিও উনার কাছ থেকে এক্সপেকটেশন আরও বেশি ছিল!
Riaz এর ইংলিশ বলার একসেন্ট, প্রতি মুহূর্তে উনার দেওয়া এক্সপ্রেশন, ডায়লগ ডেলিভারি কোন কিছুই যেনো ক্যারেক্টর এর সাথে যাচ্ছিল না এবং তার অভিনয় ও সাবলীল মনে হয় নি। রিয়াজ এর ক্যারেক্টর এ ডিরেক্টর অন্য কাওকে ভাবতে পারতেন৷ এছাড়া, ফিমেইল আরটিস্ট Nusraat Faria Mazhar এবং Darshana Banik ভালো কাজ করেছেন। তাদের রোল ছোট ছিল কিন্তু যতটুকু স্ক্রিনটাইম পেয়েছেন তার মধ্যে দুজনেই ভালো পারফর্ম করেছেন।
সব মিলিয়ে বলতে গেলে হাওয়া,পরাণের পর হয়তো আমরা ইন্ডাস্ট্রি থেকে আরেকটি ব্লকবাস্টার পেতে যাচ্ছি। ডিরেক্টর Dipankar Dipon উনার ঢাকা অ্যাটাক – Dhaka Attack এর ম্যাজিক পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে আসলেন ‘Operation Sundarban’ এর মাধ্যমে। টিপিকাল একশন ফিল্ম না বানিয়ে একটি পরিপূর্ণ একশন-থ্রিলার উপহার দিলেন ২য় বারের মতো যেখানে পরিমাণ মতো একশন, সামঞ্জস্যপুর্ণ টুইস্ট, আউটস্ট্যান্ডিং স্টোরি টেলুং এবং দর্শকের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সাসপেন্স ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন!
একশন-থ্রিলার জনরা পছন্দ করলে দেখে নিতে পারেন আপনার কাছের সিনেমাহলে বহুল প্রতিক্ষীত সিনেমা ‘অপারেশন সুন্দরবন’
আশাকরি আপনার ২ ঘিন্টা ২৫ মিনিট বৃথা যাবে না বরং উপভোগ্য হবে৷
পারসোনাল রেটিং : ৮/১০!

রিভিউ লিখেছেন-

ব্যক্তিগত রেটিংঃ ০৮/১০
দেখে নিলাম বছরের অন্যতম কাঙ্ক্ষিত সিনেমা অপারেশন সুন্দরবন। একটি পূর্ণ মাইন্ড ফ্রেশিং ও সময়োপযোগী সিনেমা বলতে যা বুঝায়, অপারেশন সুন্দরবন একদমই তাই। ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একদম ঠিকঠাকমতোই উপভোগ করেছি। বোর হওয়ার কোনো সুযোগ রাখেননি পরিচালক দীপঙ্কর দীপন।
ছবির গল্পটা হয়তো সবাই আন্দাজ করতে পারবে। কিন্তু কিভাবে সুন্দরবনকে কুচক্রী মহল থেকে উদ্ধার করা হবে, সেই প্রক্রিয়াটা আমার মতো সাধারণ দর্শকেরা ছবি না দেখে বুঝতে পারবে না। আর এই পুরো প্রক্রিয়ার ভেতরেই রয়েছে সাহস, শক্তি, গৌরব, প্রেম, ইমোশন, কষ্ট ও হারানোর বেদনা। প্রতিটি সিকোয়েন্স অর্থবহ, অর্থহীন কোনো দৃশ্য আমি দেখিনি।
অভিনয়ের কথা বললে প্রথমেই আসে রিয়াজ আহমেদ এর কথা। উনি একটু লাউড অভিনয় করেছেন। আমাদের জেনারেশন এরকম অভিনয় দেখে আসলে অভ্যস্ত নই। এসব নব্বই দশকেই মানানসই। ফাটিয়ে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ। এক কথায় দুর্দান্ত! একজন র্যাবে এর পোশাকে রোশানকে অনেক হ্যান্ডসাম লেগেছে। অভিনয়টাও ভালোই করেছেন তিনি। পর্দায় চোখ জুড়িয়েছেন আমাদের নায়িকা নুসরাত ফারিয়া। গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে ফারিয়ার স্মার্ট উপস্থিতি অসাধারণ, সুন্দর অভিনয়। দর্শনাকে কিউট লেগেছে। তাসকিন, রওনক হাসান, শতাব্দী ওয়াদুদ, মনোজ প্রামাণিক, দীপু উনারা যার যার জায়গায় ন্যাচারাল অভিনয় করেছেন। ছবিতে আসলে সবাই সুন্দর অভিনয় করেছেন।
বড় পর্দায় সিয়াম-ফারিয়ার গানটা দেখতে ভালো লেগেছে খুব। অন্যান্য গানগুলোও সুন্দর।
মন্দ লাগা তেমন নেই এই ছবির। তবে সিনেমা হলের জন্য কিনা জানিনা, মাঝেমধ্যে ছবির কালারের কিছুটা সমস্যা হয়েছে।
যাই হোক, চলমান সময়ের অন্যতম সেরা ছবি হলো অপারেশন সুন্দরবন। আমি উপভোগ করেছি। ধন্যবাদ দীপঙ্কর দীপন, এতো উপভোগ্য একটি ছবি উপহার দেয়ার জন্য। আমি নিশ্চিত, ছবিটা ব্লকবাস্টার হবেই হবে। এগিয়ে যাক বাংলাদেশী সিনেমা, এগিয়ে যাক তরুণ তুর্কী সিয়াম- রোশান- ফারিয়ারা। ❤️

