scienceলামিয়া সুলতানা তাযকিয়া

কী ঘটবে আপনার সাথে যদি আপনি ব্লাকহোলে পতিত হোন? Black Hole – কৃষ্ণগহ্বর

ব্লাক হোল অথবা কৃষ্ণগহ্বর শব্দটির সাথে আমরা প্রায় সকলেই পরিচিত। মহাবিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় এবং লোমহর্ষক একটি নাম এই “Black Hole”।  

Black Hole সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা প্রায় সবারই আছে।এর গ্রেভিটেশনাল ফোর্স এত বেশি যে এর ইভেন্ট হরাইজনের আশেপাশে অবস্থান করা যেকোনো আকার,আকৃতি,প্রকৃতির বস্তুকে নিজের দিকে টেনে নেয়।এমনকি আলোর কণারও এর হাত থেকে নিস্তার নেই। যে কারণে Black Hole সম্পূর্ণরূপে কালো অন্ধকার।

কী ঘটবে আপনার সাথে যদি আপনি ব্লাকহোলে পতিত হোন? Black Hole - কৃষ্ণগহ্বর


আমার আলোচনার বিষয় হলো “কী ঘটবে আপনার সাথে যদি আপনি Black Hole এ পতিত হোন?”

এটা কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু নয়।বর্তমান বিশ্ব যে পরিমাণে অজানাকে জানার চেষ্টা চালানো হচ্ছে,কয়েক যুগ পরেই মানুষ হয়তো আরো দূরের কোনো বাসযোগ্য গ্রহ আবিষ্কারের লক্ষ্যে রওনা হবে এবং তাদের স্পেসশিপটি কোনো এক অজানা Black Hole এর ইভেন্ট হরাইজনে পতিত হলো।এবার ঠিক কী ঘটবে তাদের সাথে?

 স্বাভাবিক ভাবে Black Hole এ পতিত হওয়ার একমাত্র পরিণাম মৃত্যু এবং ভয়ংকর মৃত্যু।

প্রথমেই বলা হয়েছে ইভেন্ট হরাইজনের আশেপাশে  কোনো বস্তু গেলেই তাকে Black Hole নিজের দিকে টেনে নেয়।এক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না।প্রচন্ড গতিবেগে  Black Hole আপনাকে নিজের দিকে টেনে নেবে।এই টেনে নেওয়ার শক্তি এত বেশি যে আপনার পা সামনে এবং মাথা পেছনে থাকলে পায়ের ক্ষেত্রে গ্রেভিটেশনাল ফোর্স বেশি হওয়ায় আপনার পা দুটো লম্বা হয়ে সামনে যেতে থাকবে।যাকে মূলত Spaghettification  বলা হয়।ঠিক যেভাবে চুইংগামের একাংশকে টানলে লম্বা হয়ে চলে আসতে থাকে।এরপর আপনি প্রচন্ড বেগে Black Hole এর কেন্দ্রের দিকে যেতে থাকবেন।

Black Hole এর কেন্দ্রে অনেককিছুই ঘটতে পারে।

যদি আপনি ধরে নেন Spaghettification হওয়ার পরও আপনার প্রাণ আছে তবে আপনি সেখানে পৌঁছে প্রথমেই যে অবস্থার মুখোমুখি হবেন তার নাম Singularity.

 Singularity বিষয়টি আসলে বর্ণনা করাই কঠিন।তাও এ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

Black Hole এমন এক রহস্যময় জগৎ যেখানে স্থান,কালও নিজের আচরণ পরিবর্তন করে ফেলে।সেখানে স্থান,কাল সব মিলেমিশে একাকার।এই জগতে   ফিজিক্সের কোনো সূত্রই কাজ করে না।এসকল অবস্থাকেই মূলত Singularity বলা হয়।

কী ঘটবে আপনার সাথে যদি আপনি ব্লাকহোলে পতিত হোন? Black Hole - কৃষ্ণগহ্বর
Black Hole – কৃষ্ণগহ্বর

একটি উদাহরণ দিচ্ছি তাহলে হয়তো বুঝতে কিছুটা সহজ হবে।

 আমরা জানি,

নিউটনের মহাকর্ষ  সূত্রটি,

“মহাবিশ্বের যেকোনো দুটি বস্তুকণা পরস্পরকে আকর্ষণ করে।এই আকর্ষণ বলের মান বস্তু দুটির ভরের গুনফলের সমানুপাতিক এবং এদের মধ্যকার দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।”

অর্থাৎ,

F=G×m1m2/d^2

যেখানে,

 ১. F হচ্ছে দুটি বস্তুকণা একে অপরকে আকর্ষণ বলের মান।

২. m1 এবং  m2 হচ্ছে দুটি বস্তুকণার ভর।

৩. d বস্তুকণাদ্বয়ের  মধ্যকার দূরত্ব।

 ৪. G মহাকর্ষীয় ধ্রুবক যার মান (6.67×10^-11Nm^2kg^-2)

Black Hole এর ক্ষেত্রে বস্তু কণাদ্বয়ের দূরত্ব d বলতে কিছু থাকে না।যার ফলে আকর্ষণ বলের মান হিসেবই করা যায় না।

ঠিক তেমনই স্পেস(স্থান) এবং টাইমের সূত্রও সেখানে কাজ করে না। সবকিছুই infinite(অসীম)হয়ে যায়।

 একবার Black hole এ প্রবেশ করলে  কোনোভাবেই সেখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব হবে না।কারণ,এতবেশি মুক্তিবেগ অর্জন করা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়।

