Biographysports

ফুটবলের সম্রাট পেলে সম্পর্কে ১০টি বিস্ময়কর অজানা তথ্য

ফুটবলার পেলের জীবনী– বিস্ময়কর ১০ টি তথ্য!

ফুটবলের সম্রাট, ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী পেলে। যার অগণিত এবং অসংখ্য রেকর্ড তাকে ফুটবলের সম্রাট করে তুলেছে। সম্প্রতি ২৯ ডিসেম্বর  ফুটবলের রাজা, ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী পেলে মৃত্যুবরন করেন। পেলে সবচেয়ে বেশীবার বিশ্বকাপ জয়ী তারকা! এটা ছাড়া অনেকেই এই কিংবদন্তী সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানেন না! আপনাদের জন্য আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে কিংবদন্তি, ফুটবল সম্রাটের বিস্ময়কর ১০ টি তথ্য!

১. পেলের পূর্ননাম এদসোঁ আরাঁচ দু নাসিমেঁতু।  কিংবদন্তী এই ব্রাজিলিয়ানের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের ত্রেস কোরাকোয়েস এ। পেলের বাবার নাম জোয়াও রামোস ডো নাসিমেন্টো (ডন্ডিনহো) পেলের বাবা ছিলেন একজন ফুটবলার। পেলের মায়ের নাম সেলেস্তে আরন্তেস এবং তার বর্তমান বয়স ১০০ বছর।  পেলের দুই ছোট ভাইবোন ছিল।

২. কিংবদন্তি পেলের ছেলেবেলা কেটেছে দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়ে। পেলে মোজার মধ্যে ছেড়া কাপড় ভরে তার ড্রিবলিং প্র্যাক্টিস করতেন।  কারন পেলেকে একটি ফুটবল কিনে দেওয়ার সামর্থ্য তার পরিবারের ছিলনা। পেলে যখন ছোট ছিলেন, তখন তার পরিবার সাও পাওলো রাজ্যের বাউরুতে চলে আসে। তখন পেলে  চায়ের দোকানে চাকর হিসেবে কাজ করে, জুতা পলিশ করে, সিনেমা হলের বাইরে ভাজা চিনাবাদাম বিক্রি করে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতেন। মাঠে খেলার সময় পেলে খালি পায়ে খেলতেন। খালি জায়গায় খালি পায়ে খেলার জন্য তাকে ডাকা হতো “পেলাদা”। যদিও পেলে কখনোই তার “পেলে” নামটি পছন্দ করতেন না।

৩. পেলেকে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ  ১৯৯৭ সালে সম্মানসূচক নাইটহুড উপাধি প্রদান করেছিলেন।

৪. একজন প্লেয়ারের জন্য যুদ্ধবিরতি! শুনতেও যেন রুপকথার মত শোনায়!

১৯৬৭ সালে, যুদ্ধবিধ্বস্ত নাইজেরিয়ায় পেলের খেলা যাতে ফেডারেল এবং বিদ্রোহী সৈন্যরা দেখতে পারে সেজন্য ৪৮ঘন্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে রেকর্ড!

৫. যখন একজন খেলোয়াড় একটি ম্যাচে তিন বা তার বেশি গোল করেন, তখন সেটাকে  হ্যাটট্রিক বলা হয়। কিংবদন্তি পেলে তার ক্যারিয়ারে ১২৯টি হ্যাটট্রিক করেন। পেলে একটি ম্যাচে কখনোই শুধুমাত্র একটি গোলে সন্তুষ্ট থাকতেন না। তিনি ৯২টি ম্যাচে তিন-গোল, ৩১টি  ম্যাচে চার-গোল এবং ৬ টি ম্যাচে পাঁচ গোল এবং একটি ম্যাচে একাই আটটি গোল করেছিলেন! একজন খেলোয়াড়ের জন্য একটি খেলায় তিনটি গোল করাই যেখানে অবিশ্বাস্য ব্যাপার, সেখানে পেলে মোট ১২৯ বার ভিন্ন ভিন্ন ম্যাচে এই রেকর্ড গড়েছেন।

৬. পেলে ১৯৬৯ সালের ১৯ নভেম্বর তার ক্যারিয়ারের ১০০০ তম গোলটি করেন। তার জন্মভূমি সন্তোষে ১৯ই নভেম্বর পেলে দিবস পালন করা হয়। ২০১৮ সালে রিও ডি জেনেরিওতে পেলের একটি মূর্তি উন্মোচন করেন পেলে। সেখানে পেলের সম্মানে একটি যাদুঘরও রয়েছে।

৭. ১৯৭৭ সালের অক্টোবরে, পেলে তার চূড়ান্ত পেশাদার খেলায় নিউ ইয়র্ক কসমস এবং সান্তোস এফসি-এর মধ্যে একটি প্রদর্শনী ম্যাচে দুই দলের হয়েই মাঠে নামেন। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় নিউ জার্সির জায়েন্টস স্টেডিয়ামে। পেলে প্রথমে সান্তোসের হয়ে খেলেন এবং প্রথমার্ধে একটি গোল করেন এবং তারপর জার্সি পরিবর্তন করে দ্বিতীয়ার্ধে কসমসের হয়ে খেলেন। কসমস শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতে যায়।

৮. জাদুকর পেলের দুটি বিশ্ব রেকর্ড রয়েছে, যেগুলো এখনো কেউ ভাঙতে পারেনি। পেলের ক্যারিয়ারে রয়েছে সর্বাধিক ১২৮৩ টি গোল করার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এবং পেলে সর্বাধিক তিনটি বিশ্বকাপ বিজয়ী তারকা। বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করা সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলারও তিনি। ১৯৫৮ সালে, বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার সময় পেলের বয়স ছিল ১৭ বছর ২৪৯ দিন এবং ফাইনাল ম্যাচে তিনি দুইটি গোল করেছিলেন।

৯. পেলে ১৯৫৬ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে, সান্তোসের সাথে তার প্রথম চুক্তি স্বাক্ষর করেন। প্রথম মাসে পেলে মাত্র $১০ উপার্জন করেন। পেলে তার প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে তার মাকে একটি গ্যাসের চুলা কিনে দিয়েছিলেন।

১০. ১৯৫৮ সালে পেলে ব্রাজিলের জাতীয় দলকে তাদের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার পর, ইউরোপীয় ক্লাব যেমন রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস, ইন্টার মিলান এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এই উদীয়মান তারকাকে তাদের ক্লাবে নেওয়ার জোর চেষ্টা করতে থাকে। পেলেকে বিদেশী দলের হয়ে খেলা থেকে বিরত রাখতে, ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি জানিও কোয়াড্রোস পেলেকে ১৯৬১ সালে “জাতীয় সম্পদ(National Treasure)  ঘোষণা করেছিলেন।

পেলে ছিলেন একজন পরিপূর্ন অনুকরণীয় ফুটবল আদর্শ! “ব্ল্যাক পার্ল নামে পরিচিত ব্রাজিলিয়ান এই কিংবদন্তী অসংখ্য রেকর্ড গড়েছেন তার ক্যারিয়ারে। দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে বহু মানুষের জন্য কাজ করেছেন। জিতে নিয়েছেন কোটি মানুষের ভালোবাসা। ২৯ ডিসেম্বর ফুটবলের রাজা, ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী পেলে মৃত্যুবরন করেন। আশা করি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ তারকা পেলেকে নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন আপনাদের ভালো লেগেছে। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি।

 

Back to top button