 রিভিউ লিখেছেন- শাকিল সরকার 

শুধুই ছবি নয়, বার্তাও
*******************
প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের কথাটা সবার মনে আছে তো? দেশের মানুষ তখন ট্রেন্ডে পরিণত করে ভোট দিয়েছিল সুন্দরবনের জন্য।কেন দিয়েছিল! কারণ, সুন্দরবন আমাদের সম্পদ। দেশে বড় বড় অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ গেছে এবং রিপোর্টে বলা হয়েছিল সুন্দরবন সেগুলো থেকে দেশকে রক্ষা করেছে। সুন্দরবনের এই শক্তিকে আমরা খুব ভালোভাবেই বুঝি। এ সম্পদ কেন বাঁচিয়ে রাখতে হবে তাও আমরা বুঝি। এই দিকটাকে চলচ্চিত্রে তুলে ধরা আরো বড় কাজ কারণ চলচ্চিত্রই সবচেয়ে বড় মাধ্যম দর্শকের কাছে যাবার এবং সচেতনতা তৈরির।
পরিচালক দীপঙ্কর দীপন সুন্দরবনের গুরুত্বকে তুলে ধরতে ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে একটা গল্প বলতে চেয়ে নির্মাণ করেছেন ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবিটি। ছবির পোস্টারে বলা হয়েছে ‘ওয়ার্ল্ডলাইফ থ্রিলার’। বন্য সম্পদ কেন বাঁচাতে হবে তারই একটা সচেতনতা পোস্টারে ছিল অন্যভাবে। আপাতদৃষ্টিতে সুন্দরবনের দস্যুবৃত্তি দূরীকরণ বা ডাকাত নির্মূলের গল্প বলা হলেও এর পেছনে সেখানকার খেটে খাওয়া মানুষের স্বাভাবিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পরিবেশকে রক্ষার জন্য ‘বাঘ’ সংরক্ষণের একটা প্রয়োজনীয় কথাও ছবিতে আছে। এখন তো ‘বিশ্ব বাঘ দিবস’-ও পালন হয়। সেদিক থেকে এটাও ছবির একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। এভাবে ভিন্নভাবে বলার চেষ্টা থেকে পরিচালক ‘অপারেশন সুন্দরবন’ নির্মাণ করেছেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় বাজেটে থ্রিলার নির্মাণের পরিবেশ ঢালিউডে শুরু হয়েছে এটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য পজেটিভ। ‘ঢাকা অ্যাটাক, মিশন এক্সট্রিম’ কিংবা মুক্তি প্রতীক্ষিত ‘ব্ল্যাক ওয়ার’ সবগুলোই সেই ধরনের প্রচেষ্টা। এটাকে ইন্ডাস্ট্রিতে মার্কেট বড় করার একটা প্রচেষ্টাও বলা যেতে পারে। ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সেই প্রচেষ্টার সর্বশেষ প্রজেক্ট। থ্রিলারের দিক থেকে এটি পূর্বের সেই ছবিগুলোর থেকে এগিয়ে থাকবে।
ছবির গল্পে সুন্দরবনের দস্যুবৃত্তি নির্মূলে প্রশাসনিক তৎপরতা আছে। র্যাবের কন্ট্রোলে সেটি করা হয়। একের পর এক অভিযান চলে এবং রহস্য তৈরি হয়। ছবির গুরুত্বপূর্ণ কাজটা ছিল এখানেই, রহস্য তৈরি এবং সেটিকে ছবির ক্লাইমেক্স পর্যন্ত ধরে রাখার ক্ষেত্রে সফল ছবিটি। থ্রিলারে এটাই তো সবচেয়ে জরুরি।
ছবির সরেজমিন প্রেক্ষাপটটাও গোছানো ছিল। কীভাবে অপারেশন সম্পন্ন হয় প্রতিকূল পরিবেশে এবং কাজের ক্ষেত্রে কী ধরনের প্রোটোকল মেইনটেইন করা হয় তার একটা ডিটেইল উপস্থাপন দেয়া হয়েছে ছবিতে। অপারেশনের সময়গুলোতে পারফেক্ট বিজিএম ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেটি এ ছবিতে ছিল।
মাল্টিকাস্টিং ছবি হওয়াতে অনেক অভিনয়শিল্পীর সন্নিবেশন আছে। অভিনয়ে সবার আগে মনোজ প্রামাণিকের কথা বলতে হয় তার অভিনয়ের গভীরতা ও সম্ভাবনা অনেক, সিয়াম আহমেদ বরাবরের মতোই বছরের অন্য ছবিগুলোর মতো উজ্জ্বল, রোশানের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স ছিল, দর্শনা বণিকের মধ্যে সৌন্দর্য ও অভিনয়ের ভালো সংমিশ্রণ ছিল, নুসরাত ফারিয়ার অন্য ছবিগুলোর তুলনায় তুলনামূলক বেটার অভিনয় ছিল, রিয়াজের অভিনয়ে চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হবার ছাপ স্পষ্ট, তাসকিন বরাবরের মতোই রহস্য মানবের ভূমিকায় উপস্থিত এবং দুর্দান্ত অভিনয়, শতাব্দী ওয়াদুদ অসাধারণ, নেগেটিভে আরমান পারভেজ মুরাদ মোটামুটি ছিল, রাইসুল ইসলাম আসাদ এ সময়ে এসেও পর্দায় কীভাবে গুরুত্ব তৈরি করেন তার প্রমাণ এ ছবিতে তার চরিত্র ও অভিনয়।
ছবির সিনেমাটোগ্রাফি সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই বিশেষত্ব পেয়েছে। বিজিএম থ্রিলারের জন্য পারফেক্ট, কালার গ্রেডিংও প্রশংসনীয়। চোখে লাগার মতো সম্ভবত শুধু বাঘের দৃশ্যগুলোই ছিল। ছবির গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু না থাকলেও গানের নির্মাণ ভালো ছিল।
ডি-ফরেস্টেশনের এ সময়ে আমাদের সবচেয়ে বড় অ্যাসেট এখনো সুন্দরবন। সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে রাখার, এর পরিবেশ ভালো রাখার জন্য ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবি শুধুই একটি ছবি নয় বরং বার্তাও। কারণ সব কথা চলচ্চিত্র শিখিয়ে দেবে না বা বুঝিয়ে দেবে না কিছু বুঝে নিতে হবে। আর ঐ বুঝে নেয়াটাই ছবিতে বার্তা ছিল।
রেটিং – ৮/১০
রিভিউ লিখেছেন- রহমান মতি  

