ছোটবেলার সিসিমপুরের মুকুল চরিত্র কিংবা মনপুরার অসহায় যুবক সোনাই থেকে শুরু করে এই যুগের আয়না অথবা হাওয়া সিনেমার চানমাঝি! বাংলাদেশের সিনেমা, নাটক, ওয়েবসিরিজ, টিভিসি, গান সবকিছুতেই নিজের আধিপত্য দিয়ে বাজিমাৎ করে চলছেন তিনি … হ্যাঁ পাঠক শিরোনাম শুনে ঠিকই বুঝে গেছেন আজকের পর্বে কার সম্পর্কে বলতে যাচ্ছি! তিনি আর কেউ নয় আমাদের বাংলাদেশের গর্ব মিডিয়া জগতের অলরাউন্ডার চঞ্চল চৌধুরী।
বাংলাদেশের সিনেমা যখন শেষের পথে তখন কমার্শিয়াল সিনেমার বাইরে অসাধারণ গল্পের সিনেমা এবং ভিন্ন মাত্রার চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের হলমুখি করেছেন তিনি।
২০০৬ সালে তৌকির আহমেদ পরিচালিত সিনেমা রুপকথার গল্পের মাধ্যমে সিনেমায় অবিষেক ঘটে চঞ্চল চৌধুরীর।
প্রথম সিনেমাতেই অনবদ্য অভিনয় করে সকলের নজরে আসেন তিনি।
এরপর উপহার দেন দেশের অন্যতম ব্যবসাসফল ও দর্শকনন্দিত সিনেমা মনপুরা, যা মুক্তি পায় ২০০৯ সালে এবং মনপুরা সিনেমাটি সে বছরের সেরা ব্যবসা সফল সিনেমা ছিল। মনপুরা সিনেমার জন্য প্রথমবারের মত লাভ করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার।
২০১০ সালে প্রসেনজিত চ্যাটার্জী অভিনীত মনের মানুষ সিনেমায় একটি গুরুত্বপূর্ন চরিত্রে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
২০১৩ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী’র টেলিভিশনে অভিনয় করেন তিনি যেখানে তাঁর সাথে সহঅভিনেতা হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশের আরেক গুণী অভিনয়শিল্পী মোশাররফ করিম। ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা আয়নাবাজি তাঁকে তাঁর অভিনয় ক্যারিয়ারের এক বিশাল উচ্চতায় নিয়ে যেতে সার্থক হয়।
ভিডিও তে দেখুন- অলরাউন্ডার চঞ্চল চৌধুরী
“আয়নাবাজি” সিনেমার গান এবং অভিনয় দিয়ে তিনি দর্শকদের হৃদয় পাকাপাকিভাবে জয় করে নেন। তার সেই অনবদ্য ডায়লগ “কি! বোঝ নাই ব্যাপারটা! দেশে ও বিদেশে সমান জনপ্রিয়তা লাভ করে। আয়নাবাজি সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয় করে ২য় বারের মত অর্জন করে নেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার।
এর ধারবাহিকতায় ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দেবী সিনেমায় হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত চরিত্র মিসির আলী ভুমিকায় অভিনয় করে দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করেছেন।
সিনেমায় ৪ বছর বিরতির পরে ২০২২ সালে মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত সিনেমা পাপ-পূণ্য । সিনেমাটি ব্যবসা সফল না হলেও তাঁর অভিনয়র প্রশংসা করেছেন দর্শক।
গত ২৯ জুলাই সারাদেশে ২৭ টি হলে মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত হাওয়া চলচ্চিত্রটি। যার অগ্রিম ৩ দিনের টিকিট বিক্রি হয়ে যায় এমনকি অনেক হলের অগ্রিম ১ মাসের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে শোনা গিয়েছে।
চঞ্চল চৌধুরী মানেই যেন ভরসা এবং অভিনয় নৈপুণ্য। দেশের শিক্ষিত-অশিক্ষিত,আপামর জনসাধারণ চঞ্চল চৌধুরী মানেই অসামান্য কিছু হতে যাচ্ছে এটা ভেবে নেন। আর চঞ্চল চৌধুরীও দর্শকদের নিরাশ করেন না কখনোই। চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত হাওয়া সিনেমার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম হলমুখী হওয়ার উৎসাহ লাভ করেন। যার ফলাফল হিসেবে হাওয়া সিনেমাটি ব্যবসা সফল!
