কাইজার ওয়েব সিরিজ রিভিউ – আফরান নিশোর গোয়েন্দাগিরি কেমন ছিল?
ডাবল মার্ডার কেস, পারিবারিক কলহ, বন্ধুত্ব, গেমিং এডীকশন এবং গোয়েন্দাগিরির মিশ্রণের “পার্ফেক্ট” চিত্রায়ন ওয়েব সিরিজ ❝কাইজার❞।
কাইজার ওয়েব সিরিজ রিভিউ – Kaiser Webseries Review |
ইদ মানে আনন্দ, আর এই আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করে আমাদের সমৃদ্ধশালী বাংলা নাটক জগত। সারাবছর বিভিন্ন নাটক এলেও বিশেষ করে ইদের সময় যেন অপেক্ষার পালা শুরু হয়ে যায় প্রিয় তারকাদের নাটক দেখার জন্য। কার নাটক কত ভালো হয়েছে সে নিয়েও বিশ্লেষণ হয় গভীর। সময় পালটের গেছে অনেক সমৃদ্ধশালী নাটক ইন্ডাস্টিতে এসেছে অনেক পরিবর্তন। পালটে গিয়েছে নাটকের ধরন তথা গল্পের ধরন। খুব কম সংখ্যক নির্মাতা আছেন যারা কি-না এখনো আমাদের সে গর্ব করা নাটক জগতকে ধরে রেখেছেন তাদের কাছে এবং আছেন কিছু অভিনেতা যারা পছন্দ করেন নিজেদেরকে ভাঙ্গতে। আগেই বলেছি সময় পালটেছে। সময়ের এই পরিবর্তনে এসেছে ওটিটি মাধ্যম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সিনে ওয়াল্ড আপন করে নিয়েছে এই মাধ্যমকে। ভিন্নতা নেই আমাদের দেশেও। তড়িৎ গতিতে এগিয়ে চলছে ওটিটি মাধ্যম। ভালোকাজের শর্ত নিয়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়াকে সাধুবাদ। এবার একটু লেখা যাক আমার মূল টপিক।
ইদ-উল-আযাহা’ তে ভারতীয় বাঙালী ওটিটি মাধ্যম “হইচই” এ রিলিজ পেয়েছে তানিম নূর পরিচালিত এবং আফরান নিশো অভিনীত “কাইজার” ওয়েব সিরিজ। ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশো, উক্ত সিরিজে হাজির হয়েছিলেন ভিন্ন সাজে। নিশো সাহেবের ভিন্ন সাজ নতুন নয়। ভিন্ন ভিন্ন সাজে তিনি তার দর্শকদের মুগ্ধ করতে সিদ্ধহস্ত। অভিনেতা নিশো বরাবরই নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে পর্দাতে এঁকে চলেছেন নিজের অনন্য এক কাব্যচিত্র।
ডাবল মার্ডার কেস, পারিবারিক কলহ, বন্ধুত্ব, গেমিং এডীকশন এবং গোয়েন্দাগিরির মিশ্রণের “পার্ফেক্ট” চিত্রায়ন ওয়েব সিরিজ ❝কাইজার❞। সাবলীল ভাবে গল্প বলেছেন সিরিজটির পরিচালক তানিম নূর। এই সাবলীল গল্পকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছেন অবশ্যই আফরান নিশো। সিরিজের প্রাণ নিশো, হতাশ করেননি “হতাশাগ্রস্থ” চরিত্রে অভিনয় করা নিশো। ভিলেন কিংবা রোমান্টিক ইমেজ ভেঙে নিশো এবার হাজির হয়েছিলেন ডিবি পুলিশের চরিত্রে।
Afran Nisho- Kaiser |
এডিসি কাইজার চৌধুরী, স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স মেয়ে থাকে স্ত্রীর সাথে। সাবেক স্ত্রী বিয়ে করেছেন ছোটবেলার বন্ধুকে। বন্ধুত্বে পড়েছে ভাটা। হতাশার বালুচরে ডুবে থাকা কাইজার অনলাইন ভিডিও গেমে হারিয়েছেন নিজেকে। গেমিং পার্টনারকে নিয়ে মজে থাকেন সারাদিন গেমে। পারিবারিক, শারিরীক এবং মানসিক এই তেটানার মধ্যে শহরে জোড়া খুন। একই ফ্লাটে খুন হয় দুই বান্ধবী। কেস এসে জোটে কাইজার চৌধুরীর হাতে। মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত এ ডি সি কাইজার লেগে পড়েন খুনের তদন্ত কাজে। খোলাসা হয় সন্দেহভাজন ব্যক্তির। গ্রেফতার করা হয় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে। উপরমহলের প্রেশারের ফলে কেস অন্য এক ডিটেকটিভ টিমের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে হাল ছাড়েন না আমাদের কাইজার সাহেব তিনিও চালিয়ে যেতে থাকে তদন্ত। তদন্তের শেষ পর্যায়ে ❝পারফেক্ট টুইস্ট❞কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেড়িয়ে আসে। সাত পর্বের ওয়েব সিরিজ কাইজার দর্শকবৃন্দকে নিরাশ করেনি একদমই।
Kaiser – Official Trailer দেখুন