*****অপারেশন সুন্দরবন*****
প্রাপ্তির সংখ্যায় ভারী
বহুল আলোচিত সিনেমা অপারেশন সুন্দরবন পর্দায় এক স্বস্তির নাম। বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ সুন্দরবন এর জানা অজানা রহস্যঘেরা একটি পরিপূর্ণ কমার্শিয়াল বাংলা ছবি মনে হয়েছে আমার কাছে। সুন্দরবন কে এতো আকর্ষণীয় ভাবে উপস্হাপন করার জন্য প্রথমেই দীপঙ্কর দীপন একটা ধন্যবাদ পেতেই পারে।
মাল্টিকাস্টিং সিনেমার সুবিধা হলো এখানে সব প্রিয় তারকাদের পারফর্ম একসাথে দেখার সুযোগ মেলে।
অভিনয় এর কথা বলতে গেলে সবার চমৎকার পারফর্মেন্স ছিলো। গল্পের গাঁথুনি চমৎকার এবং সেটা সমস্ত কলাকুশলী সেটা রিয়েলিস্টিক ভাবেই ফুঁটিয়ে তুলতে পেরেছে, এটাই অপারেশন সুন্দরবন ছবির প্লাস পয়েন্ট।
#রোশান কে দারুণ হ্যান্ডসম লেগেছে। তার ভয়েস, হাইট, লুক দেখে মনে হয়েছে রোশান যেন সত্যিকারেরই র্যাব। তবে তার গুরুত্ব কিছু টা কম ছিলো ছবির অন্য নায়ক সিয়ামের চেয়ে।
#সিয়াম, এক কথায় অসাধারণ, অনন্য। সিয়াম তার ক্যারিয়ারে যেভাবে গল্পের, অভিনয়ের ভ্যারিয়েশন এনেছে সেটা তাকে আরো উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবে সেটা হলফ করে বলতে পারি।
#ফারিয়া একজন টাইগার রিসার্চার হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। অভিনয়ে যথেষ্ট ইম্প্রুভমেন্ট চরিত্রটিকে বাড়তি উপভোগ করিয়েছে আমাকে। ছবিতে তাকে বেশ প্রাণবন্ত লেগেছে যেটা দর্শক সকলেই বলাবলি করছিলো।
#দর্শণা একদম পুতুলের মত সুন্দরী লেগেছে। এমন বিউটি কুইন ডাক্তার হলে অনেক রোমিও নানা ছলে ডাক্তারের শরনাপন্ন হবে এটা সিউর।
#রিয়াজ একজন পছন্দের অভিনেতা। তবে আগের রিয়াজ এবং বর্তমানের রিয়াজের মধ্যে অনেক পার্থক্য। রিয়াজের উচিত হবে আরো চরিত্রের গুরুত্ব বুঝে সিনেমায় কাজ করা নচেৎ খামোখা চেহেরা দেখানোর জন্য পর্দার সামনে ঘুরাঘুরি না করাই ভালো।
বাকীরা সবাই বেশ ভালো করেছে বিশেষ করে তাসকিন এবং শতাব্দী ওয়াদুদ এর কথা মেনশন করতেই হয়।
সবমিলিয়ে এক অভিজ্ঞতায় কেটেছে পুরো সময়টা। চলচ্চিত্রের সুতাবাসে অপারেশন সুন্দরবন আরেক সংযোজন। বাংলা চলচ্চিত্র এখন আর প্রেম ভালোবাসায় আটকে নেয়। অপারেশন সুন্দরবনের মতো গল্পনির্ভর সিনেমা আরো হোক।
রেটিং- ৮/১০
সময়, সুযোগ ইচ্ছে থাকলে অবশ্যই দেখতে পারেন অপারেশন সুন্দরবন। ভালো লাগবেই।

 

