movies

অ্যাভাটার ২ রিভিউ- ইতিহাসের সেরা ভিএফএক্স সিনেমা AVATAR 2

অ্যাভাটার ২- দ্যা ওয়ে অফ ওয়াটার রিভিউ

অ্যাভাটার ২- আমার দেখা শ্রেষ্ঠ মুভি! অবিশ্বাস্য মেকিং! তিনঘন্টা যেন এক অন্য দুনিয়ায় ছিলাম! অ্যাভাটার -২ এর দর্শক রিভিউ ছিল এরকম! তিনঘন্টা দর্শককে অন্য দুনিয়ায় রাখতে পারা মুভিটা কেমন তা কি আর বলে দিতে হয়? নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছেন। মুভি দিয়ে দুনিয়া তোলপাড় করে দেওয়াই যেন জেমস ক্যামেরুনের কাজ।  টাইটানিক খ্যাত পরিচালকের এভাটার বিশ্ব মাতানোর ১৩ বছর পর দর্শকরা স্বাদ পেলেন অ্যাভাটার ২-দ্যা ওয়ে অফ ওয়াটার এর। জেমস  অ্যাভাটারকে বলা হয় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মুভি। শ্রেষ্ঠ মুভির সমস্যা এই যে এর সিকুয়েল বেশিরভাগ সময়ই হতাশ করে। কিন্তু অ্যাভাটার ২- দ্যা এ  তিনঘণ্টা ভিনগ্রহের পানির নিচের সেই অলৌকিক দুনিয়ায় থাকার পর যখন ফিরে আসবেন তখন এটা ভেবে হতাশ হবেন যে, আপনি কেন বাস্তবে ফিরে আসলেন। এখানেই অ্যাভাটার ২ -দ্যা ওয়ে অফ ওয়াটারের স্বার্থকতা।
টাইম ট্রাভেলের কথা সাইন্স ফিকশনে তো সবাই পড়ে থাকবেন। বাস্তবেও যদি টাইম ট্রাভেল করতে চান তাহলে আপনাকে খুব বেশী কষ্ট না করে জেমস ক্যামেরুনের অ্যাভাটার ২- দ্যা ওয়ে অফ ওয়াটার মুভিটি দেখতে হবে। ভবিষ্যতের পৃথিবী কেমন হতে পারে তা ২০২২ সালে বসেই আপনি দেখতে পারবেন এভাটার ২ মুভিতে। অ্যাভাটার ২- দ্যা ওয়ে অফ ওয়াটার  মুভির কাহিনী প্যান্ডোরা নামক এক গ্রহকে কেন্দ্র করে যেখানে কিছুটা মানুষের আকৃতির এলিয়েন বাস করে। কিন্তু এই এলিয়েনদের গায়ের রঙ বা শরীরের গঠন মানুষের চেয়ে আলাদা। কিন্তু এই গ্রহের এলিয়েনদের আবেগ-অনুভূতি ঠিক মানুষের মত। মুভিতে মানুষের একটি অদ্ভুত অথচ খারাপ দিককে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আমরা মানুষ যা সহজে পেয়ে যাই তার  কখনো মূল্যায়ন করিনা। অ্যাভাটার মুভিতে মানুষ প্যান্ডোরা গ্রহের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু প্যান্ডোরা গ্রহের নাভিদের লিডার জেক স্যালি নিজে আগে মানুষ ছিল, সেজন্য মানুষের শক্তি এবং দূর্বলতা সম্পর্কে সে জানত। এজন্যই মানুষের পক্ষে প্যান্ডোরার নিয়ন্ত্রন নেওয়া সহজ ছিল না। কিন্তু মানুষের তীক্ষ্ণ বুদ্ধির সাথে ছিল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। চালাক মানুষ নিজেদেরকে ক্যামিকাল ব্যবহার করে প্যান্ডোরা গ্রহের অবতারে রুপান্তর করেছিল যাতে প্যান্ডোরা গ্রহে প্রভাব বিস্তার করা সহজ হয়। মুভির প্রধান ভিলেন চরিত্র কর্নেল যাকে জেক স্যালি মানুষ অবস্থায় হত্যা করেছিল কিন্তু মানুষ বৈজ্ঞানিকভাবে কর্নেলের দেহকে অবতারে রুপান্তর করে।  