এন্ড্রু কিশোরের জীবনী ও গান – Andrew Kishore Biography

আমাদের শৈশব ও কৈশোরের এন্ড্রু কিশোরঃ
রেডিও থেকে টেলিভিশন কয়েকটি প্রজন্মের শৈশব আর কৈশোরকে রাঙিয়ে দিয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর। আমাদের জনসংস্কৃতিতে এই শিল্পীর প্রভাব ছিল অভাবনীয়। আশি ও নব্বই দশকে আমাদের সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিতে রেডিওর ব্যাপক প্রচলন ছিল। সেই সময় আমাদের বিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল রেডিও। তখন রেডিও মানেই হলো চলচ্চিত্রের গান, আর চলচ্চিত্রের গান মানেই যেন ছিল এন্ড্রু কিশোর সহ অনেক জনপ্রিয় শিল্পীদের গান। এন্ড্রু কিশোর ও তাঁর গান আমাদের কাছে ভালবাসার অনুভূতির বিষয়, যা অনেকেরই শৈশব ও কৈশোরে বাংলা সংগীতের প্রতি এক অভাবনীয় ভালোবাসা তৈরি করে দিয়েছে।
এন্ড্রু কিশোরের জীবনীঃ
বাংলা গানে কিংবদন্তী ও প্লেব্যাক সম্রাট এন্ডু কিশোরের জন্ম হয় রাজশাহীতে ১৯৫৫ সালের ৮ই নভেম্বর। এন্ডু কিশোরের মাতা মিনু বাড়ৈ ছিলেন সংগীত অনুরাগী যিনি কিশোর কুমারের গান পছন্দ করতেন সেই সুবাধেই নিজের সন্তানের নাম রাখেন কিশোর। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতেই গানের জগতে পা রাখেন এন্ডু কিশোর।
রাজশাহীতেই প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে পড়াশোনা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি নজরুল সঙ্গীত, রবীন্দ্র সঙ্গীত, আধুনিক, লোকসংগীত ও দেশত্নবোধক গান দিয়ে রাজশাহীর বেতারে তাঁর গায়কী জীবন শুরু করে। এর পূর্বে তিনি প্রাথমিক ভাবে আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে সঙ্গীত পাঠ শেষ করেন।
এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্র গানের যাত্রাঃ
১৯৭৭ সালে মেইল ট্রেন চলচ্চিত্রে আলম খানের সুর ও সংগীত পরিচালনায় অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তাঁর কেউ গানে কণ্ঠ দিয়ে এন্ডু কিশোর তাঁর চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার শুরু করেন। তবে তিনি গায়ক এন্ডু কিশোর হিসেবে সাড়া ফেলেন ১৯৭৯ সালে মনিরুজ্জামান মনিরের লেখা ও আলম খানের সুর ও সংগীতে গাওইয়া ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে গানের মাধ্যমে। এর পরে তাকে আর পিছনে তাকাতে হইনি একনাগাড়ে দুই বাংলায় গান করতে থাকেন তিনি এবং একের পর এক জনপ্রিয় গান উপহার দিতে থাকেন। এন্ডু কিশোর ভারতের প্রখ্যাত সুরকার আর ডি বর্মণের সুরেও গান গেয়েছেন সেই সাথে বাংলাদেশের সকল জনপ্রিয় সুরকারদের সাথে গান গেয়েছেন। তাঁর প্রতিটা গান মানুষের হৃদয় ছুয়ে যেত যে গানে ছিল হাসি-আনন্দ প্রেম-বিরহ সহ সুখ দুঃখের অনুভূতি।
এন্ড্রু কিশোরের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারঃ
এন্ডু কিশোর ১৯৮২ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মোট ৮বার গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮২সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার- গানঃ হায়রে মানুষ রঙ্গীন ফানুশ চলচ্চিত্রঃ বড় ভাল লোক ছিল
১৯৮৭সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার- গানঃ সবাই তো ভালবাসা চায় চলচ্চিত্রঃ সারেন্ডার
১৯৮৯সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার- গানঃ আমি পথ চলি একা চলচ্চিত্রঃ ক্ষতিপূরণ
১৯৯১সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার- গানঃ দুঃখ বিনা হয় না সাধনা চলচ্চিত্রঃ পদ্মা মেঘনা যমুনা