রিভিউ লিখেছেন-  Abu Huraira 

‘ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো – কেমন লাগলো ‘অপারেশন সুন্দরবন’? (স্পয়লার নেই)
‘ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো’ দেখার একটা বাতিক আমার ভিতর সব সময়ই কাজ করে। দুর্ভাগ্যবশত ‘হাওয়া’র ক্ষেত্রে সেটা বজায় না থাকলেও ‘অপারেশন সুন্দরবন’র জন্য আগে-ভাগেই টিকিট কেটে রেখেছিলাম।
‘অপারেশন সুন্দরবন’- চলচ্চিত্রের নামটিই বলে দেয় এটা একটি অ্যাকশন ঘরানার ফিল্ম। অপরদিকে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে র্যাব ওয়েলফেয়ার কোওপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড-এর অর্থায়নে। সুতরাং সিনেমাটিতে র্যাবের কাজের একটা ধারণা পাব এটা সহজেই অনুমান করেছিলাম। একই সাথে ছিল ডকুমেন্টারি হয়ে যাওয়ার ভয়। কিন্তু সুন্দরবনের প্রেক্ষাপটে এমন জীবনের গল্প সত্যিই প্রত্যাশা করি নি।
না মাস্টারপিস এই সিনেমা নয়! অল্প-বিস্তর ভুল এই সিনেমাতেও রয়েছে। তবে সিনেমা শেষে আমি তৃপ্ত। বিশেষ করে ‘অপারেশন সুন্দরবন’র সিনেমাটোগ্রাফি আমায় আকৃষ্ট করেছে। সিনেমার একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই চলচ্চিত্রের দৃশ্যায়নে ছড়িয়েছে মুগ্ধতা। রাতের অন্ধকারের পানির কয়েকটি দৃশ্যায়ন আমাকে সত্যিই ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রের সিনেমাটোগ্রাফির ফিল দিয়েছে৷
অপারেশন সুন্দরবন গল্পের কথা বললে চিত্রনাট্য আমার প্রথম দিকে একটু স্লো লেগেছে, আবার একইভাবে শেষাংশ ভয়ংকর ফার্স্ট লেগেছে৷ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের ঠিকভাবে প্রষ্ফুটন আমার মনে হয় নি। তবে পজিটিভ হচ্ছে শেষের কয়েকটি টুইস্ট আপনাকে রোমাঞ্চিত ও উৎকন্ঠিত করবে। এছাড়া জলদস্যুদের জীবনের সাথে জড়িয়ে রয়েছে সুন্দরবনের জেলেদের জীবন। রাতভর মাছ ধরে জলদস্যুদের সিন্ডিকেটে কিভাবে জেলে পরিবার সর্বস্বান্ত হয় এবং জেলে থেকে একজন জলদস্যু হয়ে ওঠে সেই গল্প ফুটে উঠেছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ গল্পে।
সিনেমাটিতে ছিল জনপ্রিয় ও স্টার অভিনয় শিল্পীদের ছড়াছড়ি। সুতরাং নিজের চরিত্রটির প্রতি দর্শকের দৃষ্টি রাখার একটা চ্যালেঞ্জ প্রত্যেকের ছিল। রিয়াজের অভিনয় আমার অ্যাভারেজ লেগেছে। মেজর চরিত্রে ছিলেন সিয়াম আহমেদ। ছবিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই চরিত্রে সিয়াম বেশ ভালোই করেছেন৷ বিশেষ করে অপারেশনের খাতিরে তার নেয়া রিস্কগুলো চরিত্রটিতে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। তাসকিন আহমেদকে আমরা ইতোমধ্যে একজন ভিলেন চরিত্র হিসেবে মাথায় সেট করে নিয়েছি তবে পুরো মুভিতে এই চরিত্রের রহস্য আমার বেশ ভালো লেগেছে। অভিনয়ে আমার মনে হয় সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে মনোজ কুমার, রওনক হাসান ও তুয়া চক্রবর্তী। পাপড়ি চরিত্রে এতো সুন্দরভাবে তুয়া নিজেকে মানিয়েছেন যার কথা আলাদা করে না বললেই নয়।
ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আমার যথেষ্ট রিলেটেড মনে হয়েছে। সবশেষে, নির্মাতা দীপঙ্কর দীপন ‘অপারেশন সুন্দরবন’ যেখানে শেষ করেছেন, আমার মনে হয় এই ছবিটির চাইলেই সিক্যুয়েল করা সম্ভব এবং এমনটা হলে হয়তো গল্প ও চরিত্রগুলোর বর্ণনসহ এই পার্টে না হওয়া অনেক কিছুই আরও বেশি উপভোগ্য ও রোমাঞ্চকর হবে দ্বিতীয় পর্বে।

