scienceলামিয়া সুলতানা তাযকিয়া

সুরের রং দেখা আর রঙের শব্দ শোনা যাক – Synesthesia

চলুন,সুরের রং দেখা আর রঙের শব্দ শোনার সাথে পরিচিত হই..

Synesthesia, বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় “সংমিশ্রিত অনুভুতি”।

সুরের রং দেখা আর রঙের শব্দ শোনা যাক - Synesthesia


মানব ইন্দ্রিয়গুলোর  যেকোনো একটিতে প্রাপ্য কোনো অনুভুতি যখন একই সাথে অন্য কোনো ইন্দ্রিয় অনুভব করে তখনই Synesthesia  হয় আর যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে তাকে বলা হয় সিনেস্থেট ।

 সিনেস্থেসিয়া একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা যা  হ্যালোসিনেশন কিংবা অবাস্তব কল্পনা কোনোটিই নয়।  

একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা বা বর্ণকে নির্দিষ্ট কোনো রং বা আকারের মনে হওয়া(লাল রং শুনতে পাওয়া কিংবা গিটারের সুরে রং দেখতে পাওয়া),

দৈনন্দিন নির্দিষ্ট কোনো কাজের ক্ষেত্রে  প্রতিবার একই রকম অনুভূতি হওয়া বা দৃশ্য দেখতে পাওয়া(আলমারি কিংবা ডেস্কের সামনে যেতেই নির্দিষ্ট কিছু আকৃতির রং প্রতিবারই দেখতে পাওয়া কিংবা কারো কথা শুনলেই মুখে মিষ্টি বা তেতো স্বাদ পাওয়া) ইত্যাদি  সিনেস্থেসিয়ার উদাহরণ।

যে অনুভূতি সিনেস্থেসিয়ার উদ্রেক ঘটায় তাকে বলে Inducer, আর নতুন  অনুভূতিটিকে  বলা হয় Concurrent.অপছন্দের ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলতে শোনা যায়,” তার কথা শুনলেই আমার গা জ্বালা করে!”এক্ষেত্রে ওই অপছন্দনীয় ব্যক্তির কথা হলো Inducerএবং গা জ্বালা করাটা হলো concurrent.

তবে অনেক ক্ষেত্রে Inducer সিনেস্থেসিয়া সৃষ্টির ক্ষেত্রে ততটাও গুরুত্বপূর্ণ হয় না।

Synesthesia-র পুরো প্রক্রিয়াটিই স্বয়ংক্রিয় এবং অনৈচ্ছিক।

তবে আপনি নির্দিষ্ট কিছু ড্রাগস্ ব্যবহারের মাধ্যমে সিনেস্থেসিয়ার উদ্রেগ ঘটাতে  পারেন।(বর্তমানে অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় সেগুলোর নাম দেওয়া হলো না)

সিনেস্থেসিয়াকে কোনো সমস্যা বা রোগ বলা যায় না বরং প্রকৃতি প্রদত্ত উপহার হিসেবেই ধরা হয়ে থাকে।

 কারণ এর উপকার ছাড়া অপকার একদমই নেই।সিনেস্থেটদের স্মৃতিশক্তি  খুবই তীক্ষ্ণ হয়। তারা  অতীতে ঘটা সামান্য  কোনো ঘটনাও বেশ খুঁটিনাটি সহ মনে রাখতে  পারেন এমনকি  কঠিনতম কোনো ছন্দও  তাদের বশ্যতা স্বীকার করে নেয় খুব সহজেই।

 সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় 4.4% মানুষেরই কম বেশি সিনেস্থেসিয়া হয়।তবে তাদের অধিকাংশই Synesthesia সম্পর্কে না জানার ফলস্বরূপ তাদের এই বিচিত্র অনুভুতিকে অতি  সাধারণ বিষয়  বলেই মনে করে গুরুত্ব দেন না এবং কারো কাছে অভিজ্ঞতা প্রকাশও করেন না।বলে রাখা ভালো কিছু সিনেস্থেট তাদের এই ক্ষমতা বয়ঃসন্ধিকালে হারিয়ে ফেলেন।

সিনেস্থেসিয়া প্রধানত দুই প্রকার।  

১. প্রজেক্টিভ (বাস্তবেই বিভিন্ন বর্ণ,শব্দ,স্বাদ অনুভব করেন)

২. অ্যাসোসিয়েটিভ 

 (দুটি অনুভূতির মাঝে বেশ জোরালো সংশ্লিষ্টতা অনুভব করা)

 ধরুন,প্রজেক্টিভ সিনেস্থিটরা  ভায়োলিনের সুরে বেগুনি রং দেখেন অপরদিকে অ্যাসোসিয়েটিভ সিনেস্থিটরা জোরালো ভাবে মনে করেন ভায়োলিনের সুরটা বেগুনি।

কোনো ব্যক্তির সিনেস্থেসিয়ার অভিজ্ঞতা না হলে এর অনুভূতি তাকে বোঝানো সম্ভব নয়।ঠিক যেমন কোনো জন্মান্ধ ব্যক্তিকে কখনোই বোঝানো যাবে  না যে লাল রং দেখতে কেমন কিংবা ঝড়বৃষ্টি,বজ্রপাতের সময় প্রকৃতি দেখতে  ঠিক কেমন।

এটাকে বলা হয় qualia.