১৯৯৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার- গানঃ এসো একবার দুজনে আবার তুমি আছ হৃদয়ের আঙ্গিনায় চলচ্চিত্রঃ কবুল
২০০০ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার- গানঃ চোখ যে মনের কথা বলে চলচ্চিত্রঃ আজ গায়ে হলুদ
২০০৭সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার- গানঃ এই তো জীবন চলচ্চিত্রঃ সাজঘর
২০০৮সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার- গানঃ কি যাদু করিলা চলচ্চিত্রঃ কি যাদু করিলা
এন্ডু কিশোরের কিছু জনপ্রিয় গানঃ
১ জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প
২ হায় রে মানুষ রঙ্গীন ফানুস
৩ ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে
৪ কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো
৫ আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি
৬ আমার বুকের মধ্যিখানে
৭ তুমি যেখানে আমি সেখানে
৮ সবাই তো ভালবাসা চায়
৯ চাঁদের সাথে আমি দেব না তোমার তুলনা
১০ বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে
১১ তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন
১২ ভালো আছি ভাল থেকো
১৩ ভেঙ্গেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা
১৪ ভালোবেসে গেলাম শুধু ভালোবাসা পেলাম না
১৫ তুমি আমার কত চেনা
১৬ তুমি মোর জীবনের ভাবনা
১৭ তোমায় দেখলে মনে হয়
১৮ এইখানে দুইজনে নির্জনে
১৯ আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল
২০ আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন
২১ একদিন তোমাকে না দেখলে
২২ সাগরের মতই গভীর
২৩ আমি তো একদিন চলেই যাবো
২৪ পড়েনা চোখের পলক সহ অনেক গান।
চলচ্চিত্র গানে ব্যস্ততার কারনে অডিও বাজারে তেমন একটা অ্যালবাম করা হয়ে উঠেনি এন্ডু কিশোরের।
তিনি প্রায় জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে গান করে থাকতেন যেখানে পদ্মপাতার পানি নয় খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করে।
এন্ডু কিশোরের স্ত্রীর নাম লিপিকা এন্ডু ইতি। এন্ডু ও লিপিকার মেয়ে আমিনিম এন্ডু সংজ্ঞা সিডনিতে গ্রাফিক ডিজাইনার ও ছেলে জে এন্ডু সপ্তক মেলবোর্নে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়াশোনা করছেন।
২০২০ সালের ৬ জুলাই ৬৪ বছর বয়সে এন্ডু কিশোর মৃত্যুবরণ করেন।
এন্ডু কিশোরের ১ম মৃত্যুবার্ষিকীঃ
গত ৬ই জুলাই ২০২০ রোজ সোমবার ৬টা ৫৫ মিনিটে দীর্ঘ ১০ মাস ক্যানসারের সাথে যুদ্ধ করে জীবন যুদ্ধে হেরে যায় বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী এন্ডু কিশোর। তিনি কয়েকমাস সিঙ্গাপুর জেনারেল হাঁসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসা চলাকালীন সময় তিনি বলেছিলেন আমি আমার দেশে গিয়ে মরতে চাই, এখানে নয়।
২০২০ সালের ১১ জুন তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং তাঁর নিজ শহর রাজশাহীর মহিষবাথান এলাকায় তাঁর বোনের বাসায় কিছুদিন থাকার পরে শেষ হয়ে যায় বাংলা গানের প্লেব্যাক সম্রাট এন্ডু কিশোরের জীবনের গল্প।
এন্ডু কিশোরের ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে রইলো গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ক্রিকেট, ফুটবল, বাংলা সংবাদ, হেলথ টিপস, টেকনোলোজি টিপস, বাংলা ব্লগ, বিভিন্ন তথ্যমূলক প্রতিবেদন, পড়াশুনা সহ নতুন সিনেমা/নাটক/ওয়েব সিরিজ সংবাদ/ বাংলা রিভিউ/ বাংলা সাবটাইটেল পেতে আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে থাকুন-