 রিভিউ লিখেছেন-  Mohaimanul Islam Neon 

অপারেশন সুন্দরবন (স্পয়লার নেই)
সিনেমার নাম, টিজার কিংবা ট্রেলার দেখার পর স্বভাবতই বুঝতে পেরেছিলাম এটা হবে অ্যাকশন প্যাকড আর সুন্দরবনের দস্যুদের কাজকারবার ও তাদের দমন নিয়ে। তবে সিনেমা দেখার পর বুঝলাম আমার ভুল ধারণার ব্যাপারে। সুন্দরবন ঘিরে চোরাচালান, দস্যু, অপহরণের গল্পের সাথে ছিলো এই বনের উপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন ও জীবিকার কথা। যেখানে কিভাবে কি হয়, কিভাবে দস্যুরা দিনের পর দিন এই ভয়ঙ্কর জঙ্গলে প্রতিকূল অবস্থায় বেঁচে থেকে তাদের অপরাধ কার্যক্রম চালায়। আর সেটা দমন করতে গিয়ে কিভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতশত ত্যাগ করতে হয়। মোটা দাগে বলতে গেলে এই ছিলো ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমা।
সিনেমায় এতো পরিমাণ মাল্টিকাস্টিং ছিলো যে, একটা সময়ে সংশয়ে ছিলাম; সবাই তো তাদের ঠিকঠাক স্পেস পাবে। সেটা খুব ভালোভাবেই সামলিয়েছেন নির্মাতা। প্রতিটা চরিত্রেরই সিনেমায় কন্ট্রিবিউট ছিলো, সেটা সময়ের প্রেক্ষিতে অল্প হলেও সিমেনায় তা যথেষ্ট কমপ্যাক্ট ছিলো। রাইসুল ইসলাম আসাদ, সিয়াম, তাসকিন, রোশান সহ সবাই ভালো করার চেষ্টা করেছেন যার যার জায়গা থেকে। তবে সবচেয়ে ভালো করেছেন ‘সাজু’ চরিত্রে অভিনয় করা মনোজ প্রামাণিক। একজন সহজ সরল গ্রামের যুবকের জীবিকার প্রয়োজনে বিপথে গিয়ে আবার ফিরে আসার প্রতিটা মুহুর্তে দারুন করেছেন। যেমনটা করেছেন ওপার বাংলার অভিনেত্রী তুয়া চক্রবর্তী। ‘পাপড়ি’ চরিত্র আসলে যেমন হওয়া উচিত তেমনই করেছেন। যতক্ষণ স্ক্রীনে ছিলেন, দর্শক হিসেবে বেশ উপভোগ করেছি।
সিনেমায় সবচেয়ে ভালো প্রশংসা পাবে সিনেমাটোগ্রাফি। সুন্দরবনের সৌন্দর্য্য সুন্দরভাবেই তুলে দরা হয়েছে। তবে সিজিআই-তে হরিন আর বাঘের প্রেজেন্টেশন কিছুটা খেলনা টাইপ হয়ে গেছে। সিনেমার শুরু দিকের অ্যানিমেশনের গল্প বলার সময়ে কিন্তু আবার দারুন ছিলো। সিনেমার প্রথম হাফ অনেক দারুন ছিলো, সে তুলনায় দ্বিতীয় হাফ কিছুটা অফবিট। তবে শেষের টুইষ্টের আধিক্য দুই ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। দর্শকের অনেক ভালো লাগবে আবার হয়তো কিছুটা বিরক্তের কারণও হতে পারে।
সিনেমার শুরুতে যখন দেখি এই সিনেমার দৈর্ঘ্য ১৪১ মিনিট দেখায়, তখনই মনে মনে ভাবছিলাম এতোক্ষণ! এটা ভাবার পেছনে অনেকগুলো কারণ ছিলো তবে সেসব কারণের পুনরাবৃত্তি না করার জন্য বেশ একটা বাহবা পেয়ে যাবে এই সিনেমা। তবে এটা ছিলো সিনেমা শুরুর আর শেষের সারমর্ম। সিনেমা হিসেবে খুবই ফাস্ট। বোর হওয়ার চান্স ছিলো না বললেই চলে।
রিভিউ লিখেছেন- Saidur Bipu  