এতে করে কর্নেলের দেহ অবতারে রুপান্তরিত হলেও মন ঠিক মানুষের মতই কাজ করে। মুভিতে মানুষ প্যান্ডোরা গ্রহ থেকে দীর্ঘজীবন লাভ করার জন্য এক ধরনের পদার্থ সংগ্রহ করতে চায় যা শুধুমাত্র প্যান্ডোরাতেই পাওয়া যায়। আর যে গুহাতে ওই পদার্থ পাওয়া যায় তা নাভি অর্থাৎ প্যান্ডোরা গ্রহের অবতারদের দখলে থাকে। যারা অ্যাভাটার -২ মুভিটা ভালোভাবে বুঝতে চান তারা অবশ্যই পার্ট ১ আগে দেখে নেবেন। নাহলে পার্ট ২ এর অনেক কিছুই বুঝতে পারবেন না। পার্ট ২ তে মানুষ প্যান্ডোরা গ্রহের পানিতে থাকা মনস্টারদেরও হত্যা করে, কারণ তাদের শরীরে দীর্ঘজীবন লাভের এক ধরনের তরল থাকে যা পৃথিবীতে শত শত কোটি টাকায় বিক্রয় হয়। মুভিটির কাহিনী অত্যাশ্চর্য হলেও মুভির ভিএফএক্স, সিনেমাটোগ্রাফি এতটাই দারুন যে একবারের জন্যও মনে হবেনা আপনি অন্য এক দুনিয়ার চিত্র দেখছেন। মনে হবে আপনি বাস্তবেই আছেন। এজন্যই অ্যাভাটার ২ তৈরি করতে ১৩ বছর সময় লেগেছে।অনেকেই অবশ্য কাহিনী খুবই সাদামাটা বলেছেন, কাহিনীতে কোন টুইস্ট নেই বলেছেন। কিন্তু প্রতিটি চরিত্র, প্রতিটি ক্রিয়েচার, কাহিনীর বিন্যাস এতটাই অসাধারণ যে তাতেই আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। অন্য একটি দুনিয়ার গল্প অথচ মনে হবে পুরোটাই বাস্তব, কালার গ্রেডিং, সাউন্ড কোয়ালিটি এক কথায় অ্যামেজিং। পৃথিবীতে অন্য কোন মুভির এত অসাধারণ ভিএফএক্স নেই। মুভির বাড়তি আকর্ষন হচ্ছে এখানে ঠিক মানুষের মতই স্ত্রী-সন্তানের প্রতি ভালোবাসা-আবেগ দেখানো হয়েছে। সন্তানের জন্য মা-বাবা কি করতে পারে, সন্তান হারানোর বেদনা কি তা ঠিক পৃথিবীর মানুষদের মত করেই দেখানো হয়েছে। প্রানীদের প্রতি ভালোবাসাও মুভিটিতে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু মানুষের সীমাহীন লোভ-ক্রোধ আর স্বার্থপরতা আপনাকে অবশ্যই কষ্ট দেবে। নাভিদের মত আপনারও মনে হবে মানুষ কবে মানুষের মত আচরন করবে!
মুভির শেষ দৃশ্যে আপনাকে কাদিয়ে ছাড়বে। সেই সাথে শেখাবে সীমাহীন লোভে সুখ নেই, সুখ আছে দয়া-মায়া, ত্যাগ আর ভালোবাসায়। অনেকটাই স্পয়লার দেওয়া হয়ে গেল। তবে অ্যাভাটারের কাহিনীর বর্ননায় আসলে মুভির কিছুই বলা হয়না। আপনি যখন মুভিটি দেখতে বসবেন তখন আপনার মাথায় আমার দেওয়া রিভিউয়ের কিছুই থাকবে না। আপনি তখন ভিএফএক্স, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, কালার গ্রেডিং উড়ন্ত প্রানী, মন্সটার আর পানির নিচের কাহিনীর মধ্যে এমনভাবে হারিয়ে যাবেন যে এসবের প্রশংসা ছাড়া আপনার মাথায় আর কিছুই থাকবে না। আপনার বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে যে আপনি প্যান্ডোরা গ্রহের কেউ নন।
অ্যাভাটার ২- দ্যা ওয়ে অফ ওয়াটারের  আইএমডিবি রেটিং ৮.১। জেমস ক্যামেরুনের সায়েন্স ফিকশনভিত্তিক অ্যাভাটার ২ রিলিজ পায় ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর। মুভিটির নির্মাণ ব্যয় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মুক্তির ১০ দিনের মাথায় অ্যাভাটার ২- এর বক্স অফিস কালেকশন প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার! বাংলাদেশী টাকায় ১০ হাজার কোটি টাকা! মুভিটির প্রত্যাশিত বক্স অফিস কালেকশন ২ বিলিয়ন ডলার। দর্শক রিভিউয়ে এগিয়ে আছে অ্যাভাটার -২ দ্যা ওয়ে অফ ওয়াটার। এখন দেখার বিষয় বক্স অফিসে কতটা প্রত্যাশা পূরন করতে পারে  মুভিটি।
কন্টেন্ট রাইটার – সাবিহা সাইদ খান (প্রিয়জানালা)
Back to top button