নির্দিষ্ট qualia না থাকলে  নির্দিষ্ট অনুভূতি বোঝা যায় না।সিনেস্থেটদের qualia সংখ্যা বেশি থাকে তাই তারা ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি পায়।

ব্যক্তিভেদে এক বা একাধিক প্রকরণের সিনেস্থেসিয়া হয়ে থাকে।এরকমও সিনেস্থেট আছেন যাদের  ৫-৭টি প্রকরণের সিনেস্থেসিয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে!

আপনি জেনে অবাক হবেন  সিনেস্থেসিয়ার  ৫টি প্রকরণের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সিনেস্থেট, “ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন” হয়ে নিজের প্রখর মেধার পরিচয় দিয়েছেন।

 

এবার,সিনেস্থেসিয়ার ভিন্ন ভিন্ন  প্রকরণ গুলো জেনে নেওয়া যাক।

১. Grapheme-Colour Synesthesia: বর্ণমালা,সংখ্যা ইত্যাদি বিভিন্ন   রং এর এবং আকৃতির দেখা। এটি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।উদাহরণ স্বরূপ ব্যক্তিভেদে  “A” এর রং লাল,নীল কিংবা ধূসর  হতে পারে কিংবা “প” বর্ণটি দেখলেই শাপলাফুল মনে হওয়া।

২. Chromesthesia: শব্দ থেকে বর্ণ দেখতে পাওয়া।

৩. Spatial Sequence Synesthesia: বিভিন্ন সংখ্যা বা বর্ণমালাকে কাছে কিংবা দূরে মনে হওয়া।

৪. Ordinal Linguistic Personification: বিভিন্ন অক্ষর, সংখ্যা, দিন বা মাসের নাম কে মানুষের আকৃতি মনে হওয়া। “B” কে মনে হতে পারে চশমা পরা মোটাতাজা কমবয়সী ছেলে কিংবা “৫”কে মনে হতে পারে খিটখিটে মেজাজের কথা প্যাঁচানো স্বভাবের বুড়ো লোক।

৫. Number Form: ক্রমবর্ধমান সংখাসমূহ কে একটি ম্যাপ  মনে হওয়া।

৬. Mirror Touch Synesthesia: অন্য কাওকে স্পর্শ করা হলে সে অনুভূতি  নিজেও অনুভব করা।যেমন ধরুন,বাংলাসিনেমার মতো প্রিয়জনকে কেউ আঘাত করলে সে আঘাত নিজেও অনুভব করা।তবে বাংলাসিনেমা না হওয়ায় সিনেস্থেসিয়ার ক্ষেত্রে প্রিয়জনকে সিনেস্থেট ব্যক্তির চোখের সামনে আঘাত করা আবশ্যক।

৭. Auditory Tactile Synesthesia: শব্দানুভূতি থেকে স্পর্শ অনুভব করা।আমরা অনেকসময় বলে থাকি,” আহা,তার কণ্ঠের এই গানটি হৃদয় ছুঁয়ে গেল!”

শব্দ কীভাবে অঙ্গে ছুঁতে বা স্পর্শ  করতে পারে ভেবেছেন কখনো?ভাবুন…

৮. Spatio Temporal Synesthesia: সময় কে ত্রিমাত্রিক কাঠামো রূপে দেখতে পাওয়া।

অনেককে বলতে শোনা যায়,”সময় কিন্তু দৌড়ে চলে যাচ্ছে!”

সময় কীভাবে দৌড়াতে পারে?

৯. Lexical Gustatory Synesthesia: শব্দ শুনে মুখে নির্দিষ্ট কোনো স্বাদ পাওয়া।উদাহরণস্বরূপ,পড়তে বসার কথা বললেই  মুখে নিমপাতার রস ঢেলে দেওয়ার স্বাদ পাওয়া।

অহরহই বলা হয়ে থাকে,”বাচ্চামেয়েটা খুব মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে!”

এগুলো কেন বলেন ভেবে দেখুন না!

যাহোক,সিনেস্থেসিয়া কিন্তু  বংশানুক্রম

অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে পিতা মাতা থেকে সন্তানে বাহিত হওয়ার সম্ভাবনা অধিক।আপনার ক্ষেত্রে এরকম হলে আপনার সন্তানও হয়তো  সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত এই বিশেষ উপহার পেতে চলেছে!

 আরো একটি উদাহরণ দিতে গেলে,

অ্যানিমেশন প্রেমিদের মধ্যে বিশেষ চাঞ্চল্যকর সিনেমা “Ratatouille”দেখেননি এমন খুঁজে পাওয়া মুশকিল।এই সিনেমার মূল চরিত্র “Amey” খাবারের স্বাদকে কিছু রঙের মাধ্যমে অনুভব করছে দেখতে মিলে।এটাই মূলত সিনেস্থেসিয়া।এক্ষেত্রে “Amey”কিন্তু সিনেস্থেট।

 সবশেষ প্রশ্ন,আপনিও কি  একজন সিনেস্থেট!?  

লেখিকাঃ লামিয়া সুলতানা তাযকিয়া

আমাদের ফেইসবুক পেইজ- প্রিয়জানালা

 আরো পড়ুনঃ  মেধাবিদের প্রতি আকর্ষিত হচ্ছেন? আপনি স্যাপিওস্যাক্সুয়াল নন তো? 
Back to top button