অপারেশন সুন্দরবন
– নো স্পয়লার
জিরো এক্সপেকটেশন নিয়ে একটা সিনেমা দেখার সবচেয়ে মজার বিষয় হলো সিনেমাটি মন্দ লাগলে খুব বেশি খারাপ লাগেনা আবার যদি ভালো লাগে তবে সেই আনন্দের মাত্রাটা একটু বেশিই অনুভব করা যায়। ‘অপারেশন সুন্দরবন’ একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে আমার প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির মাপকাঠিতে অনেক বেশি ভালোলাগা নিয়েই হাজির হয়েছে।
একেতো বিশাল ক্যানভাস, সাথে র্যাবের একটি অভিযানের কাহিনীই সিনেমার মূল ভিত্তি তাই স্বাভাবিকভাবেই সেই গল্পটা বানিজ্যিক সিনেমার মোড়কে কতোটা শক্তিশালী ভাবে উপস্থাপন করা হয় সেটা নিয়ে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া কাজ করছিলো এবং সুন্দরবনের মতো রহস্য ঘেরা গহীন বনে একটা সিনেমা ডকুমেন্টারি ঘরানার বাইরে এসে কিভাবে চিত্রায়িত হলো সেটা নিয়েও ভাবনা ছিলো অল্পবিস্তর। তবে নির্মাতা দীপংকর দীপন প্রথম সিনেমা ‘ঢাকা অ্যাটাক’এ যদি চার মেরে থাকেন তাহলে এবার ছক্কা হাঁকিয়ে সব সংশয়ের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন নির্মান মুন্সিয়ানা দিয়ে।
সিনেমার প্রথমেই অ্যানিমেশনের ব্যবহার করে সুন্দরবন এবং এই এখানকার জেলেদের অপহরণ, অস্ত্র ব্যাবসা, জলদস্যুদের দ্বারা প্রভাবিত এক আতংকের পরিবেশ সম্পর্কে একটা আইডিয়া দেয়া হয় যা অতি সহজেই আমাদের গল্পের সাথে রিলেট করতে সাহায্য করে। এরপরে গল্প এগোয় সেই ভয়ংকর জলদস্যুদের ভয়াল থাবা থেকে সুন্দরবন রক্ষায় র্যাবের অভিযান কিভাবে সম্পাদিত হয় সেটা উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে। তবে বানিজ্যিক সিনেমার উপকরণ হিসেবে গল্পে মানবতা, দেশ প্রেম, ভালোবাসার সম্পর্কের টানা-পোড়েন সহ আরো অনেক কিছুই উঠে এসেছে যা সিনেমাটি দেখার সময় আমাদের বোরিং করেনা।
সিনেমার প্রথম দৃশ্য থেকে চিত্রনাট্যের চাহিদা অনুযায়ী অভিনয় শিল্পীরা পরিমিত অভিনয় করে গেছেন। সাথে সংলাপ ডিপার্টমেন্টও পাল্লা দিয়েছে পুরোপুরি। স্ক্রিপ রাইটার নাজিম-উদ-দৌলার জন্য শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা না জানিয়ে উপায় নাই। অকল্পনীয় বেশকিছু টুইস্ট এমনভাবে হাজির করেছেন এই ব্যক্তি যা প্রশংসার যোগ্য। অন্যদিকে সিনেমাটোগ্রাফি বিশাল ক্যানভাসের এই সিনেমার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পিলার। মাঝে মাঝে কিছু দৃশ্যতে আপস-ডাউন হলেও সেই পিলার সাপোর্ট দিয়ে গেছে প্রায় পুরোটা সময়। সৌমদীপ্ত ভিকি গুইন ও রম্যদীপ সাহার জন্য হাততালি জানিয়ে রাখলাম। কিছু কিছু ড্রোনশট তো মনোমুগ্ধকর ছিলো। আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হয় সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কথা। প্রেম-ভালোবাসা যখন পর্দায় হাজির সেই সময়ে ডিমান্ড অনুযায়ী ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর কানে মধু ঢেলেছে তেমনি আবার র্যাবের অ্যাকশন, ডাকাতদের ভয়াবহতা বোঝানোর সময় সেই সিচুয়েশনের ডিমান্ড অনুযায়ী ভয়াবহ স্কোরও উপস্থাপিত হয়েছে বেশ ভালোভাবেই। ভিএফএক্স কিছু কিছু জায়গায় আরো ভালো হওয়া উচিত ছিলো। বাঘের কিছু দৃশ্য নিয়ে একটা অপ্রাপ্তি রয়েই যাবে। কালার গ্রেডিং নিয়েও একটু খুতখুতানি রয়ে যায়। তবে সিনেমার গানগুলি ইউটিউবে রিলিজের পর শুনতে যতোটা ভালো লেগেছিলো দেখতে অতোটা লাগেনি তবে প্রেক্ষাগৃহের বিগ স্ক্রিনে গানগুলো অসাধারণ লেগেছে। বিশেষ করে সিয়াম এবং ফারিয়ার উপর চিত্রায়িত রোমান্টিক গানটি বিগস্ক্রিনে দেখার সময়টা ম্যাজিক্যাল বলেই মনে হয়েছে। কস্টিউম ডিজাইনার যিনি ছিলেন তিনি তার কাজটা খুব ভালোভাবেই সামাল দিয়েছেন।
সিনেমার প্রথম ভাগ স্টোরি এবং ক্যারেক্টার বিল্ডআপে সময় নিয়েছে। প্রধান অভিনেতা-অভিনেত্রীরা একের পর এক হাজির হয়েছে দৃশ্যপটে এবং প্রতিটা সুতো জোড়া লাগানোর কাজটা প্রথমার্ধ বেশ ভালোভাবেই করেছে যা প্রেক্ষাগৃহে বসা দর্শকদের সিনেমার সাথে বেধে ফেলতে সাহায্য করেছে। দ্বিতীয় ভাগে এসে গল্প এবং চিত্রনাট্যর গতি প্রথমে একটু ঢিলেঢালা ভাবে আগালেও ক্ষনিক পরেই সেটা তাল ফিরে পায়। এবং একটা সময় একের পর এক টুইস্ট সিনেমার শেষে কিছুটা সময় ‘এইটা কি হলো’ টাইপ অবস্থার মধ্যে নিয়ে যাবে আমাদের।