চলুন, কিছুক্ষণের জন্য ধরে নেওয়া যাক আপনি জীবন নিয়ে Black Hole  এ পৌঁছুতে পারলেন।

তাহলে কিন্তু আপনি এই মহা বিশ্বের সকল রহস্য উদঘাটন করতে পারবেন।সময় সেখানে থমকে আছে যার ফলে মহাবিশ্বের অতীত থেকে বর্তমান সবকিছুই আপনি জানতে পারবেন।

এ বিষয়টিকে মূলত ইনফরমেশন প্যারাডক্সে সংঙ্গায়িত করা যায়।ইনফরমেশন প্যারাডক্সের মূল কথা কোনো তথ্যই একেবারে মুছে যায় না বরং সব তথ্যই জমা থাকে।সেটি আমরা Black Hole এর ভেতর পেতে পারি।

 তাছাড়া,ধারণা করা হয় Black Hole এর ভেতর পাঁচ-ছয়টি ডাইমেনশনের একত্রে অবস্থান।ফলে আপনি সেখানে যেকোনো ধরণের আজব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতেই পারেন যা কল্পনাতীত।

তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আপনি সেখান থেকে কোনো তথ্যই বাহিরে পাঠাতে পারবেন না।

আপনি সব জানলেন,অনেক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন,কিন্তু এবার আপনার পরিণতি কী?

কী ঘটবে আপনার সাথে যদি আপনি ব্লাকহোলে পতিত হোন? Black Hole - কৃষ্ণগহ্বর
Black Hole – কৃষ্ণগহ্বর


আপনি কিন্তু সেখানে অমরত্ব লাভ করতে পারেন।যেহেতু সময় থমকে আছে এবং স্পেস-টাইমের সূত্র
  Black Hole এর ক্ষেত্রে infinite বলছে!অথবা ফ্রিজড্ হয়ে যেতে পারেন আজীবনের জন্য।

হুশে ফিরিয়ে  আনুন…

আপনি Spaghettificationএর সময়ই ভয়ংকর মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে ফেলেছেন।

কোনো কোনো বিজ্ঞানীদের ধারণা একটি  Black Hole সৃষ্টির পাশাপাশি একটি White Hole এরও সৃষ্টি হয় এবং Black Hole এর শেষ হয় White Hole এর মাধ্যমে।এদের  আমরা Worm Hole বলি।

এবার  হোয়াইট হোল সম্পর্কে একটু ধারণা নেওয়া যাক।

ব্ল্যাকহোলের বিপরীত হলো হোয়াইট হোল।ধারণা মতে ব্ল্যাক হোল যা ধারণ করে হোয়াইট হোলের মাধ্যমে তা বাহিরে নিক্ষেপ করে থাকে।

আশ্চর্য জনক তথ্য হচ্ছে এর মাধ্যমে টাইম ট্রাভেল সম্ভব।তবে হোয়াইট হোল এখনো দৃশ্যমান হয়নি এবং ধারণা করা হয় এটি এত ছোটো যে এর ভেতর স্পেসশিপ তো দূর  exotic matter ছাড়া অন্য কোনো পদার্থ প্রবেশ করতে পারে না।

তবে এই exotic matter এখনো সনাক্ত করা যায়নি।

আবার এটি ছাড়া  অন্যকোনো পদার্থ প্রবেশ করলে হোয়াইট হোল বিস্ফোরণও হতে পারে।এবার যদি কোনোভাবে হোয়াইট হোলের আকার বৃদ্ধি করে সেখানে আমরা অবস্থান করতে পারি তবে এর মাধ্যমে আমরা অন্য যেকোনো ইউনিভার্সেও প্রবেশ করতে পারি।এমনকি অতীত কিংবা ভবিষ্যতেও গমন করা সম্ভব হতে পারে।

ওয়ার্ম হোলের মাধ্যমেও টাইম ট্রাভেল  সম্ভব।ব্ল্যাকহোলের সৃষ্টি হয় এক ইউনিভার্সে এবং তার শেষ হয় অন্য ইউনিভার্সের হোয়াইট হোলের মাধ্যমে।যার  মধ্যে দিয়ে  প্রবেশ করা যেতে পারে অন্য ইউনিভার্সে,অতীত,ভবিষ্যৎ কিংবা প্যারালাল ইউনিভার্সে।

কী ঘটবে আপনার সাথে যদি আপনি ব্লাকহোলে পতিত হোন? Black Hole - কৃষ্ণগহ্বর
Black Hole – কৃষ্ণগহ্বর

ব্ল্যাক হোলে প্রাণ নিয়ে প্রবেশ করতে পারলে অনেক  অভিজ্ঞতা নেওয়া যাবে ঠিক-ই তবে কোনোভাবেই আর পৃথিবীতে ফিরে আসা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।তাই একে ‘না ফেরার জায়গা’ও বলা চলে।

যাহোক,আশা রাখি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রাণ নিয়ে Black Hole রহস্য উদঘাটন করবে এবং অনেক অনেক অভিজ্ঞতা অর্জনে সক্ষম হবে।

লেখিকাঃ লামিয়া সুলতানা তাযকিয়া

আমাদের ফেইসবুক পেইজ- প্রিয়জানালা

 আরো পড়ুনঃ  মেধাবিদের প্রতি আকর্ষিত হচ্ছেন? আপনি স্যাপিওস্যাক্সুয়াল নন তো? 
Back to top button