বহুল প্রতিক্ষিত সিনেমা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বায়োপিক মুজিব: একটি জাতির রূপকার সিনেমাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পিতা শেখ লুৎফুর রহমান চরিত্রে দেখা যাবে চঞ্চল চৌধুরীকে।
শুধু সিনেমা নয় বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বঙ্গে চঞ্চল চৌধুরীকে জনপ্রিয়তা প্রদান করেছে তাঁর অভিনীত জনপ্রিয় কিছু নাটক ও ওয়েবসিরিজের মাধ্যমে।
চঞ্চল চৌধুরী নাটকের মানুষ। নাট্ক রচয়িতা বৃন্দাবন দাস এবং পরিচালক সালাউদ্দিন লাভলু এই জুটির সাথে মিলে যে নাটকে অভিনয় করেন সে নাটক দর্শক বরাবর প্রশংসা করে গেছেন। সাকিন সারিসুরি নাটকের “জাপান ডাক্তার” , হাড়কিপটে নাটকের ‘বহর’ এবং ভবের হাট নাটকের “ফিজা স্যার” চরিত্রগুলো দর্শকদের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়।
এছাড়াও চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত দশ হাজার এক টাকা, ভবের হাট, ব্যস্ত ডাক্তার, আলতা সুন্দরী, পত্র মিতা সহ অসংখ্য নাটকগুলো বাংলাদেশের অন্যতম দর্শকনন্দিত নাটক। যেগুলো দর্শক বারবার দেখে তবু বিরক্ত হননা।
ওয়েব সিরিজেও চঞ্চল চৌধুরী অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। “তাকদীর” এর পর ১৯ আগস্ট আসতে যাচ্ছে চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত “কারাগার“। টিজার এবং ট্রেইলারেই দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কারাগার ওয়েব সিরিজটি।
গানের জগতেও তিনি অতুলনীয়। মেহের আফরোজ শাওনের সাথে তাঁর গাওয়া সর্বত মঙ্গলো রাধে ও নিশা লাগিলোরে গান দুটি খুবই জনপ্রিয়তা পায়।
দেশের বিভিন্ন কম্পানীর জনপ্রিয় অনেক টিভিসি ও করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। তার অভিনীত নাটক, চলচ্চিত্র বা ওয়েব সিরিজের মতই তার টিভিসিগুলোও পেয়েছে দর্শকপ্রিয়তা।
দেশের অন্যতম সেরা এই অভিনেতা ১ জুন ১৯৭৪ সালে পাবনায় জন্মগ্রহন করেন। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানো, অভিনয়, গান, ছবি আঁকা এসব কিছুতেই সমান পারদর্শী চঞ্চল চৌধুরী পড়াশুনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে। চারুকলার প্রভাষক হিসেবেও ক্লাস করান বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ৪৮ বছর বয়সী এই গুনি অভিনেতা ব্যক্তি জীবনে বিয়ে করেছেন ডাক্তার শান্তা চৌধুরীকে। চঞ্চল চোধুরীর একমাত্র ছেলের নাম শুদ্ধ।
সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজ, সেইসাথে নাটক- একই সাথে চলছে চঞ্চল চৌধুরীর অল রাউন্ডিং পারফর্মেন্স।
নেটিজেনরা গর্ব করে বলে থাকেন ” আমাদের একজন চঞ্চল চৌধুরী আছেন। কলকাতায়ও চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় সমান জনপ্রিয়। দেশীয় চলচ্চিত্র এবং ওয়েব সিরিজকে বিশ্বের কাছে জনপ্রিয় করে চলেছেন বাংলাদেশের এই অসামান্য প্রতিভাধর অভিনেতা।
প্রিয় দর্শক কমেন্ট করে জানিয়ে দিন চঞ্চল চৌধুরীর কোন নাটক, সিনেমা অথবা ওয়েবসিরিজ টি আপনার খুব পছন্দের।
প্রিয় কিছু আয়োজনে প্রিয়জানালার সাথে থাকুন… এ জানালা কথা বলবে ,আপনাকে শোনাবে অজানা কথা, অজানা অনেক গল্প… বিনোদন দিবে আপনার প্রতিটা সময়।
বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের সিনেমা, নাটক, ওয়েবসিরিজ, এনিমেশন, কার্টুন, ড্রামা, মিউজিক, বিনোদন সহ তথ্যমূলক বাংলা ভিডিও পেতে প্রিয়জানালার সাথে থাকুন।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল- ক্লিক করুন