এই সিনেমার আরেকটি বড় ইউএসপি হলো শিল্পী তালিকা। একঝাঁক দক্ষ অভিনেতা এবং অভিনেত্রীদের নিয়ে তালগোল না পাকিয়ে প্রতিটা চরিত্রই সিনেমা শেষে একটা সুত্রে যেভাবে মিলিত হয়েছে সেটা প্রশংসনীয়। রিয়াজকে বড় পর্দায় দেখা গেলো বছর ছয় পরে। তিনি আহামরি ভালো করেছেন সেটা বলা না গেলেও বয়সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ চরিত্রে এই রিয়াজ অনেক পরিপক্ক সেটার প্রমাণ দিয়েছেন। সিয়াম আহমেদ অভিনেতা হিসেবে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন আরো অনেকটাই ‘অপারেশন সুন্দরবন’ এর মাধ্যমে। সায়েম চরিত্রে সিয়ামের সাবলীল অভিনয় তার আগের অনেক সিনেমার নানা দূর্বলতা নিয়ে যারা কথা বলেছেন তাদের জন্য মোক্ষম জবাব। অবাক করেছেন শক্তিশালী অভিনেতা মনোজ প্রামাণিক। অল্প সময়ের চরিত্র হলেও তার চরিত্রে ছিলো একাধিক শেড। এবং তিনি আমাদের তার অভিনয় দক্ষতা দিয়ে মুগ্ধ করে গেছেন। চিত্রনায়ক রোশানের এই পর্যন্ত তার যেকয়টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে তার মধ্যে সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন তিনি রিশান চরিত্রের মাধ্যমে। সামনে রোশানের জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে বলেই আশা রাখি। তাসকিন রহমান টাইপডকাস্ট হয়ে যাচ্ছেন যা তার ক্যারিয়ারের জন্য একটা হতাশাজনক ব্যাপার। শতাব্দী ওয়াদুদ শক্তিশালী অভিনেতা এই সিনেমাতেও তিনি তার ছাপ রেখেছেন। রওনক হাসানের ক্ষেত্রেও এই কথা শতভাগ সত্য। আরমান পারভেজ এবং রাইদুল ইসলাম আসাদ তাদের কাজটুকু করে গেছেন সফলতার সাথে। দীপু ইমামের কমেডি এই সিনেমার অন্যতম আলোচিত দিক হয়ে রইবে। উনি যতোবারই সেলুলয়েডে হাজির হয়েছেন দর্শকেরা হেসেছেন মন খুলে। নবাগত তানজিল তুহিন র্যাব সদস্য হিসেবে যতোটুকু স্পেস পেয়েছেন তাতে সম্ভবনা দেখিয়েছেন।
নুসরাত ফারিয়াকে বাঘ গবেষক হিসেবে মানিয়েছে ভালোই। বিদেশ থেকে আসা এক বাঙালি তরুনী হিসেবে তার লুক, কস্টিউম, বা সংলাপ ডেলিভারি মানানসই ছিলো। সিয়ামের সাথে তার জুটিও স্ক্রিনে দেখতে ভালো লেগেছে। অন্যদিকে কলকাতার দর্শনা বনিক এই সিনেমায় পাশের বাড়ির মিস্টি মেয়ে হিসেবে একটা নতুনত্ব নিয়ে বাংলাদেশের দর্শকদের সামনে হাজির হয়েছেন। তার গ্ল্যামার সাথে কিউটনেস আলাদা মাত্রা যোগ করার পাশাপাশি রোশানের সাথে তার কেমেস্ট্রিও দারুণ। তবে স্বল্প সময়ে নিজের ছাপ রেখেছেন তুয়া চক্রবর্তী। তার অভিনয় দক্ষতা মুগ্ধ করার মতোই।
্যাবের অঢেল সহযোগিতার প্রমাণ পুরো সিনেমা জুড়েই লক্ষ্য করা গেছে। আধুনিক অস্ত্র হোক, বা হেলিকপ্টার বা স্পীডবোট ফ্যাসিলিটি প্রতিটা ক্ষেত্রেই কোনো কমতি রাখা হয়নাই। এই কারনে স্বাভাবিকভাবেই এই বিশাল ক্যানভাসের সিনেমায় দেখানো টেকনিক্যাল এসপেক্ট এবং রিয়েল লোকেশনে শ্যুট করা দৃশ্য অবাস্তব মনে হয়নি। নির্মাতা দীপংকর দীপন এবং তার টিমের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং ভালো কিছু উপহার দেবার প্রচেষ্টা আক্ষরিক অর্থে একটি উদাহরণ রাখতে যাচ্ছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ এর মাধ্যমে।
ঢাকাই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে সুসময়ের যে হাওয়া বইছে তাতে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্র নিয়ে। এই হাওয়া ধরে রাখতেই শিল্পী এবং কলাকুশলীরা চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতি সপ্তাহেই সুস্থধারার ভিন্নধর্মী গল্পের বানিজ্যিক সিনেমা মুক্তি দেয়ার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ এই লিস্টের নতুন সংযোজন হতে পারবে কিনা তা সময় বলে দিবে। তবে বানিজ্যিক সিনেমা হিসেবে এটি সবধরনের দর্শকদের কাছে ভালো লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস….
রিভিউ লিখেছেন-   Afzalur Ferdous Rumon