কাইজার ওয়েব সিরিজের সব থেকে ভালোলাগার বিষয় ছিলো এর গল্প বলার ধরন এবং নির্মাণশৈলী। তানিম নূর তার এই সিরিজটির নাম রেখেছেন জার্মান সম্রাটদের উপাধি ❝কাইজার❞থেকে। গল্পের নাম করনের এই মুন্সিয়ানা গল্প বলার ধরনেও বিরাজ করেছে। আমাদের ছোটবেলার প্রিয় গোয়েন্দা গল্প ❝তিন গোয়েন্দা-কে❞কেন্দ্র করে মূলত কাইজারের গল্প আবর্তিত হয়েছে। গল্পে দেখানো হয়েছে ছোটবেলা তিন বন্ধু মিলে মজার ছলে গোয়েন্দা এজেন্সি খুলে বসে। কাইজার, অম্লান এবং তন্ময় এই তিন বন্ধু। বড় হয়ে কাইজার পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে জয়েন করে, অম্লান ইনভেস্টিগেটর জার্নালিস্ট এবং তন্ময় আই টি বিশেষজ্ঞ। ওয়েব সিরিজে তিন গোয়েন্দাকে ট্রিবিউট দেওয়া ছাড়াও উপমহাদেশের প্রিয় গোয়েন্দা বা সত্যান্বেষী যেমন ফেলুদা, বোমকেশ বক্সি এমন সব কিংবদন্তি চরিত্র গুলোকেও গল্প বলার ছলে ট্রিবিউট দিয়েছেন তামিম নূর। এছাড় এই ট্রিবিউট দেয়া হয়েছে বিখ্যাত সব মাডার মিস্ট্রি লেখকদেরকে। বাংলাদেশি একটি মাডার মিস্ট্রি ওয়েব সিরিজে যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
সাধারণত বিভিন্ন দেশের মার্ডার মিস্ট্রি ওয়েব সিরিজ গুলোতে গোয়েন্দা বা ডিটেকটিভ চরিত্র গুলোকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে তামিম নূর কিছুটা গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে তার গোয়েন্দা চরিত্র তৈরি করেছেন। কাইজার ওয়েব সিরিজে শুধু মাত্র গোয়েন্দা কাহিনী দেখানো হয়নি, মার্ডার মিস্ট্রির কেসের খোলাসার সাথে দেখানো হয়েছে একজন গোয়েন্দার ব্যক্তিগত জীবন। একজন গোয়েন্দার বেড়ে ওঠা, তার বৈবাহিক জীবন, সামাজিক জীবন পুরোটা দেখানো হয়েছে কাইজার সিরিজে।
একজন জাঁদরেল অভিনেতা হিসাবে আফরান নিশো নিজের চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছেন এই সিরিজে। নিজের বৈবাহিক জীবনের হতাশা, কাছের বন্ধুকে সাবেক বৌয়ের বিয়ে করা নিয়ে নিজের অভিযোগ, গেমিং এ এডিক্টেড হয়ে নিজেকে কিছুটা হতাশা থেকে মুক্তি দেয়া এসব সূক্ষ ব্যাপার গুলো ভীষণ সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। নিশো ছাড়াও প্রত্যেক চরিত্র এবং সাপোর্টিং চরিত্র গুলো সুক্ষ ভাবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করেছেন বিশেষ করে ইমতিয়াজ বর্ষন এন্টাগনিস্ট হিসাবে নিজেকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। যদিও তিনি নিজেকে মেলে ধরার সুযোগটা পেয়ে ওঠেনি কাইজার সিজন ওয়ানে। এছাড়া শতাব্দীর ওয়াদুদ, দ্বীপানিতা মার্টিন, কাইজারের বন্ধু অম্লান চরিত্রে মোস্তাফিজুর রহমান ইমরান সহ বাকি সবাই নিজেদের জায়গা থেকে দারুণ ভাবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করেছেন।
আয়মান আসিফ স্বাধীন এর লেখা এবং তানিম নূরের ডিরেকশনে কাইজার সত্যিই অসাধারণ ছিলো। সিনেমাটোগ্রাফি, বিজিএম, এডিটিং এন্ড কালার, ডায়লোগ, অভিনয় সব কিছু মিলিয়ে ফুল বিনোদনের প্যাকেজ ওয়েব সিরিজ কাইজার।
PriyoJanala Rating- 4/5
Kaiser Webseries Watch
বাংলা সিনেমা ও ওয়েবসিরিজ নিয়ে আমাদের আর্টিকেলগুলো পড়ূন-
বাংলাদেশে OTT Platform এর ভবিষ্যৎ
হাওয়া সিনেমার দুই গানে বাজিমাৎ – সাদা সাদা কালা কালা ও এ হাওয়া
চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত হাওয়া (Hawa)- হতে যাচ্ছে বাংলা সিনেমার নতুন ইতিহাস
গত দশকের বাংলাদেশের সেরা ১০ সিনেমার রিভিউ – বাংলা সিনেমা রিভিউ
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আপনার মতামত আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই কমেন্ট এর মাধ্যমে আপনার মতামত জানান। ধন্যবাদ।
প্রিয়জানালা’র প্রিয় পাঠকঃ বাংলা ব্লগ, তথ্য ও প্রযুক্তি, সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান, খেলাধুলা, পড়াশুনা, বিউটি টিপস, স্বাস্থ্য টিপস, সিনেমা রিভিউ, চাকরির গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলোর আপডেট পেতে এবং মতামত প্রকাশের জন্য আমাদের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ প্রিয়জানালা এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।