 

‘’অপারেশন সুন্দরবন’’- এ বোর হওয়ার সুযোগ নেই (মুভি রিভিউ)
দীপঙ্কর দীপনের ‘’ঢাকা এটাক’’ (২০১৭)- এর পর বাংলা সিনেমায় নতুন একটা ধারা তৈরী হয়েছে। ‘কপ একশন থ্রিলার’ বলা যায় ধারাটিকে। কিন্তু সত্যি বলতে, ‘’ঢাকা এটাক’’- এর পর এ ধারার অন্য ছবিতে সেই থ্রিলটা পাওয়া যায়নি। ছবিগুলোর গল্প এবং চিত্রনাট্য অনেকটাই বোরিং ছিলো।
‘’অপারেশন সুন্দরবন’’ নিয়ে ব্যাপক প্রত্যাশার পাশাপাশি তাই একটু আধটু ভয়ও ছিলো যে, এ ছবিটিও এ ধারার আগের কয়েকটি ছবির মতো বোরিং হবে নাতো!
আশার কথা হচ্ছে যে, ছবিটিতে নির্মাতা বোর হওয়ার কোন সুযোগ রাখেননি। হয়তো ‘’ঢাকা এটাক’’- এর মতো অতো থ্রিলিং ক্ল্যাইম্যাক্স নেই এ ছবিতে, তবে অন্য অনেক দিক থেকে ছবিটি ‘’ঢাকা এটাক’’- এর চেয়ে বেটার। গোটা ছবিই ছোট ছোট টুইস্ট দিয়ে সাজানো যার ফলে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ছবিটি দর্শক ধরে রাখতে পেরেছে।
ম্যাড়ম্যাড়ে সস্তা বাংলা সিনেমার ভিড়ে ‘’অপারেশন সুন্দরবন’’ তুলনামূলক উন্নত সিনেমা হয়েছে আর এই বিষয়টিই দর্শকদের স্বস্তি দিবে।
ছবির গল্প সুন্দরবন এলাকার সাধারণ মানুষদের উপর বনদস্যুদের অত্যাচার- নির্যাতনের প্রেক্ষিতে বনদস্যু দমনে র্যাবের অভিযানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। নির্মাতা এই গল্পকে যতটা সম্ভব উপভোগ্য বানিজ্যিক সিনেমার আদলে তৈরী করার চেষ্টা করেছেন; তবে সেটা বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করে নয়। এইখানেই দীপঙ্কর দীপন তার কারিশমাটা দেখিয়েছেন। ছবিটি একইসঙ্গে বাস্তবসম্মত এবং উপভোগ্য হয়েছে যা সচরাচর বাংলা সিনেমায় দেখা যায় না।
দীপঙ্কর দীপনের নির্মাণস্টাইল আধুনিক। তিনি প্রতিটা দৃশ্যকে একইসঙ্গে বাস্তবসম্মত এবং উপভোগ্য করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ফলে সিয়াম, রোশান কিংবা তাসকিনরা যখন সুন্দরবনের ভিতরে দুর্ধর্ষ একশনে জড়িয়ে পড়ছে তখন সেটা ফিল্মি মনে হচ্ছেনা বরং বেশ বাস্তবসম্মতই মনে হচ্ছে।
আবার তিন জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকার রোমান্সের অংশটুকুও বাহুল্যবর্জিত ও সুন্দর লেগেছে।
দুই নায়ক সিয়াম আহমেদ এবং রোশানকে একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে দেখা গেছে যা অন্যরকম ভালো লেগেছে। যে কয়েকটি দৃশ্যে তাদের একসাথে দেখা গেছে সেই দৃশ্যগুলো একটু হলেও বেশী উপভোগ্য লেগেছে।
সিয়াম ছবিতে রোশানের চেয়ে কিছুটা বেশী গুরুত্ব পেয়েছে এবং তার অভিনয়ও ছিলো বেশ ভালো। রোশানও ভালো সুযোগ পেয়েছে। নুসরাত ফারিয়া এবং দর্শনা বণিকও ভালো চরিত্র পেয়েছে। বিশেষ করে, ফারিয়াকে দারুণ স্মার্ট আর দর্শনাকে দারুণ প্রিটি লেগেছে।
তাসকিন রহমান ভিন্ন স্বাদের একটা চরিত্র করেছেন এবং আমার কাছে তাকে ভালো লেগেছে। তবে অন্য ভিলেনরা তেমন কোন চমক দেখাতে পারেননি।
মনোজ প্রামাণিক ভালো একটি চরিত্র পেয়েছেন এবং বরাবরের মতো তার সাবলীল অভিনয় দিয়ে চরিত্রটিকে নিজের করে নিয়েছেন।
রওনক হাসানের চরিত্রটাও মন্দ না। মনোজ এবং রওনকের প্রেমিকা চরিত্রের মেয়ে দুটোও ইন্টারেস্টিং চরিত্র পেয়েছে।
রিয়াজ সে হিসেবে সাদামাটা একটি চরিত্র পেয়েছেন। তার চরিত্রে অভিনয় দেখানোর সুযোগ ছিলোনা।
অপারেশন সুন্দরবনে ছোট, বড় অনেকগুলো চরিত্র আছে। এতোগুলো চরিত্রকে এক গল্পে গাঁথা বেশ কঠিন বটে। কিন্তু দীপঙ্কর দীপন মনে হচ্ছে খুব সহজেই কাজটা করতে পেরেছেন। ছবির কোন জায়গায় মনে হয়নি- নির্মাতা এতোগুলো চরিত্রকে একসাথে গাঁথতে স্ট্রাগল করছেন। বরং মনে হয়েছে যেন স্মুথলি এগিয়েছে সবকিছু। এই বিষয়টাও নির্মাতা হিসেবে দীপঙ্করকে আরো বেশী গ্রহনযোগ্যতা এনে দিবে আগামীতে।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে ছবির বিগ এরেঞ্জমেন্ট, সুন্দরবনের ভয়ঙ্কর সুন্দর লোকেশন, বিএফএক্স এবং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছবিটিকে আলাদা বিশেষত্ব দিয়েছে।
সুন্দরবনের মধ্যে ট্রলার, স্পিডবোট, হেলিকপ্টার এবং এসবের মধ্যে নায়কের এন্ট্রি হচ্ছে, ফাইট হচ্ছে, রোমান্স, কমেডি সব হচ্ছে আর মাঝে মাঝে ভিএফএক্সের মাধ্যমে বাঘ মামার এন্ট্রি হচ্ছে; সাথে পুরো ছবি জুড়ে রহস্যময় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক- সবকিছু মিলেমিশে সুন্দর সব দৃশ্যের তৈরী হচ্ছে আর এসব দেখতে দেখতে কখন যে সোয়া দুই ঘন্টা পার হয়ে যায় তা টের পাওয়া যায়না।
মোটামুটি এই হচ্ছে অপারেশন সুন্দরবন।
খুব বেশী থ্রিল কিছু আশা না করে টাইম পাস করার জন্য পরিপাটি একটি ছবি দেখতে চাইলে ‘’অপারেশন সুন্দরবন’’ নির্দিধায় দেখতে পারেন। বোর হওয়ার মতো বা হতাশ হওয়ার মতো কিছু নেই ছবিতে।
আর যারা বাংলা সিনেমাপ্রেমী তারা তো এ ছবি অবশ্যই দেখবেন। বাংলা সিনেমার উন্নয়নের সাক্ষী হতে হলে ‘’অপারেশন সুন্দরবন’’- এর মতো ছবি তো দেখতেই হবে।
 
রিভিউ লিখেছেন- Md Ramiz 
 

 

Back to top button